Skip to main content

রাক্ষসী টেরিজা ও ধর্মান্তরনের মিশন

একজন বিতর্কিত মহিলা হিসেবে টেরিজা ও তার প্রতিষ্ঠিত 'দ্য মিশনারিজ অব চ্যারিটি'র (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) ক্রিয়াকলাপ অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। টেরিজার সংঘের সেবার নিম্নমান, বলপূর্বক ধর্মান্তরন ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষাদানের নিন্দা জ্ঞাপন করেছে এবং তাদের সাথে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের সম্পর্ক স্থান পেয়েছে আলোচনায়। টেরিজা গণযোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ছিলেন। অনেকে মনে করেন, ক্যাথলিক চার্চ খ্রিস্টানধর্ম প্রচার ও সমালোচনার মোকাবেলা করতে তেরেসার ভাবমূর্তি ব্যবহার করেছে। বিশ্ববিখ্যাত চিন্তাবিদ জার্মেইন গ্রিয়ার টেরিজাকে 'ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী' বলে সমালোচনা করেছেন। অনেকে তাকে উন্মত্ত উগ্রবাদী, মৌলবাদী তথা ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন যে, তিনি নিজের ধর্মীয় আদর্শ তথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে দুস্থবঞ্চিতদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।


উপনিবেশবাদী ও বর্ণবাদী প্রকল্প


টেরিজাকে এককথায় উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের ধ্বজাধারী বলা যায়। টেরিজা উপনিবেশিত দেশে ধর্মপ্রচারক শ্বেতাঙ্গ নারীদের প্রতিভূ রূপে ক্রিয়ারত ছিলেন যেন তিনি কালো মানুষদের স্বীয় কামনা ও অপারগতা থেকে রক্ষা করতে এসেছেন। 

এখনও উপনিবেশবাদী কুচিন্তা ধারণ করে যাওয়া ইউরো-মার্কিন মিডিয়া মনে করে যে কালো মানুষদের বদলাবার বিশেষ ক্ষমতা শ্বেতাঙ্গদের রয়েছে। অশ্বেতাঙ্গ, কালোরা নিজেরা নিজেদের উন্নতিতে সচেষ্ট হলেও ইউরো-মার্কিন মিডিয়া তার মাঝে কোন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে খুঁজে পায় শিক্ষক বা অভিভাবক রূপে যেন কালোরা নিজেরা নিজেদের উন্নতি করতে অপারগ শ্বেতাঙ্গদের ছাড়া।

টেরিজার কর্ম পশ্চিমা বৈশ্বিক প্রকল্পেরই অংশ যা বুর্জোয়া পাপবোধকে প্রশমন করতে দাতব্য চালিয়ে যায় কিন্তু যে সমাজকাঠামো দারিদ্র্য উৎপাদন করে সেই সমাজকাঠামোকে না বদলিয়ে টিকিয়ে রাখে। অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ভারত থেকে এখনো উপনিবেশিক মানসিকতা দূর হয়নি, তাই সাধারণ মানুষ টেরিজার মতো সাদা মহিলাকে সমালোচনা করতে ভয় পায়।

বলপূর্বক খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণ 


“তেরেসা নিজেই ১৯৯২ সালে স্বীকার করেন, তিনি প্রায় ২৯ হাজার লোককে তাদের মৃত্যুর সময় না জানিয়ে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করান।" অরূপ রায়ের মতে, আসল সংখ্যাটা লক্ষের কাছাকাছি হবে।

টেরিজা সেবা গ্রহণ করতে আসা অসহায় দুঃস্থ মানুষদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হতে চাপ দিতেন। টেরিজার সংঘের 'সবকিছুই ছিল খ্রিস্টান হবার শর্তে' – সে খাবার হোক বা শোবার জায়গা হোক। কোনো দরিদ্র মানুষকে খাবার বা ঔষধ দিয়ে বাঁচালে টেরিজা বলতেন, তুমি বেঁচে আছো প্রভু জিশুর দয়ায়। তিনি খাবার, ঔষধ দিয়ে বাঁচিয়েছেন তোমাকে। এরপর যদি তুমি তাঁর সেবা না করো তবে তুমি অকৃতজ্ঞ। তোমার বেঁচে থাকা পাপ.... এইরকম মানসিক চাপ তৈরী করা হত ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য। 

অর্থসংক্রান্ত কেলেঙ্কারি


অনেক অসৎ ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ তথা গৃহীত অর্থের অস্বচ্ছ ব্যয়ের জন্যও টেরিজা সমালোচিত হয়েছেন। অনেক বড় বড় অনুদান পেলেও তিনি সেবার মান উন্নতিকরণে উল্লেখযোগ্য ব্যয় করেননি। জার্মান পত্রিকা স্টার্ন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী অনুদানের মাত্র ৭ শতাংশ সেবা দানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত, যদিও টেরিজা নিজে বিশ্বের সেরা হাসপাতালে সর্বদা ১ম শ্রেণীর উৎকৃষ্ট চিকিৎসা নিতেন এবং অধিকাংশ সময় সংরক্ষিত বিমানে বিশ্ব পরিভ্রমণে ব্যস্ত থাকতেন। 

ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতে, টেরিজা কুখ্যাত, দুর্নীতিবাজ প্রতারকদের কাছ থেকে বড় বড় অনুদান নিয়েছেন। যেমন, টেরিজাকে এক মিলিয়ন ডলার অনুদানকারী চার্লস কিটিং ঋণ জালিয়াতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে টেরিজা বিচারককে কিটিং-এর চারিত্রিক সদগুণ কীর্তন করে চিঠি দিয়েছিলেন। টেরিজাকে কিটিং-এর ২৫২ মিলিয়ন ডলার ঋণ জালিয়াতির তথ্যপ্রমাণ পাঠানো হলেও তিনি অনুদান ফেরত দেননি।

চিকিৎসা ও সেবার নিম্নমান


ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যাঞ্চেটের সম্পাদক রবিন ফক্স ১৯৯১ সালে কলকাতায় টেরিজার সেবাদান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে চিকিৎসার মানকে অগ্রহণযোগ্য ও অপরিচ্ছন্ন বলে সমালোচনা করেছেন। ফক্স বলেন, চিকিৎসাশাস্ত্রীয় বিদ্যা ছাড়াই টেরিজা ও তার সংঘ রোগীদের সম্পর্কে দেখা শোনা করে এবং তারা নিরাময়যোগ্য ও নিরাময়-অযোগ্য রোগের মাঝে কোন পার্থক্য করে না। ফলশ্রুতিতে নিরাময়যোগ্য রোগীও মৃত্যুর সম্মুখীন হয়। 

আধ্যাত্মিক ভণ্ডামি


টেরিজা মানুষকে ঈশ্বরপ্রেম শিক্ষা দিলেও টেরিজার চিঠিপত্র থেকে জানা যায় জীবনের শেষ পঞ্চাশ বছর তিনি অন্তরের অন্তস্থলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করেননি, ঈশ্বরের অনুপস্থিতে হাহাকার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন যে ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন। তিনি লিখেছেন "কোথায় আমার বিশ্বাস? এমনকি হৃদয়ের গভীরে শূন্যতা আর অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই। যদি ঈশ্বর তুমি থাকো, আমাকে ক্ষমা করো।" টেরিজাকে তাই অনেকে আধ্যাত্মিক ভণ্ডামির অভিযোগ করেছেন।

রোগের মহিমামন্ডন


কলকাতা পৌরসংস্থার প্রাক্তন মহানাগরিক বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য বলেছেন যে কলকাতার দরিদ্র লোকদের উপর টেরিজার কোন উল্লেখযোগ্য কর্ম নেই; টেরিজা রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে রোগকে মহিমাহ্নিত করেছেন বেশি। এসবের কারণ ছিল তার মিশনারীদের লক্ষ্য। তার আসল লক্ষ্য ছিল ধর্মান্তরণ, সেবার নামে অগাধ অর্থ সংগ্রহ করা। তাই রাস্তার অসংখ্য লোককে তুলে না খাইয়ে মেরে ফেলা, ঔষধ না দিয়ে মেরে ফেলা-ই ছিল তাদের কাজ। সহজ কথায় বলতে গেলে মানুষের সেবা নয়, সহজে মৃত্যুর পথ দেখাতেন টেরিজা ও তার সংস্থা। তিনি মৃত্যুকালে জিশুর নাম করার উপদেশ দিতেন, যাতে সহজে মৃত্যু হয়। অসংখ্য মানুষকে জিশুর নামজপ করে সহজ মৃত্যুর পথ দেখিয়েছিলেন তিনি, একটু একটু করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন নিরাময়যোগ্য রোগীকে।


গর্ভপাতবিরোধিতার সমালোচনা


হিন্দু বা অন্য পৌত্তলিক ধর্মকে ছোট করে, শয়তানের ধর্ম বলে চিহ্নিত করে এমন একটি গোঁড়া ক্যাথলিক মধ্যযুগীয় ধর্ম তিনি প্রচার করেছিলেন - যা গর্ভ-নিরোধক অবধি ব্যবহার করতে দেয় না, এমন কী ধর্ষিতা হলেও গর্ভপাতের অনুমতি দেয় না। 

টেরিজার ধর্ষিতাদেরও গর্ভপাত করতে দিতে অনীহা ছিল। কারণ টেরিজা ওইসব বাচ্চাদের সংগ্রহ করে তাদেরকে ধর্মান্তরিত করতে চেয়েছিলেন এবং ধর্মান্তরিত করেছিলেন অনেকাংশে। টেরিজা তার নোবেল ভাষণে বলেন, "গর্ভপাত বিশ্বশান্তির সবচেয়ে বড় শত্রু।" গর্ভপাত অধিকার আন্দোলনকারীরা  টেরিজাকে গর্ভপাত বিরোধিতার জন্য কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। 


