Skip to main content

বিজেপির পরাজয়ের ভয় কেনো তাড়া করে?

বিজেপির পরাজয়ের ভয় আমাদেরকে তাড়া করে কেনো? কেনো বিজেপির এমন বেপরোয়া মনোভাব? এমন একতরফা একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারণ কি?

অতীতে ধর্ম বাঁচাতে রাজার সেনাবাহিনীতে যোগদান, বর্তমান বিজেপিকে সমর্থন। 

অতীতে- রাজার পরাজয়, ধর্মের পরাজয়। বর্তমান- বিজেপির পরাজয়, হিন্দুত্বের পরাজয়। 

অতীতে- রাজ্যে বসবাসকারী মুসলমানদের প্রতি রাজার কঠোর দমননীতি গ্রহণ না করা। বর্তমানে বিজেপির সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। 

অতীতে রাজার হেরে যাওয়ার ভয়ে রাজার প্রত্যেক সিদ্ধান্ত কে সমর্থন করা, বর্তমানে বিজেপির হেরে যাওয়ার ভয়ে প্রত্যেক মুহুর্তে বিজেপির পাশে দাঁড়ানো। 

অতীতে সমান্তরাল সরকার বা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অনীহা, বর্তমানেও তাই। 

অতীতে হিন্দুদের একটি নিজস্ব সমাজব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক-নীতির নিয়ন্ত্রণের প্রতি অনীহা। বর্তমানের সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা, সাংবিধানিক শাসন, অ-নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থা।

আমাদের মধ্যে সবসময় একটা ভয় কাজ করছে, যেনো বিজেপি ছাড়া হিন্দুদের কেও নেই। বিজেপির পতন যেনো হিন্দুদেরও পতন। অতীতেও এই একইরকম ভয় সমাজের উপর চেপে বসত, যদি রাজা হেরে যায় তাহলে হিন্দুদের হত্যালীলা চলবে। হিন্দুদের এই ভয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজারা যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করতো। 

এইরকম ভয়ের কারণ হল- একধিনায়ক। সাধারণত গণতন্ত্রে রাজাই হলো একমাত্র শাসক। তিনিই সমস্ত হিন্দুদের রাজনৈতিক। আবার তিনিই আমাদের ধার্মিক নেতা। আমাদের ধর্ম টিকে আছে তাঁর ছত্রছায়ায়। আবার তিনিই আমাদের শাসক। তাঁর নিয়মই সর্বমান্য। রাজাই আমাদের সামাজিক নিয়ন্ত্রক, সমাজের নিয়মও তিনিই তৈরী করেন। তাই রাজার বা রাজনেতার পরাজয়ের উপর আমাদের ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি সমস্ত কিছুরই অস্তিত্ব নির্ভরশীল। 

কিন্তু, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজে, সমাজ ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থা, ব্যবসা, খাজনা বা কর আদায় (Tax collection), নিয়ম (আইন) তৈরী, নিয়ম লাগু করা সমস্ত কিছুই থাকে সাধারণ মানুষদের নিয়ন্ত্রণে। তাই রাজার পরাজয় তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ততটা প্রভাব ফেলে না।

 সমান্তরাল সরকারে রাজনৈতিক নেতা হন রাজা, কিন্ত ধার্মিক নেতা হন পুরোহিত। তাই রাজার পতনে রাজনৈতিক শক্তির পতন হয়, সামাজিক ঐক্যের পতন হয়না। কারণ এই এলাকার সমাজ ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সমস্ত কিছুই তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। ফলে দ্রুত পুনরুত্থান ঘটে সাম্রাজ্যের, আবারো নতুন করে অন্য কাওকে সম্রাট নির্বাচিত করা হয়। তাই রাজার পরাজয়ের ভয় অনেকটাই কম কাজ করে।

পরিশেষে একটাই কথা বলতে পারি, যতদিন তুমি তোমার ধার্মিক ও সামাজিক প্রয়োজনীয়তা কে গুরুত্ব দিয়ে একটি পৃথক সমান্তরাল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে না তুলবে ততদিন তোমার ধার্মিক ও সামাজিক অবক্ষয় কেও আটকাতে পারবে না। সবসময়ই রাজার বা রাজনেতার বা রাজনৈতিক দলের পরাজয়ের ভয় তাড়া করে বেড়াবে। রাজনৈতিক নির্ভরতা বাড়বে আমাদের। আমরা সবদিক থেকে রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বো।

 তাই সময় থাকতে নিজের ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে স্বতন্ত্র তন্ত্র (system) গড়ে তোলো। আর একটা কথা মনে রেখো, রাষ্ট্র-ধর্ম-সমাজ এই তিনটির নিয়ন্ত্রণ যদি শুধুমাত্র রাজার হাতেই থাকে তবে রাজার পতনের সাথে সাথেই সমস্ত কিছুর পতন ঘটবে।

