Skip to main content

মিথ্যচারের বিরুদ্ধে যখন মিথ্যচারকেই অস্ত্র করা হয়

ইতিহাস বইতে সাভারকরের বুলবুলি পাখির পিঠে চড়ে জেল থেকে ফিরে আসার কবিতার মতো বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যেও অনুগামীদের উত্তর প্রস্তুত। 


*[সাহিত্যের পাঠ্যপুস্তকে সাভারকরের বুলবুলি পাখির পিঠে চড়ে জেল থেকে ফিরে আসা কবিতা লেখা হলে সেটা শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে অবমাননাকর হয়ে যায়। অর্থাৎ এই লজিকে "একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি"ও পাঠ্যপুস্তকে রাখা অনুচিত" মেনে নিলাম বুদ্ধিচিবিগণ।

এবার একটা কথা বলুন, যান এই ধরণের ঢপগুলো লেখা হতো যে 
1) আঠেরোটা সেপাই নিয়ে বখতিয়ার বাংলা দখল করেছে,
2) সুফীরা পরধর্মসহিষ্ণু ছিল, 
3) আওরঙ্গজেব মন্দির তৈরীর জন্য দান করতো,
4)আকবর মহান সম্রাট ছিল,
5) গান্ধী কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট পরিচালনা করেছিল
6) তিতুমীর স্বাধীনতা সংগ্রামী
7) কমিউনিস্ট পার্টি নৌবিদ্রোহে নেতৃত্বে দিয়েছিল
৪) সাড়ে পাঁচবছরের শাসনের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনবছর যুদ্ধ করে বেড়ানো শেরশা ষোলশোকিলোমিটার গরান্ড টাঙ্ক রোড তৈরী করেছিল
9) শশাঙ্ক নালন্দা ধ্বংস করেছিল 
10) বখতিয়ার নালন্দাটাকে দূর্গ ভেবেছিল
11) সিরাজ বাঙলার শেষ স্বাধীন নবাব 
12) পলাশীর যুদ্ধের পর বাঙলায় দুর্গাপূজা চালু হয় 
13) সিরাজ বাঙালি ছিল
14) ইন্ডিয়াগেটে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম লেখা আছে
15) রোমিং থেকে রাম এসেছে
16) হুদুর নামে একখানা প্রাচীন মহান রাজাছিল, তার আবাস নিকি জঙ্গলমহলে, সেইনাকি মহিষাসুর, 
17) রাবণ দলিত ছিল
18) শাহজাহান তাজমহল বানিয়েছিল (বোর্নিয়ের দেখতে পায়নি)
19) খিলাফত আন্দোলন স্বাধীনতার লড়াই ছিল 
20) চরকা কেটে আর না খাবার নাটক করে স্বাধীনতা এসেছিল...ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন বোধহয় সেটা রূপকথা না হয়ে ইতিহাস হয়ে যায়। বাইদ্য ওয়ে ঐগুলো কিন্তু সাহিত্য নয়, ইতিহাস বইতেই লেখা হয়ে এসেছে.

আরো কিছু ঐতিহাসিক সত্য অর্থাৎ ঢপেরচপ গুণীজনের আদেশে যুক্ত হৈল

21) আর্যগণ বহিরাগত সাড়ে চারহাজারের পুরনো নগরসভ্যতা বহিরাগত বানজারাদের হাতে ধ্বংস হয়ে গেল, আর তারপরেই বহিরাগত বানজারা আর্যদস্যুরা চাষবাস করতে শুরু করল, সভ্যতা বানাল, বইপত্র লিখল, প্রথম বইটাই হল ঋগ্বেদ

22) আলিবর্দি নিজের রাজত্বের তিনভাগের একভাগ আর বার্ষিক চৌথ দিলে কি হবে!! হুহু বাওয়া! বর্গীদের আলিবর্দিই হারিয়েছিল.... ]


