Skip to main content

স্বাধীনতার নায়করা পর্ব ১৩

শারীরিকভাবে বেশ শীর্ণ, রুগ্ন মাস্টারদা সূর্য সেন কে সহযোদ্ধারা রসিকতা করে বলতেন, পুলিশ এলে আপনাকে খপ করে ধরবে আর নিয়ে যাবে, মাস্টারদা স্বয়ং হেসে বলতেন দেখা যাবে..


ইংরেজি ক্যালেণ্ডারে সেদিন ১০নভেম্বর, ১৯২৬ বিকেল বেলা। হাতে একটি চায়ের কেটলি নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসছে বাড়ির ভৃত্য৷ তাঁকে বেশ জোরে ধমক দিল হিন্দুস্থানী সেপাই,-'কিধার য়াগেগা? অন্দর যাও'। বরফ অবশ্য গলেছিল একটু পরে, দারোগাকে একটা সেলাম, গেটে প্রহরারত কনস্টেবলের দিকে দু'বার সেলাম ঠুকে গুটি গুটি পায়ে চা আনতে বেরিয়ে গেলেন ওই ভৃত্য। পুলিশও বুঝতেই পারল না তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা, মাস্টারদা সূর্য সেন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেন।


মাস্টারদা সহযোদ্ধাদের রসিকতার জবাবে হেসে বলতেন দেখা যাবে, যাদের গায়ে জোর বেশি, ছুটতে পারে, দৌড়তে পারে তারা আগে ধরা পড়ছে৷ আমি সময় মত সরে পড়তে পারব। বড় সত্যি হল এক নয় একাধিক বার তিনি পুলিশের চোখ কে ফাঁকি দিয়ে উধাও হয়েছেন, তাঁর খোঁজে গিয়ে পুলিশ বুঝতে পেরেছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, এবং অসম সাহসিকতায় তাদের টেক্কা দিয়ে, তাদের বোকা বানিয়ে মাস্টারদা চলে গিয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।


সেদিন ও সাধারণ একটা দিন,তবে দিনটা যে মোটেও খুব সাধারণ নয় বিষয়টি অনুধাবন করতে ভুল হয়নি সূর্য সেনের। তিনি দেখতে পেলেন ব্রিটিশের পুলিশ বিপ্লবীদের খোঁজে গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। এর আগেও চট্টগ্রামে ২৫ অক্টোবর ১৯২৪ তারিখে পুলিশ তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল,তবে তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের হয় নি, বাড়ির খাটা পায়খানার ফাঁক দিয়ে নিঃশব্দে পেছনের ঘন জঙ্গলে ঢুকে গভীর অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিলেন৷


কিন্তু এবার কী হবে! গোটা বাড়িটা যে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে, পালাবার যে কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না! বিচক্ষণ সূর্য সেন মুহূর্তে গায়ের জামা, গেঞ্জি সব খুলে ফেললেন, নিজের পায়ের জুতো ফেলে দিলেন। পাশে ঝোলানো কোনও একজনের একটা অত্যন্ত অপরিস্কার,ময়লা, তেল চিটচিটে গামছা কাঁধে ফেলে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলেন।


হাতে একটি চায়ের কেটলি নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এসেছেন। বাড়ির বাইরের দরজার সামনে হিন্দুস্থানী এক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল সে প্রচণ্ড জোরে ধমক দিল মাস্টারদাকে, 'কিধার যায়েগা? অন্দর যাও'।


দু'পা পিছিয়ে পুলিশকে দিলেন এক সেলাম ঠুকে, ঢোক গিলে বললেন 'উপরের বাবু লোক চা খেতে চাইছেন; পয়সা দিয়েছেন:তিন পেয়ালা চা আনতে হবে'। ডান হাতের মুঠ খুলে পয়সাও দেখালেন।


পুলিশের কনস্টেবল অবশ্য নিজের দায়িত্ব পালন করছে, সে পরিস্কার বলে দিল- 'নেহী আনতে হোবে, যাও অন্দর'। মাস্টারদা একটু ইতঃস্তত করলেন। পাশে দাড়িয়ে ছিল এক দারোগা তিনি অবশ্য বাঙালি৷ বাড়ির ভৃত্যের আপাদমস্তক পুলিশের চোখ দিয়ে ভাল করে দেখে বললেন 'সেপাই,ছেড়ে দাও,ও বাড়ির চাকর'। সঙ্গে-সঙ্গে দারোগাকে একটি সেলাম দিয়ে কনস্টেবলের দিকে দুবার সেলাম করে গুটি গুটি পায়ে চা আনতে বেরিয়ে গেলেন, সেই যে বের হলেন আর ওই বাড়িতে ঢুকলেন না।


হ্যাঁ সেই মাস্টারদা যার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটেছিল, মানুষ ভুলে যায় নি তাঁর আদর্শ, সশস্ত্র বিদ্রোহের পথে গিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যদাদের বিরুদ্ধে সূর্য সেনের তীব্র লড়াই জাতির যুবশক্তিকে নতুন প্রেরণায়, নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। দেশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির দড়ি হাসতে হাসতে গলায় তুলে নিয়েছেন। তাঁকে জানাই আমাদের স্যালুট...


