Skip to main content

ডিটেনশন ক্যাম্পের রাজনীতি ও বাঙালিদের আর্তনাদ

   Courtesy: Thakur Siddhant Kumar Bagchi

🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷🚷


আমরা অনেকেই আজকাল ডিটেনশন ক্যাম্প "Detention Camp", কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প  "Concentration Camp" অথবা  ইন্টার্ণমেন্ট ক্যাম্প "Internment Camp" এই শব্দগুলির সাথে কমবেশী পরিচিত। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ ডিকশনারী অনুযায়ী এই শব্দগুলির অর্থ হল, এমন একটি জায়গা যেখানে বন্দীদের সাময়িক সময়ের জন্য আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখা হয়, যতদিন না তাদের স্বপক্ষে বা বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।  (A compound where prisoners are detained temporarily, as pending determination of their legal status under immigration laws.)


বিশ্বের বুকে এই শব্দগুলি আদতে অতি কুখ্যাত শব্দ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। যেমন "কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প" শব্দটি শোনা মাত্র আমাদের মাথায় বিশ্বত্রাস এডল্ফ হিটলার ও তার গ্যাস চেম্বারে অসংখ্য বন্দীদের নৃশংস মৃত্যুর ভয়াবহতা ভেসে ওঠে। তবে ডিটেনশন হোক কিংবা কনসেন্ট্রেশন বা ইন্টার্ণমেন্ট ক্যাম্প, এই কুখ্যাত শব্দগুলি প্রথম শোনা গিয়েছিল 1482-1492 খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত, স্পেন ও কিউবার মধ্যে চলা "১০ বছরের যুদ্ধ" এর সময়। এই যুদ্ধে  কিউবার গেরিলা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে স্পেনের বাহিনী কিউবার সাধারণ নাগরিকদের শহরের কিছু কিছু জায়গায় সাময়িক ভাবে বন্দী করে রেখেছিল। 

আজ যখন তাজা তাজা ইজরায়েল সেনাবাহিনী, হামাস এর আতঙ্কবাদীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালাতে চাইছে, অথচ হামাস এর কাপুরুষ জঙ্গিরা অন্যদিকে প্যালেস্তাইনের সাধারণ নাগরিক ও নারী, বৃদ্ধ শিশুদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে ইজরায়েলের রণকৌশল হল, গাজা ভূখন্ডের সাধারণ নাগরিকদের একাধিক জায়গায় ডিটেইন করে হামাস এর গেরিলা যুদ্ধকে প্রতিহত করা।

তবে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো গনতন্ত্রের দেশ ভারতের ছবিটা কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকটাই ম্লান। ভারতের প্রথম ও এশিয়ার সবথেকে বড়ো ডিটেনশন ক্যাম্পটি গড়ে উঠেছে আসাম এর রাজধানী গৌহাটি থেকে ১৫০ কিঃমিঃ পশ্চিমে গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ার  ডিটেনশন ক্যাম্প।

এই কেন্দ্রটিতে প্রায় ৩০০০ বন্দীর থাকার ব্যবস্থা আছে এবং এটি ২.৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে নির্মিত, প্রায় সাতটি ফুটবল মাঠের আকারের এশিয়র সবথেকে বড়ো বন্দী শিবির। 

২০১৩ সাল থেকে আসামে বিতর্কিত ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অফ সিটিজেনস্ যা সংক্ষেপে NRC নামে পরিচিত, সেটি চালু আছে। এই আইন অনুযায়ী আসামে বসবাসরত যে সমস্ত অধিবাসী এদেশের নাগরিকত্বের বৈধ প্রমান দেখাতে পারবেন না, তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বিদেশি তকমা দিয়ে আটকে রাখা হবে এই ডিটেনশন ক্যাম্পে। 


যদিও গোয়ালপাড়ার এই ক্যাম্পটি ছাড়াও বর্তমানে আসাম রাজ্যে আরো ছয়টি আটক কেন্দ্র রয়েছে। গোয়ালপাড়া বিল্ডিংটি আসামে পরিকল্পিত ১১ টি আটক কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি - অন্যগুলি বরপেটা, ডিমাহাসাও, কামরূপ, করিমগঞ্জ, লখিমপুর, নগাঁও, নলবাড়ি, শিবসাগর এবং সোনিতপুরে অবস্থিত ৷

