Skip to main content

রাজা দাহির

সিন্ধুর শেষ হিন্দু রাজা দাহির, যাঁর বীরগাথা আজও শোনায় পাকিস্তানের ‘দাহেরি’ সম্প্রদায়। মাতৃভূমির অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন রাজা দাহির।

✍ রূপাঞ্জন গোস্বামী


পূর্বে কাশ্মীর, পশ্চিমে মাকরান ও দেবোল (বর্তমানে করাচি), দক্ষিণে সুরাট বন্দর, উত্তরে কান্দাহার, সুলেইমান, ফেরদান ও কিকানান পর্বতশ্রেণীর মাঝে, ৪৮৯ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠেছিল সুবিশাল ‘রাই’ রাজত্ব’। পনেরো লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই রাজত্বের অধীনে ছিল পুরো সিন্ধুদেশ। ‘রাই’ রাজত্বের রাজধানী ছিল সিন্ধু নদের পশ্চিমে থাকা সমৃদ্ধ নগরী ‘আরোর’। এই শহরটি বর্তমান পাকিস্তানের শুক্কুর শহর হিসেবে পরিচিত।


রাই’ রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী

প্রায় ১৪৩ বছর ধরে ‘রাই’ রাজবংশ সিন্ধুদেশ শাসন করেছিল। বৌদ্ধ ও সনাতন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ‘রাই’ রাজারা। সিন্ধু এলাকায় প্রচুর বৌদ্ধ গুম্ফা ও শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁরা। ‘রাই’ রাজত্বের প্রথম রাজা ছিলেন আদি রাই। প্রায় আটচল্লিশ বছর ধরে সিন্ধু শাসন করার পর, সিংহাসনে বসেছিলেন আদি রাইয়ের পুত্র ‘দেভাগ্য’। এরপর একে একে সিংহাসনে বসেছিলেন, রাই সাহিরাস (শ্রীহর্ষ), রাই সাহসি (সিংহসেনা) ও রাই দ্বিতীয় সাহিরাস (মেহেরসেনা)।


ইরানের বাদশা নিমরোজের সঙ্গে রাই দ্বিতীয় সাহিরাসের যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন রাই দ্বিতীয় সাহিরাস। সিংহাসনে বসেছিলেন রাই দ্বিতীয় সাহসি। সিংহাসনে বসার কিছুদিন পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন রাই দ্বিতীয় সাহসি। রোগশয্যায় শুয়ে চিঠিপত্র পড়ার জন্য একজন লোক চেয়েছিলেন মন্ত্রীর কাছে। রাজার কাছে মন্ত্রী পাঠিয়েছিলেন রাজ দরবারের মুন্সি পদে কর্মরত ‘চাচ’কে। চাচ-এর ব্যক্তিত্ব রাজাকে মুগ্ধ করেছিল। প্রাসাদের দেখাশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন পুষ্কর্ণ শ্রেণীর ব্রাহ্মণ যুবক ‘চাচ’কে।


পতন হয়েছিল রাই রাজবংশের, মাথা তুলেছিল ‘ব্রাহ্মণ’ রাজবংশ


প্রাসাদের দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই, রাজা দ্বিতীয় সাহসির স্ত্রী সুহানাদি যুবক চাচের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল অসুস্থ রাজার। রাজার মৃত্যুর পর যুবক চাচকে বিয়ে করেছিলেন রানি সুহানাদি। চাচ হয়ে গিয়েছিলেন সিন্ধুর রাজা। সমাপ্তি ঘটেছিল ‘রাই’ রাজত্বের। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে রাজা চাচকে দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘ব্রাহ্মণ’ রাজবংশের।


আরব ইতিহাসবিদ মানান আহমেদ আসিফ দ্বাদশ শতাব্দীতে লিখেছিলেন ‘চাচ নামা’। সিন্ধুর বুকে আরব বিজয়ের পটভূমিকায় লেখা বইটি থেকে রাজা ‘চাচ’ প্রতিষ্ঠিত ‘ব্রাহ্মণ’ রাজত্ব ও পরবর্তীকালের প্রায় সব উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। ‘ব্রাহ্মণ’ রাজবংশ সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া যায় পার্সি কবি ফেরদৌসীর লেখা ‘শাহনামা’ থেকেও।


