দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য ছেড়ে ছিলেন নিজের স্বামীকে.. প্রবাসে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে সামিল হওয়া এক পাঞ্জাবি সিংহী গুলাব কাউর...
গুলাব কাউর ১৮৯০ পাঞ্জাবের সানগ্রুর জেলার বাকশিওয়ালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গুলাব কাউর ছিলেন একজন ভারতীয় বিপ্লবী, যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। খুব কম বয়সে গুলাব কাউর এর বিবাহ হয় মান সিং-এর সঙ্গে। এই দম্পতি আমেরিকায় পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে ভারত থেকে নৌ পথে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় গিয়েছিলেন।
গুলাব কাউর ম্যানিলায় পৌঁছে গদর পার্টি সম্পর্কে জানতে পারেন। ম্যানিলাতে গুলাব কাউর ব্রিটিশ শাসন থেকে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন গদর পার্টিতে যোগ দেন। এটি সংগঠন ছিল মূলত শিখ-পাঞ্জাবী অভিবাসীদের দ্বারা গঠিত একটি সংগঠন। ফিলিপাইনে অবস্থান করার সময় তিনি ফিলিপাইনের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন, সেখানে থাকা বিভিন্ন প্রবাসী ভারতীয়দের স্বাধীন ভারত গড়ার পক্ষে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন গুলাব কাউর। একই সময় তিনি গদর গার্টির জন্য অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। গুলাব কাউর পার্টির ছাপা খানাতেও সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতেন।
তিনি গদর পার্টির সদস্যদের অস্ত্র বিতরণের দ্বায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। গুলাব কাউর স্বাধীনতার স্বপক্ষে রচিত সাহিত্য বিতরণ করতেন ও জাহাজের ভারতীয় যাত্রীদের স্বাধীনতার পক্ষে অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা দিয়ে গদর পার্টিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন ভারতীয় প্রবাসীদের। গুলাব কাউর ও ফিলিপাইনে অবস্থানরত আরও প্রায় পঞ্চাশজন স্বাধীনতাকামী গদর পার্টির সদস্যরা, একসাথে এস.এস. কোরিয়া ব্যাচ জাহাজে করে ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
গুলাব কাউর ও বাকি সদস্যরা সিঙ্গাপুরে এসে এস.এস. কোরিয়া জাহাজ থেকে নেমে পড়েন এবং তোসা মারু জাহাজে করে আবার ভারতের দিকে যাত্রা করেন। গুলাব কাউর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা তার স্বামী মান সিং মেনে নিতে রাজী না হওয়ায়, তাঁকে ম্যানিলাতে রেখেই গুলাব কাউর ভারতে চলে আসেন...
গুলাব কাউর ভারতে পৌঁছানোর পর, তিনি ও আরও কিছু বিপ্লবী সদস্য একসাথে কাপুরথালা, হোসিয়ারপুর ও জলন্ধর গ্রামে বিপ্লবের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। যাতে জনসাধারণ দেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন ও এগিয়ে আসেন। স্বাধীনতার প্ররোচনামূলক কাজের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের লাহোরে (বর্তমান পাকিস্তানে) দুই বছরের জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল।
জেলে বন্দি কালীন তার ওপর ব্রিটিশদের অকথ্য অত্যাচার শুরু করেন। কিন্তু একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কখনই তার দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। তাই তিনি প্রচন্ড নির্যাতনের শিকার হলেও বিপ্লবীদের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করেননি ব্রিটিশ সরকারের কাছে। ১৯৪১ সালে গুলাব কাউর মারা যান।
গুলাব কাউর আজও আমাদের কাছে এক অজানা অগ্নিকন্যা.. তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ...
গুলাব কাউর |
জয়হিন্দ। বন্দেমাতরম।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া