Skip to main content

মহিলা থেকে পুরুষ এটাও সম্ভব?

শুনে একটু অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, কিন্তু এ ঘটনা অবশ্যই সম্ভব এবং মেডিকেল সায়েন্স এ জেনেটিক্সের ভাষায় এর খুব সুন্দর ব্যাখাও আছে। কিন্তু কিছু কিছু অন্ধবিজ্ঞানীর চিল্লানির ঠেলায় এটা শোনা যায় না। কিন্তু তার আগে, হইচই থামিয়ে একটা গল্প কিন্তু শুনতেই হবে!!
(আমরা কিছু হার্ডকোর মেডিকেল টার্ম নিয়ে কচকচি করবো, সেই মতেই পড়বেন) আজব এক শহর, নাম তার আজবনগর। আজবনগরে কারো মন ভাল নেই। কেউ ঘুমাতে পারছে না, খেতে পারছে না, রাজ্যপাট যাচ্ছে রসাতলে। কারণ কি? কারণ হল, রাজ্যে কন্যাশিশু জন্মাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যেই না তারা পিউবার্টিতে (বয়ঃসন্ধিতে) আসছে, ওমনি তাদের ভেতর দেখা যাচ্ছে ছেলেদের বৈশিষ্ট্য। তাদের দাড়ি উঠে যাচ্ছে, কন্ঠস্বর হচ্ছে ভারী, বুক সমান হয়ে যাচ্ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে লোমের আভাস। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের ফিমেল জেনেটেলিয়া গঠন পাল্টে সেটা রূপ নিচ্ছে মেল জেনেটেলিয়ায়। কেউ বলছে পৃথিবীর ধ্বংস উপস্থিত, কেউ বলছে কারো অভিশাপ। ডাক্তার এলো ইরান-তুরান থেকে, ডাক্তার এলো পঞ্চ নদী পাড়ি দিয়ে, কেউ দিতে পারলো না সমাধান কোনো সমাধান, ফিরে গেলো নত শিরে।

কিন্তু একদিন, ঢাকা মেডিকেল থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ডাক্তার এলেন আমাদের শহরে, শুরু করলেন পর্যবেক্ষণ। রক্ত নিলেন সিরিঞ্জ ভরে, রাসায়নিক এর সাথে বিক্রিয়া করালেন। সারারাত ডুবে রইলেন বই এর সমুদ্রে। নিন্দুক লক্ষ্মীছাড়া (যে খুব সম্প্রতি হালকা পড়তে শিখেছে) রটাইলো, এও বুঝি গেলো। কিন্তু না, সবার মুখে ছাই দিয়ে ডাক্তার সভা ডাকলেন, তিনি রোগটা ধরতে পেরেছেন। সেই সভায় অন্যদের সাথে আমিও ছিলাম, আর থাকবো নাই বা কেন? আমি যে ছাত্র ডাক্তার।

আমাদের সবার শরীরেই ক্রোমোজোম আছে, জানা কথা। যারা পুরুষ, তাদের থাকবে XY ক্রোমোজোম, আবার যারা নারী, তাদের থাকবে XX ক্রোমোজোম। এখন, আমাদের রোগীরা সবাই কিন্তু জন্মগত পুরুষ!

সভায় হট্টগোল শুরু হল, কেন কেন, এরা জন্মের সময়, স্পষ্ট যখন লিঙ্গ যাচাই করা হল, মেয়ে হিসেবেই তারা জন্ম নিয়েছে। থামিয়ে দিলাম হট্টগোল, কারণ রহস্য এখনো বাকি! আমাদের রোগীরা কিন্তু জন্মগত ভাবে পুরুষ। এদের গোনাডও রয়েছে। কিন্তু ক্রোমোজোম এর মিউটেশন এর ফলে এরা জন্ম নিয়েছে নারী ফিনোটাইপ হিসেবে ( ফিনোটাইপ মানে হল, বাহ্যিক ভাবে দেখতে কেমন সেটা)। অনেক ছোটবেলায়, যখন সবেমাত্র তারা জন্ম নিয়েছে, এই জিনের খেলায় তাদের দেহে একটা হরমোন এর অভাব ছিল, যার পোশাকি নাম dihydrotestosterone (DHT)। এই হরমোনের এতই অভাব ছিল যে, তাদের ভেতর পুরুষ বৈশিষ্টের প্রকাশ ঘটেইনি, উল্টো স্ত্রী হরমোন এই সুযোগ নিয়ে, বাচ্চাদের ভেতর স্ত্রী বৈশিষ্ট্য এর প্রকাশ ঘটিয়েছে। ফলে, যখনই আমরা ফিনোটাইপ অ্যানালাইসিস করতে গিয়েছি, দেখেছি এরা সব মেয়ে শিশু। এদের মেয়েদের মত যৌনাঙ্গ আছে, অধিকাংশের ঠিকমত সেটা বোঝা যায় না, সেটাকে বলে ambiguous genitalia, এরা বড়ও হয় মেয়ে হিসেবে। গোল বাধে অন্য জায়গায় এসে।