উদাহরণ হিসেবে তুমি যে কোনো ধর্মকেই তুলনা করতে পারো। সেটা পোপ সাম্রাজ্য হোক বা খলিফা সাম্রাজ্য -যে কোনো শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী সমাজব্যবস্থার উদাহরণ দেখতে পারো।

Popular posts from this blog

বাংলার বারুজীবী বৃত্তান্ত

একসময় পান সুপারি দিয়ে নেমন্তন্ন করার প্রথা ছিল গ্রাম বাংলায়। তারপর ভোজের শেষে মুখুশুদ্ধি হিসেবেও পানের ব্যবহার ছিল তখন ।পান রাঙ্গা ঠোঁট ছিল আজকের সুন্দরীদের লিপস্টিক এর বিকল্প। আর এই পানের চাষ ও বিক্রির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বলা হতো বারুজীবি বা বারুই। পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া ,হুগলি ও বীরভূম জেলার সদর শহর সিউড়িতে রয়েছে বারুইপাড়া ।এছাড়া দুই মেদনীপুর সহ অন্যান্য জেলাতেও কমবেশি এই সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। একেবারে নিরীহ শান্ত সৌম্য ভীতু প্রকৃতির সম্প্রদায় ।তবে শৈল্পিক চিন্তাধারা বিশেষভাবে ফুটে ওঠে এই সম্প্রদায়ের। উৎপত্তি - বারুজিবী জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে একটি প্রচলিত লোককথা রয়েছে ।সেখানে বলা হয়েছে এক শিব ভক্ত ব্রাহ্মণ ছিলেন ।তিনি প্রতিদিন শিব পূজা করতেন। কিন্তু, তার আরো অনেক কাজ ছিল ।যেমন যেমন পান চাষ, কাপড়বোনা প্রভৃতি।ব্রাহ্মণের বেশিরভাগ সময় চলে যেত ওই কাজে।তারপর কোন এক সময় পেলে শিবের মাথায় দুই একটি ফুল ছুঁড়ে কর্তব্য সারতেন। এসব দেখে শিব ঠাকুর তাকে আন্তরিকভাবে শুধুমাত্র তার পূজা করতে বললেন। এবং আরো জানিয়ে দিলেন তা করলে তার কোন অভাব থাকবে না। কিন্তু, ব্রাহ্মণ সে ...

বিবাহ

বাঙ্গালি ব্রাহ্মণ সমাজে পাঁচটি শাখা রয়েছে — রাঢ়ী, বারেন্দ্র, বৈদিক, সপ্তশতী ও মধ্যশ্রেণী।  বাঙ্গালি কায়স্থ সমাজে রয়েছে চারটি শাখা — উত্তর রাঢ়ী, দক্ষিণ রাঢ়ী, বারেন্দ্র ও বঙ্গজ। এই সকল বর্ণ এবং তাদের শাখা ও উপশাখাগুলির মধ্যে বিবাহ প্রথায় দুটি বিভাগ দেখা যায় — বৈদিক ও লৌকিক।  লৌকিক প্রথাগুলি মেয়েলি আচার। এই কারণে এগুলি ‘স্ত্রী আচার’ নামে পরিচিত। বৈদিক আচারে সাম, যজুঃ ও ঋক্ বেদত্রয়ের অনুসরণকারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহ প্রথায় আবার সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। হিন্দু বিবাহের বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অপরিহার্য হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম (লাজ বা খই দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান), সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ), ধৃতিহোম (ধারণ করার অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ) ও চতুর্থী হোম। এছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন, ধ্রুব নক্ষত্র দর্শন, শিলারোহণ ইত্যাদি কয়েকটি বৈদিক প্রথাও। বৈদিক প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ। বাঙালি হিন্দু বিবাহের লৌকিক আচার বহুবিধ। এই প্রথাগুলি বর্ণ, শাখা, উপশাখা এবং অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়।  "বিবাহ”  শব্দ...
লাদাখে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে কাশ্মীরে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মণিপুরে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মেঘালয়ে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে নাগাল্যান্ডে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে মিজোরামে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে লাক্ষাদ্বীপে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে অরুণাচলে হিন্দুদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে ভারতবর্ষের মোট 9 রাজ্যে হিন্দুদের অস্তিত্ব ক্ষীণ 200 জেলা থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা পলায়মান এরপরেও এরা হিন্দুরাষ্ট্রের সুখস্বপ্নে বিভোর! এরপরেও বাতেলাবাজদের বাতেলা বন্ধ হয় না!  এরপরেও বলবে, হিন্দুদের অস্তিত্ব নাকি ধ্বংস হবে না!