ব্রাহ্মণ’ রাজবংশের তৃতীয় রাজা দাহির


প্রায় চল্লিশ বছর ধরে রাজ্য শাসন করার পর মৃত্যু হয়েছিল রাজা চাচের। পুত্র চন্দ্র হয়েছিলেন ‘ব্রাহ্মণ’ রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা। ৬৯৫ খিস্টাব্দে রাজা চন্দ্রের মৃত্যুর পর, বত্রিশ বছর বয়েসে সিন্ধুদেশের সিংহাসনে বসেছিলেন রাজা চন্দ্রের পুত্র দাহির সেন। রাজা দাহির ছিলেন প্রজাবৎসল, সুবিবেচক, সুপণ্ডিত। তাই সিন্ধুর মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়।


জনপ্রিয় ছিলেন আরও একটি কারণে। মাতৃভূমির অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন রাজা দাহির। আশেপাশে থাকা শত্রু রাজত্বের সেনারা সিন্ধুর মাটি স্পর্শ করা মাত্রই তাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তেন রাজা দাহির। শত্রুপক্ষকে সিন্ধুর সীমানার বাইরে পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নিতেন না।


রাজা দাহিরের স্ত্রীয়ের নাম ছিল লাদি। প্রজারা বলতেন রানি বাঈ। চার ছেলেমেয়ে সূর্যদেবী, প্রিমলদেবী, যোধাদেবী ও ছেলে জয়শিয়াকে নিয়ে সুখেই রাজত্ব করছিলেন সিন্ধুর হিন্দু রাজা দাহির সেন। কিন্তু ‘ব্রাহ্মণ’ রাজত্বের পশ্চিম আকাশে দেখা দিয়েছিল অশান্তির কালো মেঘ।


বাসরার শাসকের নজর পড়েছিল ‘ব্রাহ্মণ’ রাজত্বে


উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে আরব জুড়ে গড়ে উঠেছিল ‘উমাইয়া খিলাফত’। খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদের প্রিয়পাত্র ছিলেন বাসরার শাসক আল-হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ। সেই আল-হাজ্জাজ পূর্বদিকে উমাইয়া খিলাফতের বিস্তার চাইছিলেন। ভারত ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু খিলাফত ও ভারতের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘ব্রাহ্মণ’ রাজত্ব।


বিধর্মী রাজা দাহিরকে দু’চক্ষে দেখতে পারতেন না আল-হাজ্জাজ। কারণ খিলাফত থেকে নির্বাসিত কিছু আরবকে সিন্ধুদেশে আশ্রয় দিয়েছিলেন রাজা দাহির। এছাড়াও তিনি ঈর্ষা করতেন রাজা দাহিরের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তাকে। তাই হয়তো ৭০৭ থেকে ৭১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন রাজা দাহিরের সঙ্গে। প্রত্যেকবারই হেলায় আরব আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন রাজা দাহির। নিজের সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার পর, রাজা দাহিরের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাবার সুযোগ খুঁজছিলেন আল-হাজ্জাজ। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে এসে গিয়েছিল সেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ।


সিংহলের রাজা আটটি জাহাজে করে প্রচুর মণিমানিক্য ও দামি উপহার পাঠিয়েছিলেন উমাইয়া খিলাফতের খলিফার জন্য। আরব সাগরে জাহাজগুলি ঝড়ের মুখে পড়েছিল। হারিয়ে ফেলেছিল পথ। ভাসতে ভাসতে চলে গিয়েছিল দেবোলের (করাচি) উপকূলে। ‘নাগামরা’ জলদস্যুদের অন্যতম ঘাঁটি ছিল দেবোল। কচ্ছ, কাথিয়াবাড় ও দেবোলকে ঘাঁটি করে ‘নাগামরা’ আদিবাসীদের এক বিরাট দস্যুদল, পুরো আরব সাগর জুড়ে জাহাজে হামলা চালাত। জলদস্যুরা আরবগামী আটটি জাহাজ ঘিরে ফেলে অবাধে লুঠতরাজ চালিয়েছিল।