জনপ্রিয় সংবাদপত্রগুলির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে এক হাজার জন তথাকথিত বিদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক রাখা যাবে। এই কেন্দ্রগুলি নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে কমবেশী প্রায় ১০০০ কোটি টাকা।

জাতীয় নাগরিক তালিকা (NRC) থেকে আসামে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য, এখনো পর্যন্ত ১৯ লক্ষেরও বেশি লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমা ১২০ দিনের মধ্যে বেঁধে দিয়ে, নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রের অভিবাসন দপ্তর বলেছে, যে সমস্ত লোকের নাম এনআরসিতে নেই তাদের সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশী ঘোষণা করা যাবে না। এনআরসি থেকে বাদ পড়া প্রত্যেক ব্যক্তি ফরেনার্স ট্রাইবুনাতে আপিল করতে পারেন এবং পরবর্তীতে আদালতে যেতে পারেন। আপিল দায়েরের সময়সীমা ১২০ দিন।

আর যারা গুরুত্বপূর্ণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারা যদি সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারেন, তবে তাদের আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে যা ভারতের প্রথম সম্পূর্ণরূপে বিকশিত আটক কেন্দ্র। আসামে এমন দশটি কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ তো গেলো গড়পড়তা তথ্য যা ইন্টারনেট ঘাঁটলেই সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু আমার মত প্রতক্ষ্যদর্শীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাস্তব ছবিটা আসামে বসবাসরত বাঙালিদের, বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুদের জন্য যথেষ্ট ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বাংলা ভাষাভাষি বাঙালিরা, আসামে উগ্র অসমিয়া জাতিয়তাবাদীদের বিদ্বেষ,নিগ্রহ এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। আর তাই আজ অসমীয়ারা বাঙালি মানেই বোঝে বাংলাদেশী, বাঙালি মানেই ‘ঘুষপেটিয়া’ বাঙালি মানেই ‘উইপোকা ‘যারা আসাম প্রদেশটিকে কুরে কুরে খাচ্ছে– এরকম একটি ধারণা রাজনৈতিক স্বার্থে দল নির্বিশেষে বিগত দিনের রাজনৈতিক শাসকরা থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক শাসকরা পর্যন্ত সাধারন অসমীয়া জনসাধারণের  মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় আসাম আজ ভারতের একমাত্র রাজ্য, যেখানে বাঙালিদের ‘ডাউটফুল ভোটার’ বা ‘ডি ভোটার’ নোটিশ দেওয়া হয়, সন্দেহজনক বিদেশি বলে তাদের ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ নামক জেলখানায় আটকে রাখা হয়। 

তবে তথ্য হচ্ছে আসামে গত ৮ বছরের বিজেপি শাসনে ‘ডি নোটিশ ‘ দেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার বাঙালিকে, বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে ৩৭ হাজারকে আর বহিস্কৃত করা হয়েছে মাত্র একজনকে। অর্থাৎ সেই প্রাচীন প্রবাদবাক্য 

পর্বতের মূষিক প্রসব

আসামে বিদেশি শনাক্তকরণের জন্য ২০১৩ সালে শুরু হল ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন সংক্ষেপে এন আর সি প্রক্রিয়া। এই রাজ্যের বাঙালিরা প্রচুর কষ্ট করে,আর্থিক মানসিক ক্ষতি স্বীকার করে সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেন বিদেশি তকমা ঘোচানোর জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেল, শনাক্ত হওয়া বিদেশির সংখ্যা নগন্য, আর তাই নেহাতই মুখ রক্ষার জন্য কেন্দ্র সেই প্রক্রিয়াকে মাঝপথে বন্ধ করে দিল। এই প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে সরকারি কোষাগারের ব্যায় হয়ে গিয়েছে ১৬০০ কোটি টাকা, যার অর্ধেক  তৎকালীন এন আর সি সমন্বয়কর্তা প্রতীক হাজেলা নামক মহাপুরুষ, নয়-ছয় করে মধ্যপ্রদেশে বদলি নিয়ে চলে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

