Skip to main content

স্বাধীনতার নায়করা পর্ব ~ ৫

 দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য ছেড়ে ছিলেন নিজের স্বামীকে.. প্রবাসে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে সামিল হওয়া এক পাঞ্জাবি সিংহী গুলাব কাউর...


গুলাব কাউর ১৮৯০ পাঞ্জাবের সানগ্রুর জেলার বাকশিওয়ালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গুলাব কাউর ছিলেন একজন ভারতীয় বিপ্লবী, যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। খুব কম বয়সে গুলাব কাউর এর বিবাহ হয় মান সিং-এর সঙ্গে। এই দম্পতি আমেরিকায় পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে ভারত থেকে নৌ পথে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় গিয়েছিলেন।


গুলাব কাউর ম্যানিলায় পৌঁছে গদর পার্টি সম্পর্কে জানতে পারেন। ম্যানিলাতে গুলাব কাউর ব্রিটিশ শাসন থেকে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন গদর পার্টিতে যোগ দেন। এটি সংগঠন ছিল মূলত শিখ-পাঞ্জাবী অভিবাসীদের দ্বারা গঠিত একটি সংগঠন। ফিলিপাইনে অবস্থান করার সময় তিনি ফিলিপাইনের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন, সেখানে থাকা বিভিন্ন প্রবাসী ভারতীয়দের স্বাধীন ভারত গড়ার পক্ষে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন গুলাব কাউর। একই সময় তিনি গদর গার্টির জন্য অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। গুলাব কাউর পার্টির ছাপা খানাতেও সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতেন।


তিনি গদর পার্টির সদস্যদের অস্ত্র বিতরণের দ্বায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। গুলাব কাউর স্বাধীনতার স্বপক্ষে রচিত সাহিত্য বিতরণ করতেন ও জাহাজের ভারতীয় যাত্রীদের স্বাধীনতার পক্ষে অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা দিয়ে গদর পার্টিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন ভারতীয় প্রবাসীদের। গুলাব কাউর ও ফিলিপাইনে অবস্থানরত আরও প্রায় পঞ্চাশজন স্বাধীনতাকামী গদর পার্টির সদস্যরা, একসাথে এস.এস. কোরিয়া ব্যাচ জাহাজে করে ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করেন।


গুলাব কাউর ও বাকি সদস্যরা সিঙ্গাপুরে এসে এস.এস. কোরিয়া জাহাজ থেকে নেমে পড়েন এবং তোসা মারু জাহাজে করে আবার ভারতের দিকে যাত্রা করেন। গুলাব কাউর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা তার স্বামী মান সিং মেনে নিতে রাজী না হওয়ায়, তাঁকে ম্যানিলাতে রেখেই গুলাব কাউর ভারতে চলে আসেন...


গুলাব কাউর ভারতে পৌঁছানোর পর, তিনি ও আরও কিছু বিপ্লবী সদস্য একসাথে কাপুরথালা, হোসিয়ারপুর ও জলন্ধর গ্রামে বিপ্লবের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। যাতে জনসাধারণ দেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন ও এগিয়ে আসেন। স্বাধীনতার প্ররোচনামূলক কাজের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের লাহোরে (বর্তমান পাকিস্তানে) দুই বছরের জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল।


জেলে বন্দি কালীন তার ওপর ব্রিটিশদের অকথ্য অত্যাচার শুরু করেন। কিন্তু একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কখনই তার দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। তাই তিনি প্রচন্ড নির্যাতনের শিকার হলেও বিপ্লবীদের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করেননি ব্রিটিশ সরকারের কাছে। ১৯৪১ সালে গুলাব কাউর মারা যান।


গুলাব কাউর আজও আমাদের কাছে এক অজানা অগ্নিকন্যা.. তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ...

গুলাব কাউর


জয়হিন্দ। বন্দেমাতরম।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া


Popular posts from this blog

আগে এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন?

