ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে মহান বিপ্লবী শহীদ অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্য। ইনি জন্ম গ্রহণ করেন কুলিল্লায় ৪ই এপ্রিল ১৯১৫ সালে। তার পিতার নাম ছিল ক্ষীরোদ রঞ্জন ভট্টাচার্য। ক্ষীরোদ রঞ্জন ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং স্বদেশীয়ানায় বিশ্বাসী। অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্য কুমিল্লার কলেজে পড়াশোনা করতেন। কলেজে থাকাকালিন তিনি অনুশীলন সমিতির সংস্পর্শে আসেন। আসিতরঞ্জন বিশ্বাস করতে শুরু করেন সশস্ত্র আন্দোলনই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র উপায়।
সবই তো হলো কিন্তু অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ আসবে কোথা থেকে? তারজন্য তো টাকা লাগবে! ডাকাতি না করা ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। সরকার ও ধনী মহাজনদের কাছ থেকে লুট করতে হবে অর্থ, এদের অর্থই দেশের কাজে লাগাতে হবে। দিনটি ছিল ১৩ই মার্চ ১৯৩৩ সাল, শ্রীহট্ট হবিগঞ্জের ইটাখোলা বড় ডাকঘর থেকে বেরিয়েছে এমনই এক হরকরা। কাঁধে ডাকের ঝোলা, একহাতে বল্লম তাতে বাঁধা ঘুঙুর। সূর্যাস্ত হলো কেবল কিছু দূর যেতেই পাঁচ জনের একটি দল তার ডাকব্যাগটি কেড়ে নিয়ে ছুটতে লাগলো। চিৎকার করে উঠলেন ডাকব্যাগটি নিয়ে পালাচ্ছে, চিৎকার শুনে লোকজন পিছু নেয় তাদের।
কিছুক্ষন পরই ধেয়ে আসা মানুষজন বিপ্লবীদের ঘিরে ফেলল। উৎসাহী একজন বল্লমটি ছুড়ে মারে স্বদেশীদের লক্ষ্য করে, পায়ে বেঁধে একজনের। অবস্থা খারাপ দেখে একজন সঙ্গে রাখা রিভলবার দিয়ে গুলি চালালে লুটিয়ে পড়লেন এক গ্রামবাসী। অবাঞ্ছিত এই ঘটনায় যখন সবাই হতচকিত, তখনই ধরা পড়ে যায় পাঁচজন বিপ্লবী। এদিকে পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন, গ্রেপ্তার করা হলো পাঁচজনকে।
এবার বিচারের পালা বিচারে বাকি চারজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হলো, কিন্তু অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্যকে গুলি চালানোর অপরাধে দেওয়া হলো মৃত্যুদণ্ড। ২রা জুলাই ১৯৩৪ সালে ফাঁসি দেওয়া হয় শ্রীহট্ট জেলে অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। তখন সমগ্র বরাক উপত্যকায় এবং ওই জেলে সেটাই ছিল প্রথম ফাঁসি । অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্য ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের ইণ্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি-র সক্রিয় সদস্য। অসিতরঞ্জনের দাদা বিধুভূষণ ভট্টচার্য ২২শে এপ্রিল ১৯৩০ সালের জালালাবাদের যুদ্ধে বৃটিশ সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। শহীদ হন টেগরা, মতি কানুনগো, প্রভাস বল প্রমুখ বিপ্লবীদের সঙ্গে বিধুভূষণ ভট্টচার্য।
সে দিনের অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্যকে এই প্রজন্মের হয়তো কেউই চেনেনা। চিনেই বা কি লাভ এই আত্মবিস্মৃত জাতির.. পড়লে ক্ষমা করবেন অসিত বাবু এই হতভাগ্য জাতিকে।
অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্য |
জয়হিন্দ| বন্দেমাতরম|
© এক যে ছিলো নেতা