Skip to main content

দূর্গা পূজা কেমন হওয়া উচিত?

কেমন হওয়া উচিত দূর্গা পূজা?


লেখক: প্রণয় কুমার নাথ


•অপসংস্কৃতির মোহ

•পূজা প্রকৃতপক্ষে কী?

•কেমন হবে দূর্গা মূর্তি?

•কেমন হবে পূজা উদ্যাপন?

• মূর্তি বিসর্জনের নিয়ম কি কি?




● অপসংস্কৃতির মোহ

বর্তমান সময়ে পূজা একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে ভক্তিচর্চার পরিবর্তে চলছে আচারসর্বস্ব সংস্কৃতির চর্চা। তা-ও ভালো হতো যদি সংস্কৃতিটা আদর্শ হতো; কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, তা ক্রমশ খারাপ হতে হতে অপসংস্কৃতির রূপ ধারণ করেছে। পূজা নয়, যেন ডেকোরেশন আর লাইটিং-এর তুমুল প্রতিযোগিতা, উঠতি ছেলেমেয়েদের বিকৃত আনন্দ-উল্লাস। উগ্র শব্দে উগ্র গান চালিয়ে তারা মদ-গাঁজা খেয়ে অশালীন ভঙ্গিতে মায়ের সামনেই নৃত্য করে। যেকোনো সাধারণ ভদ্রলোকও সে নৃত্য দেখে মুখ না লুকিয়ে পারবেন না, তা উপভোগ করা তো দূরের কথা।


অপসংস্কৃতির দ্বারা মোহিত হয়ে বর্তমানে যারা এভাবে মায়ের পূজা করছে, প্রকৃতপক্ষে একে পূজা বলা যায় না। বৈদিক শাস্ত্রে কোথাও এভাবে মায়ের পূজা করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। কেউ কি নিজের মায়ের সামনে মদ-গাঁজা খেয়ে এভাবে অশালীন ভঙ্গিতে নৃত্য করতে পারে? যে কারো মা, এমনকি বোনের সামনেও যদি কেউ নেশাগ্রস্ত হয়ে মাতলামি করে, অশালীন ভঙ্গিতে নৃত্য করে, তবে তা কি কেউ সহ্য করবে? তাহলে যিনি জগজ্জননী, তাঁর সামনে কি এমন আচরণ করা যায়. এটা কখনো মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন হতে পারে না। এটা জগন্মাতাকে অপমান করা। অতিথি যদি জানতে পারে যে, তাকে বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করা হবে, তবে কি তিনি সেখানে যাবেন?
এমনকি পারিবারিক বা সামাজিকভাবেও ভদ্রপরিবারে এ ধরনের আচরণ শোভনীয় নয়। আর যদি তা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা মন্দির, যেখানে স্বাভাবিকভাবেই সবাই নির্মল পরিবেশ আশা করেন, সেখানে যদি এধরনের আচরণ করা হয়, তাহলে অবশ্যই তা নিন্দনীয়।


ক’দিন আগে আমাদের সাথে অন্য ধর্মাবলম্বী জনৈক পুলিশ অফিসার পূজা মণ্ডপে কর্তব্যরত অবস্থার অভিজ্ঞতা বলছিলেন, “যখন সকালবেলা দেবীর পূজা হয়, দেবীকে ধূপ-দীপ, ফুল ইত্যাদি দেয়া হয়, তখন আমার মনেও এরকম পবিত্র পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধার উদয় হয়। কিন্তু যখন সন্ধ্যা হতেই লাইটিং আর উগ্র গানের সাথে নাচবাজনা শুরু হয়, তখন এর প্রতি শ্রদ্ধা তো দূরের কথা বরং ঘৃণা হয়।” প্রকৃত সংস্কৃতি চর্চা হলে সবাই সনাতনী সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে, কিন্তু তা বিকৃত হলে, সকলেই ঘৃণা করবে, এটাই স্বাভাবিক।


তাই যদিও শ্রীবিগ্রহের বহু গুণ-মহিমা শাস্ত্রে কীর্তিত হয়েছে, তবু, যদি যথাযভাবে বিগ্রহকে মর্যাদা না দেয়া হয়, তবে সেখানে দেবী অবস্থান করতে পারেন না। মন্ত্রপাঠ করে যতই আহ্বান করা হোক, বিধি মোতাবেক মায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শিত না হলে মা কখনোই মূর্তির মধ্যে অধিষ্ঠান করবেন না।


●পূজা প্রকৃতপক্ষে কী?


