Skip to main content

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা।

💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।

 🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জালোর এবং তার পালক রাজা কানহার দেব সোঙ্গারা চৌহানকে জালোর দুর্গের অনিরাপদ অংশের রহস্য আলাউদ্দিনের সেনাবাহিনীকে জানিয়ে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার হিসেবে তিনি এই টাকা পেয়েছেন।

 💥 হীরা সঙ্গে সঙ্গে তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনি কি আলাউদ্দিনের সেনাবাহিনীকে জালোর কেল্লার গোপন কিছু দেওয়ার বিনিময়ে এই টাকা পেয়েছেন.....!?

 ভিকা তার মুখে একটি দুষ্ট হাসি নিয়ে উত্তর দিল এবং খুশিতে হীরা দে'র সামনে তার মাথা উপর-নিচ করল। তখনই হীরাদ বুঝতে পারল যে তার স্বামী দুর্নীতিবাজ। তার স্বামী তার মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং তার রাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

হীরাদে ক্রোধে তার স্বামীকে বলে উঠল – আরে.... বিশ্বাসঘাতক!!! এই সঙ্কটের সময়ে শত্রুকে দুর্গ সম্পর্কে গোপন তথ্য দিয়ে দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে তোমার লজ্জা হয় না... ‌!? 💥 তোমার মা কি তোমাকে জন্ম দিয়েছে শুধু এই কাজ করার জন্য...!? তোমার মায়ের দুধ খেতে একটুও লজ্জা লাগে না...!?💥 ক্ষত্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তুমি কি ক্ষত্রিয়কে অনুসরণ করার জাতীয় কর্তব্য ভুলে গেছো...!?

💢 ভিকা দাহিয়া হীরাদেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু হীরাদের মতো একজন দেশপ্রেমিক ক্ষত্রিয় মহিলা কীভাবে তাঁর প্রভাবে আসতে পারে!? এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি বেড়ে যায়।ভিকা দাহিয়া হীরা দে কে বোঝানোর প্রতিটি প্রচেষ্টাই কেবল তার ক্রোধকে আরও উস্কে দিয়েছিল।

 💥স্বামীর এই বিশ্বাসঘাতকতায় হীরাদে খুবই দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ হয়।নিজেকে এমন বিশ্বাসঘাতক স্বামীর স্ত্রী ভেবে সে লজ্জিত হতে লাগল। সে মনে মনে ভাবল যুদ্ধের পর তাকে বিশ্বাসঘাতক ও বিশ্বাসঘাতকের স্ত্রী হওয়ার কটূক্তি শুনতে হবে। এসব চিন্তায় শত্রুরা দূর্গের নিরাপত্তার রহস্য জানতে পেরে যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি এবং জালোর দুর্গে যুদ্ধের আগে জওহর সংঘটিত হওয়ার দৃশ্য তার মনে সিনেমার মত বাজতে থাকে। যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ভয়ে জালোর কেল্লার রানী ও অন্যান্য নারীরা তাদের সতীত্ব রক্ষায় জওহরের জ্বলন্ত শিখায় ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য, ছোট বাচ্চাদের কান্নাকাটি করার দৃশ্য। সে স্পষ্টভাবে সেই সমস্ত যোদ্ধাদের মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পাচ্ছিল যাদের স্ত্রীরা জওহর চিতায় আরোহণ করতে এবং তাঁর চোখের সামনে পবিত্র আগুনে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিল। জালোরের যোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত সংগ্রামের দৃশ্যও দৃশ্যমান ছিল। যেখানে জালোরের যোদ্ধারা তাদের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত শত্রুর সাথে লড়াই করে মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। একদিকে সে দেখতে পায় জালোরের সাহসী দেশপ্রেমিকদের স্বাধীনতার বেদিতে জীবন উৎসর্গ করে স্বর্গে যেতে, অন্যদিকে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার দুর্নীতিবাজ বিশ্বাসঘাতক স্বামী।