আল-হাজ্জাজ পেয়েছিলেন চতুর্থবার আক্রমণের সুযোগ


দেবোল এলাকাটি ছিল রাজা দাহিরের রাজত্বের অন্তর্গত। সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাশিমকে আল-হাজ্জাজ পাঠিয়েছিলেন দেবোলের জলদস্যু ঘাঁটি আক্রমণ করার জন্য। আসল উদ্দেশ্য ছিল উমাইয়া খিলাফত বিস্তারের পথে রাজা দাহির নামের কাঁটাটিকে সরিয়ে দেওয়া।


আরব সেনাপতি বিন-কাশিমের বিশাল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী ৭১২ খিস্টাব্দে আক্রমণ করেছিল দেবোল। দেবোল জয় করে বিন-কাশিমের বাহিনী এগিয়ে গিয়েছিল নেরুনের শহরের দিকে। শহরের বৌদ্ধ শাসক লড়াই না করে উমাইয়া খিলাফতের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে স্থানীয় কিছু উপজাতি রাজা দাহিরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। বিন-কাশিমের বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল জাট, মেদ, ভুট্টো, বাঝরা উপজাতির যোদ্ধারা।


মুহাম্মদ বিন কাশিম


বিন-কাশিম দখল করে নিয়েছিলেন সিসাম দুর্গ। সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরে ব্যর্থ হয়েছিল রাজা দাহিরের সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা। উমাইয়া খিলাফতের অংশ হয়ে গিয়েছিল সিন্ধু নদের পশ্চিম অংশ। সেনাপতি বিন-কাশিম বিশাল বাহিনী নিয়ে সিন্ধু নদ পার হওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য নদের পূর্ব তীরে থাকা রাজা দাহিরের রাজধানী আরোর দখল করা।


শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাজা দাহির, নদের ওপারে


রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ারে দাঁড়িয়ে রাজা দাহির প্রজাদের বলেছিলেন, “এই মাটি আমার একার নয়, ‘ব্রাহ্মণ’ রাজত্বের প্রতিটি মানুষের। তাই সবাইকে এবার হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে।” রাজা দাহির পুত্র জয়শিয়াকে পাঠিয়েছিলেন আরব বাহিনীকে সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরে আটকে রাখার জন্য। কিন্তু জিলারের সেই যুদ্ধে বিন-কাশিমের বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন দাহির পুত্র জয়শিয়া। সিন্ধু নদ পার হয়েছিল বিন-কাশিমের বাহিনী।


আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন রাজা দাহির স্বয়ং। যুদ্ধের আগে তিনি তাঁর বন্ধু ও সেনাপতিদের সঙ্গে শেষ বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে মন্ত্রীরা রাজা দাহিরকে জানিয়েছিলেন, ভারতের বিভিন্ন রাজা মহারাজার পক্ষ থেকে রাজা দাহিরকে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রস্তাবটি শোনামাত্র রাজা দাহির প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।


মন্ত্রীরা রাজা দাহিরকে অনুরোধ করেছিলেন, অন্তত রাজপরিবারের বাকি সদস্যদের ভারতে পাঠাবার অনুমতি দিতে। রাজা দাহির ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “না, আমি তা পারব না। এই কাজের জন্য শুধু আমাকে নয়, আমার সারা পরিবারকে চিরকালের জন্য বিশ্বাসঘাতক হয়ে থাকতে হবে। আজ যেখানে আমার রাজত্বের প্রত্যেকটি পরিবার অসুরক্ষিত, সেখানে আমি আমার পরিবারের সুরক্ষা দেখব, এটা ভাবলে কীকরে! রাজা দাহির সেন বিশ্বাসঘাতক নয়।”


এর পর দূত মারফত ভারতের রাজা মহারাজাদের কাছে সিন্ধুর রাজা দাহির পাঠিয়েছিলেন এক অসামান্য বার্তা,” জানবেন মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ভারত ও আরব সেনার মাঝে পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে রাজা দাহির।”