‘পূজা’ শব্দটি শোনা মাত্রই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে কোনো দেবপ্রতিমা বা ফুল-তুলসী-বিল্বপত্র ও শঙ্খ-ঘন্টা দ্বারা সজ্জিত ধাতবপাত্র, আল্পনা, ঘট অথবা ধূপ-দীপ সমন্বিত আরতির দৃশ্য ইত্যাদি। তখন স্বাভাবিকভাবেই হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও পবিত্রতা অনুভব হয়। কিন্তু বর্তমানে সমাজে পূজা মানে পার্টি, বিনোদন বা উৎসবমাত্র। আবার, কারো কাছে পূজা মানে খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হুল্লোর আর নতুন পোশাক পড়ে ঘোরাঘুরি, সমাবেশ অথবা আড্ডা দেয়া। প্রকৃতপক্ষে পূজার অর্থ তাদের হৃদয়ঙ্গম হয়নি বলা যায়। পূজার উদ্দেশ্য হলো পূজনীয় ব্যক্তির সন্তুষ্টি বিধান করবে, উপাস্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাযুক্ত হবে। বৈদিক সংস্কৃতিতে এমন আয়োজনই স্বীকৃত। তাই পূজা মানে শুধু আচারসর্বস্বতা নয়, সেখানে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির সমন্বয় থাকতে হবে।


আবার, পূজা বলতে কেবলই শ্রীবিগ্রহের উদ্দেশ্যে পুষ্পার্পণ নয়। ‘পূজা’ শব্দের বিভিন্ন আভিধানিক অর্থ, যেমন-অর্চনা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, সম্মাননা বা সংবর্ধনা দেওয়াও বোঝায়, অর্থাৎ শ্রদ্ধাপূর্বক কাউকে সম্মাননা বা সংবর্ধনা দেয়াও পূজা। সন্তান পিতা-মাতাকে, ছাত্র শিক্ষককে, অধঃস্তনও ঊর্ধ্বতনকে সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। এটাই সভ্য সমাজের নীতি। দেশের পতাকাকে কে সম্মান করে না? যে তা না করে, তাকে সুনাগরিক বলে বিবেচনা করা হয় না। আবার, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে যখন মাল্যদান করা হয় অথবা অন্য যেকোনোভাবে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, তাতেও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির পূজা করা হয়। শহীদদের উদ্দেশ্যে যখন পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়, তাতেও নিশ্চয়ই শহীদদের পূজা হয়। সুতরাং, প্রত্যেকেই কারো না কারো পূজা করছে এবং এভাবে পূজাকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখছে না। কেননা, যোগ্যতা বিচারপূর্বক পূজা মহৎ কার্য; আর যে তা না করে, সে অকৃতজ্ঞ। এ কারণে, সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ কৃতজ্ঞতাবশত বিভিন্ন দেবদেবী এবং পরমেশ্বর ভগবান পূজা করে থাকেন।


দূর্গা মূর্তি কেমন হবে : মা দুর্গার রূপের পরিকল্পনা-


রুচিহীন ও দৃষ্টিকটু প্রতিমা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে দুর্গাপ্রতিমা ইচ্ছেমতো তৈরি করা উচিত নয়। শাস্ত্রে বর্ণিত ধ্যানমন্ত্রের বর্ণনানুসারে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা উচিত। প্রতিমা তৈরি করার সময়ে একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, দেবী প্রতিমাতে যেন জগজ্জননী ভাবটি সন্নিবেশিত থাকে। আধুনিকতার নামে অহেতুক হবে।শ্রীদুর্গার স্বরূপ সম্পর্কে বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণের ধ্যানমন্ত্রে বলা হয়েছে :