বয়ঃসন্ধিকালে এই সব রোগীর দেহে হুট করে টেস্টোস্টেরন এর ক্ষরণ বেড়ে যায়। যার প্রভাবে, স্ত্রী হরমোন দমিত হয়, রোগীদের দেহে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্টের প্রকাশ ঘটতে থাকে। মুখে এদের দাড়ি গজায়, বুক সমান হতে থাকে, মাংসপেশির ঘনত্ব বেড়ে যায়, গলার স্বর ভারী হয়ে যায়। একই সময়ে, টেস্টোস্টেরন এর প্রভাবে এদের penis and scrotum ( পুরুষ যৌনাঙ্গ এবং অন্ডোকোষ) বৃদ্ধি পেতে থাকে, কিন্তু এদের বৃদ্ধি হয় ত্রুটিযুক্ত ভাবে। ফলাফল, চোখের সামনে, ফিনোটাইপ মেয়ে পরিণত হয় ফিনোটাইপ পুরুষে, যদিও এদের জিনোটাইপ কিন্তু XY! দুঃখের বিষয়, এদের রিপ্রোডাকশন এর ক্ষমতা কম, অনেক রোগীর মেডিকেল এসিস্ট ছাড়া সন্তানও জন্ম নেয় না। এই রোগের নাম 5 alpha reductase deficiency কথা হল, হয় কেন এমন ? প্রধান এবং প্রধানতম কারণ হল, SDR5A2 জিনে একটি মিউটেশন। এই জিন সুস্থ অবস্থায়, একটি এনজাইম তৈরি করে, যার নাম 5 alpha reductase 2। এই এনজাইমের কাজই হল, androgen তৈরি এবং টেস্টোস্টেরন এর সাথে বিক্রিয়া করে DHT তৈরি করা। কিন্তু যেহেতু মিউটেশন এই কাজে বাধা দেয়, সুতরাং পর্যাপ্ত DHT তৈরি হয় না, জিনোটাইপ পুরুষ কিন্তু ফিনোটাইপ মহিলা জন্ম নেয়।

খুবই বিরল এই কন্ডিশন, ৪৫০০ বাচ্চার ভেতর একটি বাচ্চার ভেতর এই কন্ডিশন দেখা যায়। জেনেটিক্স এবং মেডিকেল সায়েন্স উন্নত হওয়া সত্ত্বেও ২০ থেকে ৪০% বাচ্চার ঠিকমত ডায়নোসিস হয় না, ফলে এই জটিলতা দেখা যায়। পৃথিবীতে পাপুয়া নিউগিনি, সাউদার্ন লেবানন এবং ডোমিকা রিপাবলিক এ এই রোগের প্রকোপ চোখে পড়ার মত ডোমিকান রিপাবলিকেই বেশি, কারণ হিসেবে এই বংশের ভেতর বিয়ে (মামাতো, কাকাতো ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে) কে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

মোটামুটি সেইম আরেকটা রোগ আছে যার নাম টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন। এরা জিনোটাইপ XY, কিন্তু X ক্রোমোজমে ত্রুটির কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হয়।