গ্রন্থঋণ : বিপ্লবী সূর্য সেন (গণেশ ঘোষ )

সংকলন Arunava Sen

(সংগৃহীত)

Popular posts from this blog

বলি প্রসঙ্গে আমার মতামত

ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এর চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better, তাহলে বলতে হয় আপনার জীবন আর মৃত্যুর sence নেই। কেন ছাগলের মৃত্যুটাই মৃত্যু? চালকুমড়ো বা আঁখের মৃত্যুটা মৃত্যু নয় কেন? আপনার যদি জীবন আর মৃত্যুর সম্বন্ধ প্রকৃত জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনটি ক্ষেত্রেই আপনি সমান দুঃখ পেতেন। কিন্ত আপনার মনে হয় ছাগল বলি দেওয়ার চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better।  আপনার এই প্রকৃতি দেখে বলতে হয়, জীবন বাঁচানো আপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং আপনি রক্তকে ভয় পান, অস্ত্র কে ভয় পান। আপনার বাস্তবিক বোধ থাকলে আপনি অস্ত্রের আঘাতে চালকুমড়ো বা আঁখের এবং ছাগ তিনটি বলির ই বিরোধীতা করতেন। কারণ তিনটির প্রকৃতিই একই রকম, এই তিনটে থেকেই অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হতে পারতো। তাই তিনটির হত্যাই একই রকম ক্ষতি করে। কিন্ত, শুধুমাত্র ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এটি মানুষের হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমরা কি সত্যিই অহিংস?  আমাদের মায়েরা প্রতিদিন জ্যান্ত মাছগুলো দুহাতে ধরে বঁটিতে ঘচাং করে একবারে জ্যান্তই কেটে ফেলেন। শহরের মাছ-মাংস বিক্রেতারাও একইভাবে কাটেন। তখন কি সেটা নৃশংসতা নয়? কেন আমরা ব

ছেলেরা কেন দিনদিন 'বৌদিবাজ' হয়ে উঠছে?

সমাজটা খুবই খারাপ দিকে যাচ্ছে। ছেলেরা এখন বৌদিবাজ হয়ে উঠেছে! তারা একবার করে প্রেমে ছেঁকা খাওয়ার পর আর অন্য কোনও প্রেমিকা জোটায় না, বৌদিদের সাথে গল্প করে। কারণ - ১| ধোঁকা খায় না ২| হৃদয়ে আঘাত লাগে না ৩| Break up 💔 বলে কিছু থাকে না ৪| অনেকটা Stunt বাজীর মতো, মাথায় কোনো চাপ নেয়ার দরকার পরে না  আর একটা বিষয় হলো এখন বেশিরভাগ ছেলে পড়াশোনা দিকে ব্যস্ত। তাই তাদের হাতেও বেশি সময় থাকে না। আবার বৌদিদের হাতেও বেশি সময় সীমিত। তাই একটা Understanding বজায় থাকে। আরেকটা জিনিস হল নতুন প্রেমিকারা যেরকম নানারকম চাপ দেয়। বৌদীরা অনেকটা বোঝে ব্যাপারগুলো। যেমন- ফাঁকা পকেট, কম সময়, Relation Public না করা... এসব জিনিস। সেই কারণে তারা এতটা চাপ দেয় না। অল্পবয়সী মেয়ের একটু জেদি হয়। তাই তারা অকারণেই ঝগড়া করে যা এমনিতেই চাকরি আর ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত ছেলেদের ভালো লাগে না। তাই তারা বৌদিদের দিকেই ঝোঁকে। বিয়ে তো অবশ্য ভালো কোনো মেয়ে দেখেই করবে, তার আগের সময়টা অন্য দিকে দেয় - বৌদিদের সাথে আড্ডা মারে। বৌদিদের সাথে কথা বলে আর কিছু হোক বা না হোক মানসিক শান্তি আছে। আমার বৌদিবাজ বন্ধুদের জন্য 💖

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা। 💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।  🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জ