ॐ জটাজুটসমাযুক্তামন্দুেকৃতশেখরাং। 

লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্ ॥ 

অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাং।

নবযৌবনসম্পন্নাং সৰ্ব্বাভরণভূষিতাং।।

সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত পয়োধরাং।

ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমদিনীং ॥

মৃণালায়তসংস্পর্শ বা সমন্বিতাং। 

ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়গং চক্রং ক্রমাদধঃ ॥ 

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ। 

খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।। 

ঘন্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ। 

অধস্তান্মাহিষং তদ্বদ্বিশিরস্কং প্রদর্শয়ে‍। 

শিরচ্ছেদোদ্ভবং তদ্বদ্দানবং খড়গপাণিনং। 

হৃদি শুলেন নিভিন্ন‍ নিদবিভূষিত।। 

রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণং। 

বেষ্টিতং নাগপাশেন ভূকুটীভীষণাননং৷৷ 

সপাশবামহন্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুৰ্গয়া।

বমদ্রুধিরবজ্রঞ্চ দেব্যাঃ সিংহং প্রদর্শয়েৎ। 

দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরি স্থিতং । 

কিঞ্চিদুগ্ধং তথা বাঘমসুষ্ঠং মহিষোপরি।। 

প্রসন্নবদনাং দেবীং সৰ্ব্বকামফলপ্রদাং। 

ভূয়মানং চ তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।। 

উগ্রচণ্ডা প্ৰচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডানায়িকা। 

চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডারূপাতিচণ্ডিকা।। 

অষ্টাভিঃ শক্তিভিস্তাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাং। 

চিন্তয়েজ্ঞাগতার ধাত্রী ধর্মকামার্থমোক্ষদাম্ ॥


"যাঁর জটাযুক্ত কেশরাশিতে বাঁকাচাঁদ বিরাজিত। যাঁর অপূর্ব সুন্দর ত্রিনয়নযুক্ত মুখমণ্ডল পূর্ণচাঁদের মতো। জগতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সেই দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো হলুদ। তিনি নবযৌবনসম্পন্না, সর্বপ্রকার অলংকার দ্বারা সুসজ্জিতা, তাঁর অপূর্ব সুন্দর দন্তরাজি এবং সন্তানকে অমৃতপান করানোর উদ্দেশ্যে তিনি পীনোন্নত-পায়োধরা। মহিষাসুরকে বধের উদ্দেশ্যে তিনি ত্রিভঙ্গরূপে বিরাজিতা। পদ্মের ডাটার ন্যায় বিস্তৃত দশহাতে তিনি দশদিক আলো করে আছেন। এর মধ্যে ডানপাশের হাতে উচ্চ থেকে নিম্ন ক্রমানুসারে তিনি ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ণবাণ এবং শক্তি ধারণ করে আছেন। একইভাবে বাম পাশে তিনি ঢাল, ধনুক, নাগপাশ (বন্ধন দড়ি), অঙ্কুশ, ঘন্টা বা কুঠার ধারণ করে আছেন। দেবীর পদতলে ছিন্ন মস্তক মহিষ এবং সেই মহিষের ছিন্নস্কন্দদেশ থেকে আবির্ভাব হচ্ছে খড়গ হাতে এক ভয়ংকর দানবের। দেবী কর্তৃক নিক্ষিপ্ত ত্রিশুলে সেই দানব মহিষাসুরের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে আছে। তাই রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহে মহিষাসুরের চোখ ক্রোধে রক্তবর্ণ বিস্ফোরিত হয়ে আছে। দেবী ভীষণ নাগপাশ দ্বারা মহিষাসুরকে আবদ্ধ করায় ক্রোধে মহিষাসুর ভ্রূকুটি করে আছে। এতে মহিষাসুরকে আরো ভয়ংকর দেখাচ্ছে। দেবী নাগপাশযুক্ত বাম হাতে মহিষাসুরের চুলের অগ্রভাগ ধারণ করে আছেন। দেবীর পদতলে পাশবদ্ধ মহিষাসুর রক্তবমি করছে। দেবীর ডান পা সিংহের পিঠে এবং বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি একটু উপরে মহিষাসুরের কাঁধে সংস্থাপিত। সকলের আরাধ্য প্রসন্নবদনা এ দেবীই একমাত্র সর্বপ্রকার অভীষ্ট ফলদাত্রী। উগ্রচণ্ডা, প্রচণ্ডা, চণ্ডোগ্রা, চণ্ডানায়িকা, চণ্ডা, চণ্ডবতী, চণ্ডারূপা ও অতিচণ্ডিকা এ অষ্টশক্তি দেবীকে পরিবেষ্টন করে আছেন। ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ এ চতুর্বর্গের প্রদাত্রী জগতের ধাত্রী সেই দুর্গার সদা ধ্যান করি।"


