Skip to main content

স্বাধীনতার নায়করা পর্ব ~ ৬

Baby sleep on, another April is coming..!!*


না না কোন ব্লকবাস্টার মুভির ডায়ালগ নয়, একসময় মেদিনীপুরে ইংরেজ রাজপুরুষের স্ত্রীরা এটা বলেই সন্তানদের ঘুম পাড়াতো।


চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ১৮ই এপ্রিল ১৯৩০ আর পরের বছর এপ্রিলে জেলাশাসক পেডিকে গুলি করে মারে বিপ্লবীরা। আবার এসে গেলো এপ্রিল। তারিখটা ছিল ৩০, জেলা বোর্ডের অফিসে মিটিংয়ে এসেছেন কালেক্টর ডগলাস। চারিদিকে সশস্ত্র প্রহরী, মাছি গলার উপায় নেই। খোদ ডগলাস গুলি ভরা রিভলভার টেবিলে রেখে মিটিং করছেন।


হঠাৎই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল, কোথা থেকে উদয় হলো দুই তরুণ আর তারপর টানা গুলির আওয়াজ। লুটিয়ে পড়লেন ডগলাস..... মূহুর্তের বিমূঢ়তা তারপর সবাই হৈ হৈ করে উঠলো ধর.....ধর, ঐয়ে পালাচ্ছে ওরা।


কাজ শেষ, এবার ছুট ছুট। পালাচ্ছে দুই তরুণ। পেছনে ধেয়ে আসছে নেকড়ের পাল।


প্রদ্যোত আর প্রভাংশু তখনো আঠারো বছর বয়স হয়নি তাদের, কিন্ত কি তেজ!! নতুন করে গুলি ভরে ট্রিগারে টান দিলো প্রভাংশু ড্রাম স্লাম। অনুসরণকারীরা ভয়ে পিছিয়ে পড়তেই নিমেষে উধাও সে কিন্ত প্রদ্যোত..... তার কি হলো??


রিভলভারটা জ্যাম হয়ে গিয়েছে, কাজ করছে না। গুলি করা সম্ভব নয়, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিল সে। অলি গলি দিয়ে দৌড়নোর সময় ধুতিতে জড়িয়ে যায় জংলা গাছের ডাল, গ্রামেরই ছেলেটাকে তারও কিছু বলার ছিল হয়তো। মুখ থুবড়ে পড়া ছেলেটা উঠে দাঁড়াতে পারেনি। আগেই ঘিরে ফেলে পুলিশ।


মেদিনীপুরের এক অবস্থাপন্ন পরিবারে তেসরা নভেম্বর ১৯১৩ সালে জন্ম নেন প্রদ্যোত। পাড়াতে 'কচি' নামেই চিনতো সবাই। বাড়ির কেউ কস্মিনকালেও স্বদেশি করেনি, মন দিয়ে করেছে পড়াশোনা। বাবা মায়ের সব থেকে ছোট শান্তশিষ্ট ছেলেটা প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিল। কিন্তু সব কিছু বদলে দিল মেদিনীপুর কলেজ আর দীনেশ গুপ্ত। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের হয়ে মেদিনীপুরে তখন কাজ করছেন দীনেশ। ভর্তি হয়েছেন মেদিনীপুর কলেজে। সেখানেই তাঁর চোখে পড়ল ১৬ বছরের প্রদ্যোৎ। ভারী সুন্দর চেহারার ছেলেটার ভেতরের তেজ চোখ এড়ায়নি দীনেশের। জিজ্ঞেস করেছিলেন, ধরা পড়লে ফাঁসি, দ্বীপান্তর, অকথ্য অত্যাচার, যা খুশি জুটতে পারে। হাসিমুখে সইতে পারবে? এক কথায় হ্যাঁ বলেছিল সে। আর জীবন দিয়ে রক্ষা করেছিল সেদিনের দেওয়া কথা।


জেলে ভয়াবহ অত্যাচার। মার খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে শেকলবাঁধা ছেলেটা। মাথায় জল ঢেলে চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলছে পুলিশ। কিন্তু ভাঙা যায়নি তাকে। ভূপেন দারোগা ব্যঙ্গ করে বলছেন, 'ছিঃ প্রদ্যোৎ, তোমার মত বুদ্ধিমান ছেলে এমন ভুল করল? শেষে কিনা তুমি এমন একটা রিভলভার নিয়ে গেলে, যা কাজের বেলায় একেবারেই সাড়া দিল না? "


শেকলবাঁধা দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে বলেছিল,

Irony of fate Bhupen babu! Had my revolver spoken out I would not have been here in this condition, the story would have been otherwise..."


এবার বিচারের পালা। বেঁকে বসলেন ট্রাইবুনালের অন্যতম বিচারপতি জ্ঞানাঙ্কুর দে ICS অসম্ভব!! আসামীর বয়স কম, ফাঁসি হতে পারেনা। তাছাড়া সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে ওর অস্ত্রটাও অকেজো, গুলি অন্য কেউ করেছে!!


কিন্তু বাকি দুই ইংরেজ বিচারপতি মৃত্যুদন্ড বহাল রাখলেন। 


📆 এল শেষের সেই দিন 📆


জেলের ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা। ঢং ঢং শব্দে জেগে উঠল ভোর। কনকনে ঠান্ডা, চার দিকে কুয়াশা। সিপাইরা এসে দেখে তত ক্ষণে প্রদ্যোতের স্নান সারা। গীতাপাঠও করে নিয়েছেন। ছ'টা বাজতে তিন মিনিটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল ফাঁসির মঞ্চে।


জেলের বিভিন্ন সেল থেকে গর্জন, “প্রদ্যোৎ কুমার কি জয়...”