গণমাধ্যমে টেরিজা সমালোচনা


১৯৯৪ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক তারিক আলি  ও  ক্রিস্টোফার হিচেন্স টেরিজার ওপর হেল'স এঞ্জেল (নরকের দেবদূত) শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন। ১৯৯৫ সালে হিচিন্স দ্য মিশনারি পজিশন: মাদার টেরিজা ইন থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস (ধর্মপ্রচারক অবস্থান: তত্ত্বে ও কর্মে মাদার টেরিজা) নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। হিচেন্স দেখান যে ক্ষমতাহীনের সাথে ক্ষমতাবানের লড়াইয়ে সবসময় ক্ষমতাবানের পক্ষ নিয়েছেন, যেমন ভোপালের বিপর্যয়ে ইউনিয়ন কার্বাইডের পক্ষ নিয়েছেন, রোনাল্ড রিগানের সমর্থন করেছেন, এমনকি নিকারাগুয়া গিয়ে সন্ডিস্টাদের বিরুদ্ধে টেরিজা সিআইএ-সমর্থিত কন্ট্রাদের সমর্থন দিয়েছেন। ভারতীয় লেখক ও চিকিৎসক অরূপ চট্টোপাধ্যায়, যিনি একসময় টেরিজার সেবাদান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, টেরিজার ধর্মপ্রচারকদলের ক্রিয়াকলাপ অনুসন্ধান করেছেন এবং তার মাদার টেরিজা: দ্যা ফাইনাল ভার্ডিক্ট নামের বইয়ে মাদারের সেবা-পদ্ধতি ও আরও নানা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে গুরুতর কিছু অভিযোগ করেন।


অনেক পত্র-পত্রিকা টেরিজার সেবাময়ী মহীয়সী রূপ কে তুলে ধরে টেরিজাকে মাদার টেরিজা বলেন। কিন্ত তার আসল কার্যকলাপ সম্পর্কে পড়তে লাগলে অনেকেরই রাক্ষসীদের কথা মনে পড়ে, যারা মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটু একটু করে মেরে ফেলতে বেশি পছন্দ করতো। তাই টেরিজাকে মা নয়, রাক্ষসী বলাই বেশি মানায়।

Popular posts from this blog

Dashavatar : 10 Avatars of Bhagwan Vishnu!

1. Matsya Avatar 2. Kurma Avatar 3. Varaha Avatar 4. Narasimha Avatar 5. Vamana Avatar 6. Parashurama Avatar 7. Shree Ram Avatar 8. Shri Krishna Avatar 9. Balarama Avatar 10. Kalki Avatar

Interesting Facts about Bhagwan Shri Ram

Bhagwan Shri Ram is the Seventh Avatar among the Dasavatara of Shri Hari Vishnu Bhagwan Shri Ram is Considered as the oldest Devta Worshipped in Human Form as he was born in Treta Yuga Bhagwan Shri Ram is descendant of Surya Devta as he was born in the Ikshvaku dynasty who was founded by Raja Ikshvaku, Son of Surya Devta. This is why Shri Ram is also called Suryavanshi After defeating the Ravana, As Per Religious Beliefs Shri Ram ruled his kingdom Ayodhya for 11,000 years of complete peace and prosperity As per Epic Mahabharat that once Bhagwan Shiva said that reciting the name of Ram thrice gives the grace equal to pronouncing the names of thousand deities Vishnu Sahasranama lists a thousand names of Bhagwan Vishnu. According to this list, "Rama" is the 394th name of Bhagwan Vishnu Hanuman once fought with Shri Ram to protect Kashi King Yayati, To help the Yayati in the battle, Hanumanji started reciting...

English Poetry, Hindu Culture

The sage is in meditating. He wants well for everyone India is the country of the sage.  Gives value to everyone. A Baul is watching here Flood in the Ajay river His one-string in one hand It's the source of his all shiver. Look at that, look at that,  picture of Bharatmata.  Golden sun will rise again in India.   Explain why excuses lead to eating vegetables. If you want to keep the weight right, eat milk and fruits. Mother, I bow to thee Mother, I bow to thee  . May thee, Bharatmata win The Zhou tree is shaking its head in the storm. The Shrimp loft broken into the ground in the storm. Our India is full of riches with wealth and culture. Bharatmata with her Dhwaj is very beautiful. India is my birthplace, India is my mother.  I will give my life in the service of my mother. Absolute peace in mother's lap,  happiness in mother's lap.  I will not do such a thing  so that my mother will get sad. By hundreds of lotuses Decorated lake. The ...