দেবীর ধ্যানমন্ত্রের এ পাঠটিই সর্বাধিক জনপ্রিয়। ধ্যানমন্ত্রের এ জনপ্রিয় পাঠটিই কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে কালিকা পুরাণের ৫৯ অধ্যায়ের ১১-২২ শ্লোকে পাওয়া যায়। কালিকা পুরাণে বলা হয়, আদ্যাশক্তি মহামায়া দুর্গার হাতে মহিষাসুর নিহত হলে দেবগণ এই ধ্যানমন্ত্র দ্বারাই দেবীর পূজা করেন এবং দেবীও জগতে মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিতে বিখ্যাত হন। সেই অবধি জগতে সর্বত্র সেই মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিরই পূজা করা হয়। অচিন্ত্য অনন্তরূপা দেবী মহিষমৰ্দ্দিনী মূৰ্ত্তিতেই জগতে প্রসিদ্ধ হন। দেবতাদিগের বরদান হেতু ব্রহ্মাদি সকলেই অচিন্ত্য, ইন্দ্রিয়াতীত দেবীকে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে আরাধনা করেন।


●কেমন হবে পূজা উদ্যাপন?


আধুনিকতার সংস্পর্শে সবাই যে অপসংস্কৃতির চর্চা করছে, তা কিন্তু নয়। এখনো অনেকে রয়েছেন, যাঁরা খুব শুদ্ধতা সহকারে শ্রীবিগ্রহের সেবা করেন।
প্রথমত, শাস্ত্রবিধি অনুসারে দেবীর বিগ্রহ তৈরি করতে হবে এবং সেই সাথে চাই প্রতিমাশিল্পী ও ব্রাহ্মণের শুদ্ধতা এবং সঠিকভাবে মন্ত্রপাঠ। পূজায় জাগতিক হিন্দি বা ইংরেজি গানের পরিবর্তে মায়ের বন্দনামূলক সংগীত বাজানো উচিত। পূজায় সাউন্ড সিস্টেমের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অনুষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং মাকে তাঁর বন্দনা গীতি শোনানো, নিজেরা উগ্রভাবে নৃত্য করা নয়। ডেকোরেশন বা লাইটিং লোকের মনোরঞ্জন বা প্রতিযোগিতার জন্য নয়, মায়ের সন্তুষ্টি বিবেচনা করেই হওয়া উচিত। তাছাড়া পূজার অবশ্যই শুদ্ধ ও সাত্ত্বিক আহারের ব্যবস্থা করা উচিত। মদ্যপান ও সকল প্রকার নেশা বর্জন করা উচিত। অশ্লীন নৃত্য পরিবেশন থেকে বিরত হওয়া উচিত। পূজাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি যেন না হয়, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত এবং প্রত্যেক পূজা কমিটির উচিত মায়ের সেবার গুণগত মান যেন নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকা। এই নৃত্য, গীত, সাজসজ্জা, ভোজন ইত্যাদি বৈদিক সংস্কৃতির অঙ্গ হলেও সবকিছুর উদ্দেশ্য উপাস্যদেবীর সন্তুষ্টিবিধানে হওয়া উচিত। 

পূজার চাঁদার অর্থ ব্যক্তিস্বার্থে অথবা মদ-মাংসের পেছনে ব্যয় না করে, দেবতার উদ্দেশ্যেই ব্যয় করা উচিত এবং পূজাবিধি আচরণের ক্ষেত্রে কারো মানসিক জল্পনা-কল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শাস্ত্রসিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সবকিছু করা উচিত। কারণ, শাস্ত্রবিরুদ্ধ কর্ম আসুরিক বলে গণ্য হয়। শাস্ত্রানুযায়ী কলিযুগে যজ্ঞে পশুবলি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, যেহেতু পশুকে পুনর্জীবন দান করা সম্ভব হয় না। তাই মাংসাহার, নেশা ইত্যাদি তামসিক আচার সম্পূর্ণরূপে বর্জনপূর্বক শুদ্ধ-সাত্ত্বিকভাবে পূজা উদ্যাপন করা উচিত।