💢এমন দৃশ্য তার মনে আসার সাথে সাথে হীরা দে বিচলিত ও ব্যথিত হয়ে পড়ে।সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের আড়ালে সে যা দেখতে পায় তা হল তার স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা। তার চোখে শুধু তার স্বামীই এই সবের জন্য দায়ী। হীরা দে'র দৃষ্টিতে এটা তার স্বামীর এমন জঘন্য অপরাধ ছিল যে অবিলম্বে শাস্তি হওয়া দরকার ছিল।মনে মনে সে তার বিশ্বাসঘাতক স্বামীকে এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একদিকে তার সামনে তার স্বামী, অন্যদিকে তার বিশ্বাসঘাতক স্বামী যে তার মাতৃভূমি ও দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। একদিকে তাকে হত্যা করে দেশদ্রোহীকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব ছিল, অন্যদিকে নিজের সুখও নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে সেই দেশপ্রেমিক সাহসী মহিলা সিদ্ধান্ত নিলেন যে-

#"তার_স্বামী_যদি_মাতৃভূমির_নিরাপত্তার_হীনতার জন্য দায়ী হয়ে থাকে তাহলে তাকেও এমন অপরাধ ও নিষ্ঠুরতার জন্য হত্যা করা উচিত। #বিশ্বাসঘাতকের এটাই একমাত্র শাস্তি।"

 💥এই রকম অনেক চিন্তা তার মনের উদয় হয়ে হীরদ্দের ক্রোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়, রাগে তার শরীর কাঁপছিল।  বিশ্বাসঘাতককে শাস্তি দিতে তার হাত কাঁপে। হীরাদে পরিস্থিতির তোয়াক্কা না করে কাছে রাখা তরবারি তুলে নিয়ে এক আঘাতে তার বিশ্বাসঘাতক স্বামীর মাথা কেটে ফেলে। হীরা দে'র এক আঘাতে ভিকা দাহিয়ার মাথা কেটে যায়। তার এক হাতে  তরবারি এবং অন্য হাতে তার বিশ্বাসঘাতক স্বামীর ছিন্ন মস্তক নিয়ে তার রাজা কানহাদ দেবের সামনে হাজির হয় এবং তার স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা এবং উপযুক্ত শাস্তির কথা জানায়।

 কানহাদ দেব এই দেশপ্রেমিক সাহসী মহিলার কাছে প্রণাম করেন এবং হীরাদের মতো সাহসী মহিলাদের জন্য গর্বিত হয়ে তিনি আলাউদ্দিনের সেনাবাহিনীর সাথে একটি সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের জন্য রওনা হন। হীরাদে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার স্বামীকে নিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো-, ‘‘हीरादेवी भणइ चण्डाल सूं मुख देखाड्यूं काल’’।" অর্থ- স্রষ্টা আজ এমন দিন দিয়েছেন যে আমাকে এই চণ্ডালের মুখ দেখতে হয়েছে।



 🌹এভাবে একজন দেশপ্রেমিক নায়িকা তার স্বামীকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও দুর্নীতির শাস্তি দিতে কসুর করেননি। দেশপ্রেমের এমন উদাহরণ খুব কমই পাওয়া যায় যখন একজন স্ত্রী তার স্বামীকে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে হত্যা করে তার দাম্পত্য জীবন নষ্ট করে।  দেশপ্রেমের এমন অতুলনীয় ও অনন্য দৃষ্টান্ত দেশের ইতিহাসে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না....... সারা বিশ্বে।


Courtesy: Srabanti Jana & Rajnandini

Translated from Hindi.