অর্থাৎ, মিথ্যচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র সেই মিথ্যচারই, কল্পনার বিরুদ্ধে কল্পনা, গালগল্পের বিরুদ্ধে গালগল্পই অস্ত্র। ইতিহাস বইতে ভুল ছিল। সেই ভুল সংশোধন করার জন্যই এই নতুন বই লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সেই নতুন বইটিও যদি সত্যের পরিবর্তে গালগল্পে ভরা কল্পিত কাহিনীতে ভরা থাকে তবে ইতিহাসের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয় বৈকি! হ্যাঁ, ইতিহাস নতুন করে লেখা হচ্ছে। সত্যিই নতুন ইতিহাস তৈরী হচ্ছে বৈকি। সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামে সঙ্ঘের অবদান, সঙ্ঘীদের অবদানকে অনেকটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখাতে চাইছেন। আর সেই কাছে কিছুটা fact থাকলেও গালগল্পেরই আশ্রয় নিতে হয় বৈকি।

সঙ্ঘের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা, সরাসরি ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করা, মহাত্মা গান্ধীর হত্যার সাথে যুক্ত থাকা, লবণ সত্যাগ্রহ নিয়ে সঙ্ঘের অংশগ্রহণ না করা প্রভৃতি অভিযোগ এবং সেই অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে সঙ্ঘ কে নিষ্কলুস প্রমাণ করার চেষ্টা এই ধরনের বিষয়গুলি ইতিহাস বইতে আশ্রয় পেতে চলেছে।

অন্যদিকে সঙ্ঘের ভারত ভাগের বিরোধিতা, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গকে ভারতে ফিরিয়ে আনা, দুই অঞ্চলের স্বাধীনতা প্রভৃতি তত্ত্বও পাঠ্যক্রমে স্থান পেতে চলেছে। এককথায় ১৯২৫ এর পরের ইতিহাস বর্ণিত হবে সঙ্ঘ-কেন্দ্রিক ভাবে।

আমাদের দেশ অলৌকিক বিশ্বাসের দেশ। আমরা অলৌকিক বিশ্বাস করতে খুব ভালোবাসি। কোনো মানুষের সাথে একটু অলৌকিকতা জুড়ে না দিলে আমাদের রাতের ঘুম হয় না। কারণ আমরা অন্ধ পূজায় বিশ্বাসী। আর সেই অন্ধ পূজার জন্য দরকার পড়ে অলৌকিক গল্পের। 

তার তাই আমাদের ভগবানের, অলৌকিক কার্যকলাপে সক্ষম মানুষের শেষ নেই। রাজনৈতিক কারণে সাভারকারকে ভগবান বানাতে তাই প্রয়োজন হয়ে যাচ্ছে অলৌকিক গল্পের। যারা বানাচ্ছে তাদের প্রয়োজন অন্ধ ভক্তের, অন্ধ পূজারীর।

হঠাৎ করে বানানো কোনো গল্প আজকের জেনারেশন হয়ত বিশ্বাস করবে না। হাসাহাসি করবে। কিন্তু পরবর্তী কালে কোনো এক জেনারেশন এসবই বিশ্বাস করবে। এবং যুক্তি হীন ভাবে সেগুলোই মানবে। সেই প্রচেষ্টায় করা হচ্ছে এখানেও।

এবং পৃথিবীর সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তি, ধর্মপ্রচারক যাদের যাদের বিষয়ে অলৌকিক গল্প চালু আছে সবগুলোই তৈরী করা হয়েছে নির্দিষ্ট কোনো স্বার্থে। অসংখ্য অন্ধ ভক্ত বানানোর প্রয়োজনে ।

আমাদের পৃথিবী প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। সবার জন্যে একই নিয়ম প্রযোজ্য। হঠাৎ করে কেও জলের উপর হেঁটে বেড়াতে পারে না বা বুলবুলির পিঠে করে প্রাত ভ্রমনে যেতে পারে না। সব অলৌকিক গল্পের প্রচারের পিছনেই থাকে কোনো একটা স্বার্থ, মানুষকে ভড়কে দিয়ে অন্ধ ভক্ত বানানোর, অন্ধ আনুগত্য তৈরী করার উদ্দেশ্য।