🖊 Adnan Sami
#sciencebee #science #bee #facts #female #male

Popular posts from this blog

 বর্তমানে রাত্রীকালীন বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা :- ____________________________________ মুসলমান অত্যাচারের কারণে 'রাত্রি কালীন গোপন বিবাহ' রীতির প্রচলন। এসব সত্য জানার সত্ত্বেও এখনও এই রীতি বয়ে নিয়ে হচ্ছে। তার সম্ভাব্য কারণ কি কি হতে পারে? ১| দিনের বেলা সকলে ব্যস্ত থাকে নানা কাজে। কেও স্কুলে, কেও অফিসে কেও বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন। তাই সেই কাজের মাঝে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে হলে মানুষ দুপুরে কাজের শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় সেজেগুজে এসে বিয়ে দেখতে পারে। রাত্রে প্রায় সকলেই বাড়িতে থাকেন। তাই কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করা বিষয়টা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়। ২| এখন বিবাহ একটি পারিবারিক উৎসব নয়। বরং বিবাহ আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। রাতে জমকালো Light Show দেখানো যায়। বাজীর প্রদর্শনী করা যায়। এর সাথে আরও যত রকমভাবে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করা সম্ভব সবরকম চেষ্টাই করা হয়। কিন্ত দিনে এই সমস্ত ঘটনার Prime Focus একজনের উপর পড়া সম্ভব নয়, তাই রাত্রে। ৩| সামাজিক দৃষ্টিকোণ: বর্তমানে দিনে বিবাহ দেওয়াকে দারিদ্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ...

ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার তত্ত্বের Propaganda Vs Reality

ভারত বাংলাদেশ আর পাকিস্তান মিলে প্রায় 50 কোটি মুসলিম বাস করে। কিন্তু, এতো মুসলিম তো আরবেও নেই। তাহলে এতো মুসলমান এলো কোথা থেকে? অন্য ধর্মের লোক এতো দ্রুত হারে বাড়ছে না কেনো? অন্য ধর্মের 50 কোটি লোক হলোনা কেনো ? Communist আর secular দের বক্তব্য এরা হিন্দুই ছিল, কিন্তু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে আর মুসলিমদের ধর্মের উদারতার কারণে জাত-পাতহীনতার কারণে এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এরা মুসলিমদের দান-ধ্যানের নীতি, সুফি_সন্তদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত হয়ে "ইসলাম" ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তত্ত্ব  Communist রা হিন্দু সমাজকে দুইভাগে ভাগ করেন-- 1. উচ্চ বর্ণ  2. নিম্ন বর্ণ সমাজের সবচেয়ে ভক্তিবান মানুষ হলো তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষরা। তাদের কাছে ধর্মই সব। তাঁরা সব করতে পারেন কিন্তু ঠাকুর কে অবহেলা করেন না। তাঁরা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের জন্যেই ধর্মান্তরিত হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন কিভাবে❓ এটা তো গেলো পুরোনো যুগের কথা.... এবার এখনকার কথা বলি.... আচ্ছা বলুন তো, আমরা আমাদের পারিবারিক সূত্রে বা বন্ধুদের সূত্রে প্রায় প্রতিদিন নানান রকম খবর শুনি। যেমন- কারোর বিয়ে হয়েছে, কার...

বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথালয় এর সংযুক্তিকরণ

আমি কিছু ছোট ছোট old age home এবং orphan home এ গেছি এবং সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে বৃদ্ধ মানুষগুলো তাঁদের পরিবারের ছোটো-ছোটো নাতি-নাতনীদের মিস করেন। আবার অনাথালয়ের orphan দের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে তারা যদি দাদু ঠাকুমাদের মত কাওকে পেত, যারা তাদের একটু গল্প বলবে, মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আদর করবে তাহলে তারাও হয়ত অনেকটা ভালো থাকত। তাই আমার মনে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম ও orphan home যদি একই ছাদের নীচে করা সম্ভব হয় তাহলে ওইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার যে কষ্ট, সেটা সামান্য হলেও লাঘব হবে। এবার আমি এটা নিয়ে কতটা ঠিক ভেবেছি বা এটা ইমপ্লিমেন্ট করা কতটা সম্ভব বা তার প্রতিবন্ধকতার জায়গা গুলো আমি সম্পুর্ন ওয়াকিবহল নই। সম্পূর্ণ একটা ইমোশনাল ভাবনা থেকে এটা আমি ম্যাডামকে জানিয়েছি। ম্যাডাম বা ডিপার্টমেন্ট এ যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তাঁদের সবার পর্বত সমান অভিজ্ঞতা। যদি তাঁরা এই ভাবনার মধ্যে কোনো পজিটিভ দিক আছে বলে মনে করেন এবং প্রাকটিক্যাল গ্রাউন্ডে এটা ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব মনে করেন এবং এক ছাদের তলায় old age home এবং orphan home তৈরী করা...