Link- https://panchjanya.com/2023/11/15/306577/bharat/patriot-heroine-hirade/

Popular posts from this blog

 বর্তমানে রাত্রীকালীন বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা :- ____________________________________ মুসলমান অত্যাচারের কারণে 'রাত্রি কালীন গোপন বিবাহ' রীতির প্রচলন। এসব সত্য জানার সত্ত্বেও এখনও এই রীতি বয়ে নিয়ে হচ্ছে। তার সম্ভাব্য কারণ কি কি হতে পারে? ১| দিনের বেলা সকলে ব্যস্ত থাকে নানা কাজে। কেও স্কুলে, কেও অফিসে কেও বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন। তাই সেই কাজের মাঝে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে হলে মানুষ দুপুরে কাজের শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় সেজেগুজে এসে বিয়ে দেখতে পারে। রাত্রে প্রায় সকলেই বাড়িতে থাকেন। তাই কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করা বিষয়টা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়। ২| এখন বিবাহ একটি পারিবারিক উৎসব নয়। বরং বিবাহ আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। রাতে জমকালো Light Show দেখানো যায়। বাজীর প্রদর্শনী করা যায়। এর সাথে আরও যত রকমভাবে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করা সম্ভব সবরকম চেষ্টাই করা হয়। কিন্ত দিনে এই সমস্ত ঘটনার Prime Focus একজনের উপর পড়া সম্ভব নয়, তাই রাত্রে। ৩| সামাজিক দৃষ্টিকোণ: বর্তমানে দিনে বিবাহ দেওয়াকে দারিদ্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ...

ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার তত্ত্বের Propaganda Vs Reality

ভারত বাংলাদেশ আর পাকিস্তান মিলে প্রায় 50 কোটি মুসলিম বাস করে। কিন্তু, এতো মুসলিম তো আরবেও নেই। তাহলে এতো মুসলমান এলো কোথা থেকে? অন্য ধর্মের লোক এতো দ্রুত হারে বাড়ছে না কেনো? অন্য ধর্মের 50 কোটি লোক হলোনা কেনো ? Communist আর secular দের বক্তব্য এরা হিন্দুই ছিল, কিন্তু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে আর মুসলিমদের ধর্মের উদারতার কারণে জাত-পাতহীনতার কারণে এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এরা মুসলিমদের দান-ধ্যানের নীতি, সুফি_সন্তদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত হয়ে "ইসলাম" ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তত্ত্ব  Communist রা হিন্দু সমাজকে দুইভাগে ভাগ করেন-- 1. উচ্চ বর্ণ  2. নিম্ন বর্ণ সমাজের সবচেয়ে ভক্তিবান মানুষ হলো তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষরা। তাদের কাছে ধর্মই সব। তাঁরা সব করতে পারেন কিন্তু ঠাকুর কে অবহেলা করেন না। তাঁরা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের জন্যেই ধর্মান্তরিত হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন কিভাবে❓ এটা তো গেলো পুরোনো যুগের কথা.... এবার এখনকার কথা বলি.... আচ্ছা বলুন তো, আমরা আমাদের পারিবারিক সূত্রে বা বন্ধুদের সূত্রে প্রায় প্রতিদিন নানান রকম খবর শুনি। যেমন- কারোর বিয়ে হয়েছে, কার...

বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথালয় এর সংযুক্তিকরণ

আমি কিছু ছোট ছোট old age home এবং orphan home এ গেছি এবং সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে বৃদ্ধ মানুষগুলো তাঁদের পরিবারের ছোটো-ছোটো নাতি-নাতনীদের মিস করেন। আবার অনাথালয়ের orphan দের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে তারা যদি দাদু ঠাকুমাদের মত কাওকে পেত, যারা তাদের একটু গল্প বলবে, মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আদর করবে তাহলে তারাও হয়ত অনেকটা ভালো থাকত। তাই আমার মনে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম ও orphan home যদি একই ছাদের নীচে করা সম্ভব হয় তাহলে ওইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার যে কষ্ট, সেটা সামান্য হলেও লাঘব হবে। এবার আমি এটা নিয়ে কতটা ঠিক ভেবেছি বা এটা ইমপ্লিমেন্ট করা কতটা সম্ভব বা তার প্রতিবন্ধকতার জায়গা গুলো আমি সম্পুর্ন ওয়াকিবহল নই। সম্পূর্ণ একটা ইমোশনাল ভাবনা থেকে এটা আমি ম্যাডামকে জানিয়েছি। ম্যাডাম বা ডিপার্টমেন্ট এ যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তাঁদের সবার পর্বত সমান অভিজ্ঞতা। যদি তাঁরা এই ভাবনার মধ্যে কোনো পজিটিভ দিক আছে বলে মনে করেন এবং প্রাকটিক্যাল গ্রাউন্ডে এটা ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব মনে করেন এবং এক ছাদের তলায় old age home এবং orphan home তৈরী করা...