Popular posts from this blog

বাংলার বারুজীবী বৃত্তান্ত

একসময় পান সুপারি দিয়ে নেমন্তন্ন করার প্রথা ছিল গ্রাম বাংলায়। তারপর ভোজের শেষে মুখুশুদ্ধি হিসেবেও পানের ব্যবহার ছিল তখন ।পান রাঙ্গা ঠোঁট ছিল আজকের সুন্দরীদের লিপস্টিক এর বিকল্প। আর এই পানের চাষ ও বিক্রির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বলা হতো বারুজীবি বা বারুই। পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া ,হুগলি ও বীরভূম জেলার সদর শহর সিউড়িতে রয়েছে বারুইপাড়া ।এছাড়া দুই মেদনীপুর সহ অন্যান্য জেলাতেও কমবেশি এই সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। একেবারে নিরীহ শান্ত সৌম্য ভীতু প্রকৃতির সম্প্রদায় ।তবে শৈল্পিক চিন্তাধারা বিশেষভাবে ফুটে ওঠে এই সম্প্রদায়ের। উৎপত্তি - বারুজিবী জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে একটি প্রচলিত লোককথা রয়েছে ।সেখানে বলা হয়েছে এক শিব ভক্ত ব্রাহ্মণ ছিলেন ।তিনি প্রতিদিন শিব পূজা করতেন। কিন্তু, তার আরো অনেক কাজ ছিল ।যেমন যেমন পান চাষ, কাপড়বোনা প্রভৃতি।ব্রাহ্মণের বেশিরভাগ সময় চলে যেত ওই কাজে।তারপর কোন এক সময় পেলে শিবের মাথায় দুই একটি ফুল ছুঁড়ে কর্তব্য সারতেন। এসব দেখে শিব ঠাকুর তাকে আন্তরিকভাবে শুধুমাত্র তার পূজা করতে বললেন। এবং আরো জানিয়ে দিলেন তা করলে তার কোন অভাব থাকবে না। কিন্তু, ব্রাহ্মণ সে ...

বিবাহ

বাঙ্গালি ব্রাহ্মণ সমাজে পাঁচটি শাখা রয়েছে — রাঢ়ী, বারেন্দ্র, বৈদিক, সপ্তশতী ও মধ্যশ্রেণী।  বাঙ্গালি কায়স্থ সমাজে রয়েছে চারটি শাখা — উত্তর রাঢ়ী, দক্ষিণ রাঢ়ী, বারেন্দ্র ও বঙ্গজ। এই সকল বর্ণ এবং তাদের শাখা ও উপশাখাগুলির মধ্যে বিবাহ প্রথায় দুটি বিভাগ দেখা যায় — বৈদিক ও লৌকিক।  লৌকিক প্রথাগুলি মেয়েলি আচার। এই কারণে এগুলি ‘স্ত্রী আচার’ নামে পরিচিত। বৈদিক আচারে সাম, যজুঃ ও ঋক্ বেদত্রয়ের অনুসরণকারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহ প্রথায় আবার সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। হিন্দু বিবাহের বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অপরিহার্য হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম (লাজ বা খই দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান), সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ), ধৃতিহোম (ধারণ করার অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ) ও চতুর্থী হোম। এছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন, ধ্রুব নক্ষত্র দর্শন, শিলারোহণ ইত্যাদি কয়েকটি বৈদিক প্রথাও। বৈদিক প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ। বাঙালি হিন্দু বিবাহের লৌকিক আচার বহুবিধ। এই প্রথাগুলি বর্ণ, শাখা, উপশাখা এবং অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়।  "বিবাহ”  শব্দ...
লাদাখে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে কাশ্মীরে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মণিপুরে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মেঘালয়ে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে নাগাল্যান্ডে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মিজোরামে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে লাক্ষাদ্বীপে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে অরুণাচলে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে ভারতবর্ষের মোট 9 রাজ্যে হিন্দুদের অস্তিত্ব ক্ষীণ 200 জেলা থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা পলায়মান এরপরেও এরা হিন্দুরাষ্ট্রের সুখস্বপ্নে বিভোর! এরপরেও বাতেলাবাজদের বাতেলা বন্ধ হয় না!  এরপরেও বলবে, হিন্দুদের অস্তিত্ব নাকি ধ্বংস হবে না!