মঞ্চের ওপরে দাঁড়ালেন। নিহত ডগলাসের পরবর্তী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ৰাজ জিজ্ঞেস করলেন,


"Are you ready?"


শান্ত ভাবে প্রদ্যোৎ বললেন, "One minute please Mr. Burge, I have something to say."


বার্জ অনুমতি দিলেন। এ বারে প্রদ্যোৎ হাসতে হাসতে বললেন,


"We are determined, Mr. Burge, not to allow any European to remain at Midnapore. Yours is the next turn. Get yourself ready. (এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিল। মাস সাতেক বাদেই বার্জকে হত্যা করেন বিপ্লবীরা।) একটু থেমে আবার বললেন, "I am not afraid of death. Each drop of my blood will give birth to hundreds of Prodyots in all houses of Bengal. Do your work please."


📆 ১২ই জানুয়ারী, ১৯৩৩ 📆


কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা পড়ল। ফাঁসির দড়ি পরানো হল। শেষ বারের মতো উচ্চারণ করলেন, 'বন্দেমাতরম'। দুই দাদা দাঁড়িয়ে দেখলেন সেই মৃত্যুদৃশ্য। যাঁর ডাক শুনে তার বিপ্লবের পথে চলা শুরু, সেই স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনেই ফাঁসি হয় ছেলেটার। সবে পেরিয়েছেন সেদিন ঊনিশ বছর বয়স।


এবারে সে পাড়ি দেবে অমরত্বের পথ...আমাদের পক্ষ্য থেকে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি...

জয়হিন্দ| বন্দেমাতরম|


সংকলন : স্বপন সেন

© এক যে ছিলো নেতা

Popular posts from this blog

বলি প্রসঙ্গে আমার মতামত

ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এর চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better, তাহলে বলতে হয় আপনার জীবন আর মৃত্যুর sence নেই। কেন ছাগলের মৃত্যুটাই মৃত্যু? চালকুমড়ো বা আঁখের মৃত্যুটা মৃত্যু নয় কেন? আপনার যদি জীবন আর মৃত্যুর সম্বন্ধ প্রকৃত জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনটি ক্ষেত্রেই আপনি সমান দুঃখ পেতেন। কিন্ত আপনার মনে হয় ছাগল বলি দেওয়ার চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better।  আপনার এই প্রকৃতি দেখে বলতে হয়, জীবন বাঁচানো আপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং আপনি রক্তকে ভয় পান, অস্ত্র কে ভয় পান। আপনার বাস্তবিক বোধ থাকলে আপনি অস্ত্রের আঘাতে চালকুমড়ো বা আঁখের এবং ছাগ তিনটি বলির ই বিরোধীতা করতেন। কারণ তিনটির প্রকৃতিই একই রকম, এই তিনটে থেকেই অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হতে পারতো। তাই তিনটির হত্যাই একই রকম ক্ষতি করে। কিন্ত, শুধুমাত্র ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এটি মানুষের হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমরা কি সত্যিই অহিংস?  আমাদের মায়েরা প্রতিদিন জ্যান্ত মাছগুলো দুহাতে ধরে বঁটিতে ঘচাং করে একবারে জ্যান্তই কেটে ফেলেন। শহরের মাছ-মাংস বিক্রেতারাও একইভাবে কাটেন। তখন কি সেটা নৃশংসতা নয়? কেন আমরা ব

ছেলেরা কেন দিনদিন 'বৌদিবাজ' হয়ে উঠছে?

সমাজটা খুবই খারাপ দিকে যাচ্ছে। ছেলেরা এখন বৌদিবাজ হয়ে উঠেছে! তারা একবার করে প্রেমে ছেঁকা খাওয়ার পর আর অন্য কোনও প্রেমিকা জোটায় না, বৌদিদের সাথে গল্প করে। কারণ - ১| ধোঁকা খায় না ২| হৃদয়ে আঘাত লাগে না ৩| Break up 💔 বলে কিছু থাকে না ৪| অনেকটা Stunt বাজীর মতো, মাথায় কোনো চাপ নেয়ার দরকার পরে না  আর একটা বিষয় হলো এখন বেশিরভাগ ছেলে পড়াশোনা দিকে ব্যস্ত। তাই তাদের হাতেও বেশি সময় থাকে না। আবার বৌদিদের হাতেও বেশি সময় সীমিত। তাই একটা Understanding বজায় থাকে। আরেকটা জিনিস হল নতুন প্রেমিকারা যেরকম নানারকম চাপ দেয়। বৌদীরা অনেকটা বোঝে ব্যাপারগুলো। যেমন- ফাঁকা পকেট, কম সময়, Relation Public না করা... এসব জিনিস। সেই কারণে তারা এতটা চাপ দেয় না। অল্পবয়সী মেয়ের একটু জেদি হয়। তাই তারা অকারণেই ঝগড়া করে যা এমনিতেই চাকরি আর ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত ছেলেদের ভালো লাগে না। তাই তারা বৌদিদের দিকেই ঝোঁকে। বিয়ে তো অবশ্য ভালো কোনো মেয়ে দেখেই করবে, তার আগের সময়টা অন্য দিকে দেয় - বৌদিদের সাথে আড্ডা মারে। বৌদিদের সাথে কথা বলে আর কিছু হোক বা না হোক মানসিক শান্তি আছে। আমার বৌদিবাজ বন্ধুদের জন্য 💖

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা। 💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।  🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জ