বিধিহীনমসৃষ্টান্নং মন্ত্রহীনমদক্ষিণম।

শ্রদ্ধাবিরহিতং যজ্ঞ তামসং পরিচক্ষতে॥

তামসিক যজ্ঞ উৎসবগুলো বিধিহীনম্- শাস্ত্রবিধি বর্জিত। অসৃষ্টান্নম- প্রসাদ বিতরণ করা হয় না। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন যে, দেবতারা সন্তুষ্ট হয়েই আমাদের প্রার্থিত বস্তু দান করেন। যার ফলে মানুষ সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারবে। অতএব, পূজাপার্বণে তামসিকতা পরিত্যাগপূর্বক শুদ্ধ-সাত্তিকভাবেই পূজা উদ্যাপন করা উচিত। 

●মূর্তি বিসর্জন

এ ব্যাপারে শ্রীমদ্ভাগবতে (১১/২৭/১৩-১৪) বলা হয়েছে- “সমস্ত জীবের আশ্রয় ভগবানের বিগ্রহ দুইভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন- ক্ষণস্থায়ী অথবা স্থায়ী। স্থায়ী বিগ্রহকে আহ্বান করে আনার পর তাঁকে আর বিসর্জন দেয়া যায় না। কিন্তু ক্ষনস্থায়ী বিগ্রহকে আহ্বান করা ও বিসর্জন দেয়ার সুযোগ থাকে।” পূজা সাধারণত দুইভাবে হয়ে থাকে। একটি নিত্য পূজা, অন্যটি নৈমিত্তিক পূজা। ভক্তরা ভগবানের বা দেবদেবীর শ্রীবিগ্রহে নিত্য অর্থাৎ প্রতিদিন যে পূজা অর্চনা করেন, তা নিত্যপূজা। আবার, যখন কোনো বিশেষ নিমিত্তে বা তিথিতে ঘটে বা মূর্তিতে দেব-দেবীকে আহ্বান জানানো হয়, তাকে বলা হয় নৈমিত্তিক পূজা। নিত্যসেবার বিগ্রহ কখনো বিসর্জন দেয়া যায় না। কিন্তু নৈমিত্তিক সেবার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তিথি শেষে দেবী ঐ বিগ্রহ থেকে অপ্রকট হন এবং তাঁর বিগ্রহকে জলে বিসর্জন দেয়া হয়। তবে অবশ্যই যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম সহকারে বিসর্জন দেয়া উচিত।


*** মদ্যপ যুবক, টিকটক স্টার এবং ভন্ড নেতাদের থেকে মূর্তি কে বাঁচানোর চেষ্টা করুন। মাতালদের মদ থেকে অতিভক্তি বা অশ্রদ্ধা দুটোই জন্মাতে পারে। তারা এসব অসচেতনভাবে করে ফেলে। কিন্ত টিকটক স্টার এবং ভন্ড নেতাদের কোনো হুস থাকে না। তারা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সমস্ত কিছুই করতে পারেন। তাই এদেরকে মূর্তি থেকে দূরে রাখা দরকার। 

Popular posts from this blog

Déjà Rêve: স্বপ্ন যখন বাস্তব

 Déjà Rêve: স্বপ্ন যখন বাস্তব ↓ স্বপ্ন আমাদের মস্তিষ্কের সৃষ্ট কিছু চিত্র বা গল্প যা আমরা ঘুমের ভিতর মনের অবচেতনে দেখি। ঘুমের যেকোন পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি। তবে সাধারণত ঘুমের REM (rapid eye movement) পর্যায়ে আমরা বেশি স্বপ্ন দেখি কারণ তখন আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি সচল থাকে। "দেজা রেভে" হল আপনি যা আগে কখনো স্বপ্ন দেখেছেন তা পুনরায় বাস্তবে দেখা। এর মানে, আপনি বর্তমানে যা চোখের সামনে দেখছেন তা একটি স্মৃতি এবং আপনি আগে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটার অনুরূপ কিছু বাস্তুবে দেখাকে দেজা রেভে বলে। অনেকেই মনে করেন যে দেজা রেভে হলো দেজা ভ্যূ এর বিপরীত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেজা রেভে হলো লুসিড ড্রিমিং এর বিপরীত এবং দেজা ভ্যূ এর অনুরূপ। ২০১৮ সালে ব্রেইন স্টিমুলেশন গবেষকরা বলেন যে দেজা রেভে সাধারণত আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা না বুঝার জন্য হতে পারে। ফরাসি দলটি দেজা রেভে এর উপর স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য আরো পরীক্ষানিরীক্ষা করতে থাকেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তারা দেখতে পান যে ১৯৫৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেজা রেভে হওয়া সবাই আংশিকভাবে মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলো। সাধারণত মৃগী রোগীদের চিকিৎসায় ইলেকট্রিক ব্র...

