Skip to main content

সিঁদুরের উৎপত্তি প্রসঙ্গে

সিঁদুরের উৎপত্তি প্রসঙ্গে নারীবাদী বিশেষতঃ বামপন্থী গবেষকরা বলেন প্রাচীনকালে নারী যখন পিতৃতন্ত্রের হাতে পুরুষের_সম্পত্তি হয়ে পড়ল তখন কোনো নারীকে অধিকার করার পর পুরুষ ধারালো পাথর বা ধাতু দিয়ে তার কপালে ক্ষত চিহ্ন এঁকে দিত। সেই রক্তাক্ত ক্ষত পরে সিঁদুরে রূপান্তরিত। এরকম ক্ষত চিহ্ন সহ কিছু কঙ্কাল পাওয়া গেছে।

কিন্তু, এ বক্তব্য খুব জোরালো প্রতিষ্ঠিত হয় না। কঙ্কাল পাওয়া যেতেই পারে। কোনো আদিম গোষ্ঠী হয়ত অন্য গোষ্ঠীর নারীদের বিজয়ের পর এই কাজটা করত। কিন্তু তার সঙ্গে হিন্দু সিঁদুরকে সুনিশ্চিত মিলিয়ে দেওয়া যায় না। কারণ তাহলে পৃথিবীর আরো বহু জায়গায় অন্য সভ্যতাতেও ঐ ধারা বাহিত হত ও নারীর এ জাতীয় বিবাহ চিহ্ন থাকত। নারী সর্বত্র পুরুষের হাতে পরাধীন ছিল। কেবল নর্ডিকদেরও যদি দায়ী করা হয়, তাহলেও নর্ডিক কি কেবল ভারতে আছে? অন্যত্রও নেই ? নর্ডিক প্রধান আরো অনেক দেশ আছে। সেখানে হল না কেন ? হল কেবল বৈদিক ভারতে ?

"হিন্দু সংস্কৃতিতে পুরুষকে কোনো বিবাহ চিহ্ন বহন করতে হয় না । হয় নারীকে। এই একপেশে প্রথা সৃষ্টির কারণ প্রথাটা প্রাচীন। সে যুগে সাম্য আশা করা যায় না।" -এটাই বামপন্থীদের যুক্তি।

সেই প্রাচীন সমাজে কেবল নারীকে বিবাহ চিহ্ন বহন করানোর সম্ভাব্য কারণ একাধিক। সমাজ এক সময়ে ছিল মাতৃতান্ত্রিক। নারী ছিল যৌন স্বাধীন। বিবাহ প্রথা ছিল না। পরে সম্পদ সৃষ্টির পর যখন পিতৃতন্ত্র ক্ষমতা দখল করল তখন উত্তরাধিকারের স্বার্থে বিবাহ প্রথা সৃষ্টি করে নারীকে যৌন পরাধীন করা হল। কোনো এক পুরুষের নির্দিষ্ট নারী বলে চিহ্নিত করা হল। মুক্ত নারীকে সমাজের সামনে বিশেষ কারোর নির্দিষ্ট চিহ্নিত করতে চিহ্ন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাতে সামাজিক অনর্থ ঠেকানো যায়। এছাড়া যৌন স্বাধীন বহুগামী নারীর শরীরে চিহ্ন এঁকে তার চেতনায় প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যে সে আর বহুগামী নয়। কোনো এক পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট। স্বামীর মঙ্গল কামনা করতে করতে রোজ সিঁদুর পরতে পরতে তার চেতনা যাতে একগামী হয়ে পড়ে।

তবে এ কারণ দুটোও খুব জোরালো হয় না। কারণ প্রতীক এঁকে না অনর্থ ঠেকানো যায়, না কাউকে একগামী করা যায়। আর সে প্রতীক মাথার বদলে কপালে লম্বা করে কাপালিকদের মতও আঁকানো যেত। তাতে আরো বেশি নজরে পড়ত। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যত্রও এ প্রথা থাকতে পারত। যে কারণটা সব থেকে জোরালো হয় তা হচ্ছে জ্যোতিষ ও ফিমেল বায়োলজি-

সিঁদুর -এর ইতিহাস অতি প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে এটি স্বামীর দীর্ঘজীবন বয়ে আনে বলে বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করেন। এর রঙ লাল, কারণ এটি শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। হিন্দু বিবাহের সময়ে একজন নারীর প্রথম কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয়। বৈদিক ভারত ভীষণ ভাবে জ্যোতিষ ও ফলিত জ্যোতিষে উন্নত ও নির্ভর ছিল। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী লাল রঙ মঙ্গল গ্রহের প্রতীক। মঙ্গল গ্রহ একাধারে যেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ, শৌর্য বীর্য, সাহস, ভূ সম্পত্তির প্রতীক, তেমনই শারীরিক শক্তি, সুস্থতা, রক্তপাত, রক্তজনিত ব্যধি, অপারেশন, নারীর যৌন ক্ষমতা, উর্বরতা ক্ষমতা ইত্যাদির প্রতীক।