সিন্ধু নদের তীরে লড়েছিলেন জীবনের অন্তিম যুদ্ধ


যুদ্ধে যাওয়ার আগে রাজা দাহির বলে গিয়েছিলেন ,” আমি আরবদের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছি। আমি আমার জীবনের সেরা যুদ্ধ লড়ব এবং আরবদের ধ্বংস করব। যুদ্ধে যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলেও আমি বীরের স্বর্গ লাভ করব। সিন্ধুর ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই লড়াইয়ের কথা।”সিন্ধুনদের পূর্ব তীরে আরোর এলাকায় শুরু হয়েছিল বিন-কাশিমের সঙ্গে রাজা দাহিরের ভয়াবহ সেই যুদ্ধ। সত্যিই জীবনের সেরা যুদ্ধ লড়েছিলেন রাজা দাহির। সেরা যুদ্ধ লড়েছিলেন রাজা দাহিরের সেনারা। অমিতবিক্রমে কয়েক সপ্তাহ লড়াই করে, বিন -কাশিমের সেনাবাহিনীর এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস করে দিয়ে, যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন উনপঞ্চাশ বছরের দাহির সেন। মৃত্যুর পর রাজা দাহিরের মৃতদেহের প্রতি ন্যূনতম সম্মান না দেখিয়ে, দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে বিন-কাশিম পাঠিয়েছিলেন তাঁর প্রভু হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে।


রাজা দাহিরের স্ত্রী লাদি অবশিষ্ট কয়েক হাজার সৈন্য নিয়ে চলে গিয়েছিলেন রাওয়ার দুর্গে। সেখান থেকে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছিলেন মুহাম্মদ বিন কাশিমের সেনাবাহিনীর ওপর। কিন্তু একসময় ফুরিয়ে গিয়েছিল রসদ, রাওয়ার দুর্গ ঘিরে ফেলেছিল আরব সেনারা। বিন-কাশিমের হাতে ধরা পড়ার আগেই অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন রানি লাদি। পতন হয়েছিল সিন্ধুর ‘ব্রাহ্মণ’ রাজত্বের। ‘সিন্ধু’ প্রবেশ করেছিল উমাইয়া খিলাফতে।


আজও পাকিস্তানে পাওয়া যাবে রাজা দাহিরের বংশধরদের


বর্তমান পাকিস্তানের নবাবশাহ ও সাঙ্ঘার জেলায় ছড়িয়ে আছেন রাজা দাহিরের বংশধরেরা। তাঁদের বলা হয় ‘দাহেরি’ সম্প্রদায়। ইসলাম গ্রহণ করলেও আজও তাঁরা নামের শেষে ‘দাহেরি’ শব্দটি লেখেন। আজও তাঁরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন রাজা দাহিরকে। আজও তাঁরা সরকারের কাছে দরবার করেন সিন্ধুপ্রদেশে রাজা দাহিরের মূর্তি বসানোর জন্য।


আমরা জানি আলেকজান্ডারের সামনে হিমালয় হয়ে দাঁড়ানো বীরশ্রেষ্ঠ পুরুর কথা। কিন্তু আমরা জানিনা আরবদের সামনে পাহাড় হয়ে দাঁড়ানো রাজা দাহিরের নাম। ভারত ভুললেও, অসীম বীরত্বের জন্য রাজা দাহিরকে মনে রেখেছে আরবের ইতিহাস। মনে রেখেছে সিন্ধু। আজও সিন্ধুর উপকথা ও লোকসঙ্গীতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছেন সিন্ধুর শেষ হিন্দু রাজা দাহির সেন।

Popular posts from this blog

হিন্দু বিরোধী, বৈষম্যমূলক OBC আইন

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসে। আর তারপরই রাজ্যের তথাকথিত পিছিয়ে পড়া (?) মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কল্পতরু হয়ে ওঠেন মমতা ব্যানার্জি। মুসলিমদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন। আর সেই সময় চুপিসারে ২০১২ সালে পাস হয়ে যায় একটি আইন- “ The West Bengal Backward Classes (Other than Scheduled Castes and Scheduled Tribes) (Reservation of Vacancies in Services and Posts) Act, 2012,”  🔴কি ছিল সেই আইনে? আইন অনুযায়ী OBC ( Other Backward Classes ) কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়; OBC-A এবং OBC-B । আর এইভাবে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ঢালাও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই সংরক্ষণ দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের কোটার ভাগ কেটে। এখানে উল্লেখযোগ্য, OBC-তে হিন্দুরা যে সংরক্ষণের সুবিধা লাভ করতেন, তা পিছিয়ে পড়ার মাপকাঠিতে। তাছাড়া, সংরক্ষণ তালিকায় তাদের জাতির সঙ্গে হিন্দু কথা লেখা থাকতো না। কিন্তু OBC-A এবং OBC-B ক্যাটাগরিতে  যাদের পিছিয়ে পড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তাদের জাতির পাশে পরিষ্কার ‛মুসলিম’ কথা...

