✍ শ্রাবন্তী জানা,
**********************************************
নেতাজী হলেন "আধুনিক ভারতের ভীষ্মদেব"। তিনি এক অসম্ভব পরাক্রমশালী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মহান বিশ্বমানব।
নারায়ণ সান্যাল লিখেছেন 'নেতাজী বিবাহিত' এই অসত্যটা মেনে নেওয়ায় কে কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করেছেন তা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
১৯৪৯ সালের ২২এপ্রিলে এক হিন্দি দৈনিক পত্রিকা "সন্মার্গ" এর শিরোনামে উঠে এলো 'নেতাজী কা পত্নী'। তাতে লেখা হয়, সুভাষ চন্দ্র এক জার্মান রমনীকে বিয়ে করে ছিলেন এবং তাদের এক আট বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। দু'বছর পর ঐ একই পত্রিকায় "বোমা" ফাটে যে সুভাষ চন্দ্র এক জার্মান রমনীকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের এক আট বছরের কন্যা সন্তানও আছে!
আশ্চর্য বিষয় হলো, এখানে দু'বার দু'রকম খবর বেরলো একবার পুত্র, একবার কন্যা। দু'বছরের ব্যবধানে হলেও বয়স কিন্তু সেই আট (৮)।
যে সময় সন্তান জন্মানোর কথা বলা হয়েছে সে সময় নেতাজী ভারতবর্ষে ছিলেন। অর্থাৎ জন্ম ১৯৪১সাল, মাতৃ গর্ভে ছিল নয় মাস। (সহবাস-সঙ্গম করতে হবে ১৯৪০ সালের জুন -জুলাই)
কিন্তু ১৯৪০সালের ২জুলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেছে। আর ঐ দিন ব্রিটিশ সরকার নেতাজীকে এরেস্ট করে জেলে ভরে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল পরে নিজের ঘরে গৃহবন্দি থাকে।
এদিকে যাকে সুভাষ চন্দ্র এর স্ত্রী বলা হচ্ছে সে(এমেলি শেঙ্কেল) তখন জার্মানিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে ব্রিটেন-জার্মানী তখন পরস্পরের চরম শত্রুপক্ষ। গনিতের হিসাবে সড়যন্ত্র কারীর যুক্তি ধোপে টিকবে না তাই দ্বিতীয় 'বোমা' ফাটাল!!!
উত্তর প্রদেশের ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা রামগতি গাঙ্গুলি নেতাজী'র দাদা শরৎ বসুকে একটি চিঠি (বিবাহ-সংবাদ) লেখেন তার উত্তরে শরৎ বসু বলেন 'মিথ্যে সংবাদ বন্ধ করুন...'
•এতোদিন বিবাহের সংবাদ কেন কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এলো না?
•কেন জার্মান সরকার বা ইতালি সরকার ঘূণাক্ষরেও টের পেল না?
•কেন আজাদ হিন্দ ফৌজের কোনো কর্তা ব্যক্তিরা জানতে পারল না?
১৯৫৪ সালের ৩১মার্চ এমিলি শেঙ্কল ভাইস কনসালকে লিখেছেন, 'Sir, I furnish below particulars of my daughter Anita Schenkl Bose who may be registered as the child of an Indian citizen. Name: Anita,Date of birth: 29.11.1942. Name and address of mother. Frau Emilia Schenkl, Ferrogasse 24, Vienna XVll (Austria.)