মাঝখান থেকে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব  ঝুলন্ত অবস্থায় রয়ে গেলো রাজনীতির বিশ বাঁও জলে। এদের আধার কার্ড আটকে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন । যেকারণে সরকারি কোন অনুদান, সরকারি চাকরি ইত্যাদি থেকে এরা বঞ্চিত , আগামীতে ভোট দিতে পারবেন কিনা তাও অনিশ্চিত।

এরপরেও গত ২০২১ সালে  নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের গাজর দেখিয়ে আবার আসামের নিপীড়িত বাঙালি হিন্দুদের ভোট হাসিল করল বিজেপি সরকার। 

গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিলচরে জনসভায় এসে ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁদের সরকার ক্ষমতায় এলে আসামের সব ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। আর সেই আশায় ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ও বসিয়েছিলেন আসামর বাঙালি হিন্দুরা। কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্প ভাঙা তো দুরস্ত, সেই নির্বাচিত সরকারের কার্যকালের মেয়াদ শেষের  আগেই, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানে আসামের গোয়ালপাড়ায় ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেজেগুজে উঠল এশিয়ার বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প,যেখানে নির্বিচারে আটকে রাখা হচ্ছে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে এই রাজ্যের বাঙালিদেরকে।

কিন্তু সংসদের উভয় কক্ষে মান্যতা সহ রাস্ট্রপতির অনুমোদন এবং প্রধানমন্ত্রীর বারবার প্রতিশ্রুতির পরও সেই বিলের বাস্তবায়ন হলনা আসামে। দেশভাগের শিকার, ডি সমস্যায় জর্জরিত আসামের বাঙালির শেষ ভরসা এভাবেই সলিল সমাধি হল ব্রহ্মপুত্রের জলে।

এরমধ্যে যাদের বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে তাঁরা যদি বাংলাদেশ থেকে এসেই থাকেন তবে কুটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে কি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যেত না ? শরনার্থী হিন্দুদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া যেত না ? আসলে এরা কেউই বিদেশি নন, দরিদ্র, প্রান্তিক ও অধিকাংশ অশিক্ষিত শ্রেণীর এসব বাঙালির কাছে নাগরিকত্ব প্রমানের  যথার্থ নথিপত্র নেই। তাই এদের আটকে রাখা হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে।


এই ডিটেনশন ক্যাম্পের নরক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন বরাক উপত্যকার অর্জুন নমসূদ্র। 

এখন প্রশ্ন হল, এই মৃত্যুর দায় কার ? 

একটা নথি না দেখাতে পারলে যেমন ভারতীয়দের আটক করে ডিটেনশনে পাঠানো হয়েছে, আবার নোটিস না পেয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেন নি বলেও আটক করা হয়েছে অনেককে।

আবার ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চর এলাকাগুলিতে এও দেখা গেছে যে নদী ভাঙ্গনের কারণে মানুষকে রাতারাতি জায়গা বদল করতে হয় আর নতুন ঠিকানাসহ পরিচয়পত্র যোগাড় করলেও কর্তৃপক্ষ এগুলোকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে না।

বিবাহিত নারীদেরও বাপের বাড়ির ঠিকানার সঙ্গে শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা না মিললে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ করা হয় এভাবেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জী হালনাগাদ করার পরে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ গেছে প্রায় ১৯ লাখ মানুষের নাম।

সংবাদপত্র Hindustan Times এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণি পাশ গঙ্গাধর বেশি উপার্জনের জন্য রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন। ১৬ বছর আগে পেট চালানোর তাগিদে তিনি পৌঁছেছিলেন গুয়াহাটি। ভোটারকার্ড, আধারকার্ড বা জন্মের শংসাপত্র ছাড়াই ১৭ বছর বয়সে অসমে কাজ করা শুরু করেন গঙ্গাধর। একটা হোটেলে বাসন ধোয়ার কাজ শুরু করেন। তবে পর্যাপ্ত টাকা পেতেন না গঙ্গাধর। তারপরই ধীরে ধীরে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়। কালের প্রভাবে ঠিকানাও গুলিয়ে ফেলেন গঙ্গাধর।

২০১৭ সালে গঙ্গাধরেরই এক সহকর্মী তাঁর নামে পুলিশে নালিশ করে বলে জানা গিয়েছে। এরপর পুলিশ গঙ্গাধরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর থেকে পরিচয়পত্র চায়। তবে কোনও নথি না দেখাতে পেরে ঠাঁই হয় গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে।