মেয়েদের ঋতুস্রাব থেকে সন্তান ধারণ ও প্রসব সবই করতে হয়। এ সবের সঙ্গে রক্ত বিষয়টি জড়িত। এসব কারণে রক্তাল্পতায় ভুগতে হয়। এছাড়া স্বামীকে যৌন তৃপ্তি দান থেকে সন্তান উৎপাদনের সঙ্গে সাংসারিক সুখ শান্তি জড়িত। নারীর মঙ্গল শুভ হলে সাংসারিক স্থাবর সম্পত্তি অটুট থাকারও লক্ষণ।

তাই এরকম অনেক কিছু মিলিয়ে মঙ্গলকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বিবাহিতা মেয়েদের মাথায় লাল সিঁদুর (মাথায় কারণ কালপুরুষের মাথা মেষ রাশি যা মঙ্গল গ্রহের ঘর) কপালে লাল কুমকুম, হাতে লাল পলা ও পায়ে লাল আলতা পরানোর রেওয়াজ তৈরি হয়। একই সঙ্গে চন্দ্র ও শনিকে শুভ করতে হাতে শঙ্খ বা শাঁখা ও লোহার নোয়া পরানো হয় যাতে ঐ তিন গ্রহের শুভত্বে মেয়েদের মতি স্থিরতা, বিবেচনা বোধ এবং রজঃ ও প্রসব শুভ হয়।

বামপন্থীরা যে হিন্দু ধর্মের অপমান করেছে ও করছে তার প্রমাণ এই লেখাটি। Wikipedia-তে সিঁদুর সম্পর্কে বেশ কিছু খারাপ তথ্য বামপন্থীরা দিয়েছে।

Popular posts from this blog

ছেলেরা কেন দিনদিন 'বৌদিবাজ' হয়ে উঠছে?

সমাজটা খুবই খারাপ দিকে যাচ্ছে। ছেলেরা এখন বৌদিবাজ হয়ে উঠেছে! তারা একবার করে প্রেমে ছেঁকা খাওয়ার পর আর অন্য কোনও প্রেমিকা জোটায় না, বৌদিদের সাথে গল্প করে। কারণ - ১| ধোঁকা খায় না ২| হৃদয়ে আঘাত লাগে না ৩| Break up 💔 বলে কিছু থাকে না ৪| অনেকটা Stunt বাজীর মতো, মাথায় কোনো চাপ নেয়ার দরকার পরে না  আর একটা বিষয় হলো এখন বেশিরভাগ ছেলে পড়াশোনা দিকে ব্যস্ত। তাই তাদের হাতেও বেশি সময় থাকে না। আবার বৌদিদের হাতেও বেশি সময় সীমিত। তাই একটা Understanding বজায় থাকে। আরেকটা জিনিস হল নতুন প্রেমিকারা যেরকম নানারকম চাপ দেয়। বৌদীরা অনেকটা বোঝে ব্যাপারগুলো। যেমন- ফাঁকা পকেট, কম সময়, Relation Public না করা... এসব জিনিস। সেই কারণে তারা এতটা চাপ দেয় না। অল্পবয়সী মেয়ের একটু জেদি হয়। তাই তারা অকারণেই ঝগড়া করে যা এমনিতেই চাকরি আর ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত ছেলেদের ভালো লাগে না। তাই তারা বৌদিদের দিকেই ঝোঁকে। বিয়ে তো অবশ্য ভালো কোনো মেয়ে দেখেই করবে, তার আগের সময়টা অন্য দিকে দেয় - বৌদিদের সাথে আড্ডা মারে। বৌদিদের সাথে কথা বলে আর কিছু হোক বা না হোক মানসিক শান্তি আছে। আমার বৌদিবাজ বন্ধুদের জন্য 💖

বলি প্রসঙ্গে আমার মতামত

ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এর চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better, তাহলে বলতে হয় আপনার জীবন আর মৃত্যুর sence নেই। কেন ছাগলের মৃত্যুটাই মৃত্যু? চালকুমড়ো বা আঁখের মৃত্যুটা মৃত্যু নয় কেন? আপনার যদি জীবন আর মৃত্যুর সম্বন্ধ প্রকৃত জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনটি ক্ষেত্রেই আপনি সমান দুঃখ পেতেন। কিন্ত আপনার মনে হয় ছাগল বলি দেওয়ার চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better।  আপনার এই প্রকৃতি দেখে বলতে হয়, জীবন বাঁচানো আপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং আপনি রক্তকে ভয় পান, অস্ত্র কে ভয় পান। আপনার বাস্তবিক বোধ থাকলে আপনি অস্ত্রের আঘাতে চালকুমড়ো বা আঁখের এবং ছাগ তিনটি বলির ই বিরোধীতা করতেন। কারণ তিনটির প্রকৃতিই একই রকম, এই তিনটে থেকেই অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হতে পারতো। তাই তিনটির হত্যাই একই রকম ক্ষতি করে। কিন্ত, শুধুমাত্র ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এটি মানুষের হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমরা কি সত্যিই অহিংস?  আমাদের মায়েরা প্রতিদিন জ্যান্ত মাছগুলো দুহাতে ধরে বঁটিতে ঘচাং করে একবারে জ্যান্তই কেটে ফেলেন। শহরের মাছ-মাংস বিক্রেতারাও একইভাবে কাটেন। তখন কি সেটা নৃশংসতা নয়? কেন আমরা ব

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা। 💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।  🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জ