এই চিঠির সঙ্গে বার্লিন থেকে শরৎ বসুকে লেখা সুভাষের চিঠি কে এমিলি শেঙ্কল প্রমান হিসাবে ব্যবহার করে। কিন্তু পরে সেটাকে 'জাল' বলেন বিভিন্ন তথ্যভিজ্ঞরা।
নেতাজী-ইমিলির বিবাহ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি। অনিতার বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি, যেখানে বাবার নাম সুভাষ লেখা আছে। জার্মান ভাষায় অনিতার বার্থ সার্টিফিকেটে মায়ের নাম লেখা আছে।
ডা.মধুসূদন পাল তাঁর গ্রন্থে নেতাজীর বিবাহ-সড়যন্ত্র নিয়ে কতকগুলো উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন তুলেছেন।
আউসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি হিসাবে অনিতার পরিচয় আছে Dr.Anita Brigitte Pfaff.'পাফ' পদবী টা বিবাহ সুত্রে পাওয়া, তবে 'ব্রিজেটি' পদবী ধারী কেউ তার আসল পিতা?
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী এমিলির বিবাহ ১৯৪২-এ। শেখর বসুকে জানিয়ে ছিল ১৯৪১ সাল, ১৯৭৭ -এ কলকাতা হাইকোর্টে শিশির বসুর affidavit অনুযায়ী ১৯৪২, শিশির বসু ও সুগত বোস সম্পাদিত গ্রন্থে (১৯৯৪) এই তারিখ ১৯৩৭-এর ২৯ ডিসেম্বর।
এখন কিছু প্রশ্ন?
****************
(১) যদি বিয়ে হয়েই থাকে তাহলে কি জাতের বিয়ে? ধর্মীয় বিয়ে হলে নেতাজী কে খ্রীস্টান হতে হবে অথবা শেঙ্কেলকে হিন্দু। তা না হলে রেজিস্ট্রি বিবাহ, সিবিল ম্যারেজ?
(২) রেজিস্ট্রি হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত থাকবে তা না হলে শেঙ্কেলের কাছে 'ম্যারেজ' সার্টিফিকেট থাকবে না কেন?
(৩) সিবিল-ম্যারেজ হলে সাক্ষী থাকার কথা! সাক্ষীর নাম কেউ বলছে না কেন? আর কেনই বা কোনো আলোকচিত্র নেই?
(৪) বিয়ে যদি হয়ে থাকে তাহলে হিটলার অথবা জার্মান সরকারের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? শেঙ্কেলে একজন আর্য আর নেতাজী একজন অনার্য। এতো বড় ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই?
(৫) জার্মানিতে নেতাজীর সঙ্গে যারা থাকতো তারা কখনই বিবাহের সম্পর্কে কিছু বলেনি কেন?
(৬) শেঙ্কেলে কেন বিবাহের পর নিজের পদবী পরিবর্তন করেননি?
(৭) ১৯৪৩-৪৫ এর মধ্যে জার্মানী ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। পত্রলাপের সুযোগ ছিল তবু কেন কোনো চিঠি দেখাতে পারে নি বা চিঠি পাওয়া যায়নি কেন?
(৮) ১৯৪৪-৪৫ -এ জার্মানি তে কূটনৈতিক চ্যানেলে কখনও জানতে চেয়েছে তার স্ত্রী বা কন্যা কেমন আছে?
(৯) ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্টের পর আই.এন.এ বিচারের সময় বা ভারত স্বাধীন হওয়ার পর শেঙ্কেলের কোনো আকুলতা জাগে নি কেন? স্বামীর সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন রাখেনি কেন?
(১০) ব্যতিক্রম : গান্ধীজীকে একটি চিঠিতে 'শেঙ্কেল' হিসাবে পরিচয় দিয়েছে কিন্তু 'মিসেস বসু' নয় কেন?
References:
১. নারায়ণ সান্যাল, ১৯৭০ (ষোড়শ সংস্করণ ২০২২), আমি নেতাজী কে দেখেছি, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা,পৃষ্ঠা -xiv-xv.
২. ডাঃ মধুসূদন পাল, ২০২০, বিবাহ গল্প কথা শয়তানের গুপ্ত গাথা, বজ্রবাণী ট্রাস্ট, কলকাতা।
৩. ডাঃ মধুসূদন পাল ও শুভময় মন্ডল, ২০২০, Decoding Marriage stories on Netaji বজ্রবাণী ট্রাস্ট, কলকাতা।