২০২১ সাল‌ নাগাদ গোয়ালপাড়ার ক্যাম্পে 'সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস' নামক এক সংগঠন সমীক্ষা করতে গেলে গঙ্গাধরের বিষয়ে জানতে পারে। ফেসবুকের মাধ্যমে গঙ্গাধরের স্কুলের প্রাক্তনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সংগঠনের সদস্যরা। তারপর বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষ গঙ্গাধরের পরিবারের খোঁজ দেন সংগঠনটিকে। এরপরই ফরেনার্স ট্রাইবুনালে জামিনের আবেদন জানান গঙ্গাধর। আর তারই সুবাদে ছাড়া পান গঙ্গাধর। তারপরই বাড়ির ট্রেন ধরে বিষ্ণুপুরে ফেরা। ট্রাইবুনালের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে গঙ্গাধর নিয়মিত বিষ্ণুপুর থানায় হাজিরা দেন।

(Hindustan Times বাংলা, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২১, অভিজিৎ চৌধুরী।)


এই রকম অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে হিন্দু বাঙালিদের আর্তনাদের মধ্যে দিয়ে। অথচ ভারতের সংবিধানের ধারা 21 অনুযায়ী, আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। এই অধিকার নাগরিক এবং অ-নাগরিক উভয়ের জন্য উপলব্ধ।

জীবনের অধিকার শুধুমাত্র প্রাণীর অস্তিত্ব বা বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মানব মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার এবং জীবনের সেই সমস্ত দিকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যা একজন মানুষের জীবনকে অর্থবহ, সম্পূর্ণ এবং জীবনযাপনের যোগ্য করে তোলে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই অধিকারকে মৌলিক অধিকারের প্রাণকেন্দ্র বলে বর্ণনা করেছে। এই মৌলিক অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তি, নাগরিক এবং বিদেশী একইভাবে উপলব্ধ।

ধারা 21 দুটি অধিকার প্রদান করে:

১) জীবনের অধিকার।

২) ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার।


ধারা 21 এর সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা এই বিষয়ে স্পষ্ট রায় দিয়েছে, যেমন,

এ কে গোপালান মামলা (1950),

মানেকা গান্ধী বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলা (1978),

ফ্রান্সিস কোরালি মুলিন বনাম দিল্লির কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (1981),

ওলগা টেলিস বনাম বোম্বে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (1985),

উন্নি কৃষ্ণান বনাম অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য (1993),

এছাড়াও ধারা 21 A অনুযায়ী রাষ্ট্র 6 থেকে 14 বছরের সকল শিশুকে বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করবে যেভাবে রাষ্ট্র আইন দ্বারা নির্ধারণ করবে।

কিন্তু আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে আমরা দেখলাম, ২০১৩ সালে যে শিশুটি তার মা-বাবা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বলে, তাদের সঙ্গে ৮-১০ বছর বয়সে ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হল, আজ ২০২৩ সালে তার বয়েস ১৮- ২০ বছর। অথচ ডিটেনশন ক্যাম্পের সাধারণ ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে তার শৈশব, কৈশোর, তার সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিসেবা পাওয়ার  ন্যার্য্য অধিকার। ভারতে জন্মগ্রহণ করেও আজ সে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের জীবন কাটাতে বাধ্য। এই দায় কার ? 

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে আজ পর্যন্ত যাদের সন্দেহজনক বিদেশি বলে আটক করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই বাঙালী। কোনো অসমীয়া সেই তালিকায় তেমন ভাবে নেই। 

বাঙালি বিদ্বেষের এর থেকে বড়ো উদাহরণ খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রায় দশক পূর্তি হতে চলল আসামে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের, অথচ সেখানে গড়পরতা বাঙালির জীবনে পরিবর্তনের সূর্য আজও অস্তগামী।

এরই প্রতিবাদে, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বে বরাক ভ্যালী ও সমগ্র আসাম প্রদেশে বিস্তৃত তার সহযোগী দুটি সংগঠন "সনাতনী বীর হিন্দু সেনা" ও " হিন্দু যুব পরিষদ" আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে অনৈতিক ভাবে বন্দী হিন্দুদের মুক্তির দাবিতে ৬ মাসের মেয়াদসীমার সতর্কবাণী ঘোষণা করেছে আসাম রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। এই বিষয়ে সমগ্র আসাম জুড়ে বৃহত্তম আন্দোলনের প্রস্তুতিতে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।




।। শ্রী শ্রী ১০০৮ মহামন্ডলেশ্বর স্বামী সুন্দর গিরী মহারাজ।।

-National Chairperson -

🚩National Human Rights Activities of India🚩


-National Observer-

Eastern and North Easten Region of India,

🚩 Akhil Bharat Hindu Mahasabha (1915)🚩

Popular posts from this blog

ছেলেরা কেন দিনদিন 'বৌদিবাজ' হয়ে উঠছে?