পুরী মন্দির

হিন্দুদের আত্মনির্ভরতার অন্যতম নিদর্শন হলো পুরীর জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরের উপর অনেক আক্রমণ হয়েছে। মুসলমান শাসকেরা ২০ বার আক্রমন করেছে, মাটিতে মিশিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে জগন্নাথ মন্দিরকে।  কিন্ত, কলিঙ্গের সমস্ত হিন্দু রাজারা একজোট হয়ে আক্রমনকে প্রতিহত করেছেন। আর, জগন্নাথ দেবের মূর্তিকে বাঁচিয়েছেন মন্দিরের পুরোহিতরা। মুসলমান শাসকেরা কখনও জগন্নাথদেবকে ছুতেও পারেননি।  তাই জগন্নাথ দেবের মন্দিরে আক্রমণকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অনেকদিন আগেই। এটা প্রথম লিখেছিলো পুরি জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিতরা। সেখানে পাঁচটি ভাষায় স্পষ্টভাবে লেখা আছে-- সকল সনাতনীকে হিন্দুদের মন্দিরে স্বাগত।  হিন্দু ছাড়াও বৌদ্ধ, জৈনরা ও শিখরা মন্দিরে ঢোকার সুযোগ পায়, তবে তাদেরকেও জন্মসূত্রে ভারতীয় হতে হবে। যেমন- থাইল্যান্ডের রাণী বৌদ্ধ হলেও মন্দিরে ঢুকতে পারেননি। আপনার প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা মূল্যহীন। তাই- ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও পুরি মন্দিরে ঢোকার অনেক চেষ্টা করেও ঢুকতে পারেননি। আপনার আর্থিক ক্ষমতাও আপনাকে পুরী মন্দিরে ঢোকাতে পারবে না। সুইজারল্যান্ডের একজন ব্যবসায়ী পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে অন...

বঙ্গাব্দের প্রবর্তক শশাঙ্ক

বঙ্গাধিপতি শশাঙ্কের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল ৫৯৩ খ্রীষ্টাব্দে। সেই বছর থেকেই চালু হল বঙ্গ নববর্ষ ও বঙ্গাব্দ | আসুন এই বার একটু অঙ্ক কষে দেখা যাক ৫৯৩ + ১৪২৯ (বঙ্গাব্দ) = ২০২২ (খ্রীষ্টাব্দ) কি তাহলে শশাঙ্কের রাজ্যাভিষেকের সাথে বাংলা নববর্ষ আর বঙ্গাব্দের মিল খুঁজে পেলেন তো ? ওদিকে আকবর মোগল সম্রাট হয়েছিল ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে। সেই হিসেবে অঙ্ক কষলে কি দাঁড়ায় দেখা যাক। ১৫৫৬ খ্রী: + ১৪২৯ বঙ্গাব্দ = ২৯৮৫ খ্ৰীষ্টাব্দ। অর্থাৎ আকবর যদি বাংলা নববর্ষ চালু করতো তাহলে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে এই বছরটা দাঁড়াতো ২৯৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। মানে শশাঙ্ককে ভুলে আকবরকে ক্রেডিট দিতে গেলে বাঙালীকে টাইম মেশিনে চেপে বর্তমান সময় থেকে আরও ৯৬৩ বছর এগিয়ে চলে যেতে হতো। তাই বঙ্গের অধিপতি নরেন্দ্রাদিত্য শশাঙ্ক হলেন বাংলা নববর্ষের জনক। বাকুঁড়ার সোনাতপন গ্রামে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের প্রাচীন মন্দিরের গায়ে বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে যা আকবরের সিংহাসনে বসার ৩০০ বছরেরও আগের প্রামাণিক ঘটনা। তবে আজকাল একে গোঁজামিল দিয়ে আকবরের নামে চালানোর ঘৃণ্য বাংলাদেশী চক্রান্তের বিরুদ্ধে সচেতন হোন। এখন থেকে প্রতিবাদ না করলে বাঙালীর বঙ্গাব্দ, নববর্ষ, ...