বাংলার বারুজীবী বৃত্তান্ত

একসময় পান সুপারি দিয়ে নেমন্তন্ন করার প্রথা ছিল গ্রাম বাংলায়। তারপর ভোজের শেষে মুখুশুদ্ধি হিসেবেও পানের ব্যবহার ছিল তখন ।পান রাঙ্গা ঠোঁট ছিল আজকের সুন্দরীদের লিপস্টিক এর বিকল্প। আর এই পানের চাষ ও বিক্রির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বলা হতো বারুজীবি বা বারুই। পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া ,হুগলি ও বীরভূম জেলার সদর শহর সিউড়িতে রয়েছে বারুইপাড়া ।এছাড়া দুই মেদনীপুর সহ অন্যান্য জেলাতেও কমবেশি এই সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। একেবারে নিরীহ শান্ত সৌম্য ভীতু প্রকৃতির সম্প্রদায় ।তবে শৈল্পিক চিন্তাধারা বিশেষভাবে ফুটে ওঠে এই সম্প্রদায়ের। উৎপত্তি - বারুজিবী জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে একটি প্রচলিত লোককথা রয়েছে ।সেখানে বলা হয়েছে এক শিব ভক্ত ব্রাহ্মণ ছিলেন ।তিনি প্রতিদিন শিব পূজা করতেন। কিন্তু, তার আরো অনেক কাজ ছিল ।যেমন যেমন পান চাষ, কাপড়বোনা প্রভৃতি।ব্রাহ্মণের বেশিরভাগ সময় চলে যেত ওই কাজে।তারপর কোন এক সময় পেলে শিবের মাথায় দুই একটি ফুল ছুঁড়ে কর্তব্য সারতেন। এসব দেখে শিব ঠাকুর তাকে আন্তরিকভাবে শুধুমাত্র তার পূজা করতে বললেন। এবং আরো জানিয়ে দিলেন তা করলে তার কোন অভাব থাকবে না। কিন্তু, ব্রাহ্মণ সে ...

হিন্দু বিরোধী, বৈষম্যমূলক OBC আইন

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসে। আর তারপরই রাজ্যের তথাকথিত পিছিয়ে পড়া (?) মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কল্পতরু হয়ে ওঠেন মমতা ব্যানার্জি। মুসলিমদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন। আর সেই সময় চুপিসারে ২০১২ সালে পাস হয়ে যায় একটি আইন- “ The West Bengal Backward Classes (Other than Scheduled Castes and Scheduled Tribes) (Reservation of Vacancies in Services and Posts) Act, 2012,”  🔴কি ছিল সেই আইনে? আইন অনুযায়ী OBC ( Other Backward Classes ) কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়; OBC-A এবং OBC-B । আর এইভাবে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ঢালাও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই সংরক্ষণ দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের কোটার ভাগ কেটে। এখানে উল্লেখযোগ্য, OBC-তে হিন্দুরা যে সংরক্ষণের সুবিধা লাভ করতেন, তা পিছিয়ে পড়ার মাপকাঠিতে। তাছাড়া, সংরক্ষণ তালিকায় তাদের জাতির সঙ্গে হিন্দু কথা লেখা থাকতো না। কিন্তু OBC-A এবং OBC-B ক্যাটাগরিতে  যাদের পিছিয়ে পড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তাদের জাতির পাশে পরিষ্কার ‛মুসলিম’ কথা...