সমাজটা খুবই খারাপ দিকে যাচ্ছে। ছেলেরা এখন বৌদিবাজ হয়ে উঠেছে! তারা একবার করে প্রেমে ছেঁকা খাওয়ার পর আর অন্য কোনও প্রেমিকা জোটায় না, বৌদিদের সাথে গল্প করে। কারণ - ১| ধোঁকা খায় না ২| হৃদয়ে আঘাত লাগে না ৩| Break up 💔 বলে কিছু থাকে না ৪| অনেকটা Stunt বাজীর মতো, মাথায় কোনো চাপ নেয়ার দরকার পরে না  আর একটা বিষয় হলো এখন বেশিরভাগ ছেলে পড়াশোনা দিকে ব্যস্ত। তাই তাদের হাতেও বেশি সময় থাকে না। আবার বৌদিদের হাতেও বেশি সময় সীমিত। তাই একটা Understanding বজায় থাকে। আরেকটা জিনিস হল নতুন প্রেমিকারা যেরকম নানারকম চাপ দেয়। বৌদীরা অনেকটা বোঝে ব্যাপারগুলো। যেমন- ফাঁকা পকেট, কম সময়, Relation Public না করা... এসব জিনিস। সেই কারণে তারা এতটা চাপ দেয় না। অল্পবয়সী মেয়ের একটু জেদি হয়। তাই তারা অকারণেই ঝগড়া করে যা এমনিতেই চাকরি আর ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত ছেলেদের ভালো লাগে না। তাই তারা বৌদিদের দিকেই ঝোঁকে। বিয়ে তো অবশ্য ভালো কোনো মেয়ে দেখেই করবে, তার আগের সময়টা অন্য দিকে দেয় - বৌদিদের সাথে আড্ডা মারে। বৌদিদের সাথে কথা বলে আর কিছু হোক বা না হোক মানসিক শান্তি আছে। আমার বৌদিবাজ বন্ধুদের জন্য 💖

বলি প্রসঙ্গে আমার মতামত

ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এর চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better, তাহলে বলতে হয় আপনার জীবন আর মৃত্যুর sence নেই। কেন ছাগলের মৃত্যুটাই মৃত্যু? চালকুমড়ো বা আঁখের মৃত্যুটা মৃত্যু নয় কেন? আপনার যদি জীবন আর মৃত্যুর সম্বন্ধ প্রকৃত জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনটি ক্ষেত্রেই আপনি সমান দুঃখ পেতেন। কিন্ত আপনার মনে হয় ছাগল বলি দেওয়ার চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better।  আপনার এই প্রকৃতি দেখে বলতে হয়, জীবন বাঁচানো আপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং আপনি রক্তকে ভয় পান, অস্ত্র কে ভয় পান। আপনার বাস্তবিক বোধ থাকলে আপনি অস্ত্রের আঘাতে চালকুমড়ো বা আঁখের এবং ছাগ তিনটি বলির ই বিরোধীতা করতেন। কারণ তিনটির প্রকৃতিই একই রকম, এই তিনটে থেকেই অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হতে পারতো। তাই তিনটির হত্যাই একই রকম ক্ষতি করে। কিন্ত, শুধুমাত্র ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এটি মানুষের হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমরা কি সত্যিই অহিংস?  আমাদের মায়েরা প্রতিদিন জ্যান্ত মাছগুলো দুহাতে ধরে বঁটিতে ঘচাং করে একবারে জ্যান্তই কেটে ফেলেন। শহরের মাছ-মাংস বিক্রেতারাও একইভাবে কাটেন। তখন কি সেটা নৃশংসতা নয়? কেন আমরা ব

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা। 💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।  🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জ