রামকৃষ্ণ মিশনের একজন মহারাজকে কিছু দিন আগে প্রশ্ন করা হয়, "মহারাজ, এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন? আর বর্তমানে কেন আর সেই মহাপুরুষরা জন্মায় না?" অসাধারণ উত্তরে মহারাজ একটি বাণী উদ্ধৃতির মাধ্যমে বলেছিলেন, "আকাশে প্লেন ওড়ে, সে তো আর যেখানে সেখানে ইচ্ছামত নামতে পারে না! তার নামার জন্য উপযুক্ত এয়ারপোর্ট প্রয়োজন হয়। ঠিক সেই রকম এক সময় ছিল যখন এই ভারতবর্ষে উপযুক্ত ' মা ' ছিল। এখন সেই এয়ারপোর্ট নেই, তাই বড় বড় প্লেন আর নামতে চাইলেও পারছে না"। আধুনিক মনঃ বিজ্ঞানের মতে, সন্তান কেমন মানুষ হবে সেটা ৮৫% নির্ভর করে মা-এর উপর। আর তা নির্ধারণ হয়ে যায় মায়ের গর্ভে সন্তান আসা এবং জন্মের ৫ বছরের মধ্যে। মায়ের চিন্তা, কথা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, রুচি, আদর্শ, সন্তানের উপর দারুনভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই। মায়ের কষ্ট, তার কষ্ট। মায়ের আনন্দ, তার আনন্দ। মায়ের খাবার, তার খাবার। তাহলে মায়ের ইচ্ছা, তার ইচ্ছা হবে না কেন! মায়ের আদর্শ তার আদর্শ, মায়ের জীবনবোধ, সন্তানের জীবন বোধ হবে। সেখান থেকেই তার শিক্ষা শুরু 3 Idiots এর All is Well এর মত...

ইতিহাসের পাতা থেকে - কামিনী রায়

"কেন একজন নারীকে ঘরে বন্দী করে সমাজে তার ন্যায্য স্থান থেকে বঞ্চিত করা হবে?" গর্জে উঠেছিলেন কামিনী রায়। কে ছিলেন এই প্রতিবাদী নারী? আজ বলবো তাঁরই কাহিনী। কামিনী রায় ছিলেন একজন কবি এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা যিনি অনার্স ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হয়েছেন, যিনি তার সমগ্র জীবন নারী শিক্ষা ও অধিকারের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং যিনি তার কর্মের মাধ্যমে ভারতীয় ইতিহাসে একটি আলাদা ছাপ রেখে গেছেন। 1864 সালের 12 অক্টোবর বর্তমান বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন কামিনী। অল্প বয়স থেকেই কামিনী সমাজে নিজের জায়গার জন্য লড়াই শুরু করেন। তিনি গণিতে পারদর্শী ছিলেন, কিন্তু কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি তিনি তীব্র অনুরাগ অনুভব করেছিলেন। 1880 সালে, তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন, যেখানে তিনি তার সমসাময়িক, আর এক ভারতীয় নারীবাদী অবলা বোসের সাথে নারীবাদী লেখার অন্বেষণ শুরু করেন। 1886 সালে, 22 বছর বয়সে, তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা হয়েছিলেন যিনি অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন, সংস্কৃতে বিএ সহ স্নাতক হন। তিনি একই বছর একজন শিক্ষক হিসাবে কলেজে যোগদান করেন। কামিনী তার প্রথম কবিতার বই, 'আলো ও ...

দাবাড়ু প্রজ্ঞা!

১০ আগস্ট, ২০০৫'র কথা। তামিলনাড়ু স্টেট কর্পোরেশন ব্যাংকের চাকরিজীবী রমেশ বাবু এবং তাঁর স্ত্রী নাগালাক্সমী'র ঘরে দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম হলো একটি ছেলের। ভারতের ঐ জায়গাটায় সাধারণত সন্তানদের নামের সাথে বাবার নাম যুক্ত করার রীতি আছে, এবং সে রীতি অনুযায়ী আগত সন্তানের নাম রাখা হলো প্রজ্ঞানন্দ, বাবার নাম যুক্ত করার পর ছেলেটার পুরো নাম দাঁড়ালো: রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। আর তাঁর বড় বোন: রমেশবাবু বৈশালী। প্রায় কাছাকাছি বয়সের প্রজ্ঞা আর বৈশালী'র বড় হয়ে ওঠার গল্প প্রায় একই, এবং তাদের মধ্যে একটা বিশেষ মিল আছে- দুজনই দাবাড়ু। দাবাড়ু প্রজ্ঞা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসে মাত্র দশ বছর দশ মাস এবং উনিশ দিন বয়সে- ২০১৬ সালের ২৯-এ মে'র ঘটনা। কেআইআইটি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন টুর্নামেন্টের নবম রাউন্ডে আল মুথাইয়া'র সাথে খেলা গেমটা জেতার মাধ্যমে প্রজ্ঞা তাঁর আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাবটি নিশ্চিত করেন। শুধু খেতাব পেয়েই শেষ না- প্রজ্ঞানন্দ হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী আন্তর্জাতিক মাস্টার! তাঁর ঠিক দুই বছর পর, ২০১৮ সালের ২৩-শে জুন প্রজ্ঞা ইতালিতে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্ট খেলার ম...