Skip to main content

দশবিদ সংস্কার কি এবং কেন…?

দশবিদ সংস্কার কি এবং কেন…?
___________________________

আমাদের সনাতন ধর্ম মতে একটি আদর্শ ও পরিপূর্ণ জীবন গড়তে প্রত্যকেই দশবিদ সংস্কার মাঝে সঠিক জীবন গড়তে হবে। আসুন জেনে নিন এই দশবিদ সংস্কার গুলো কি- মনুষ্য জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণকর করে গড়ে তোলার লক্ষে প্রাচীন ঋষিরা অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণ ও মাঙ্গলিক কর্মের নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলোকে হিন্দু ধর্মের ধর্মাচার ও সংস্কার বলে। এই সকল আচার-আচরণ ‘মনুসংহিতা’, ‘যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা’, ‘পরাশরসংহিতা’ প্রভৃতি স্মৃতিশাস্ত্রে পাওয়া যায়। স্মৃতিশাস্ত্রে ১০ প্রকার সংস্কারের উল্লেখ আছে। “মনুসংহিতা, যাজ্ঞবাল্ক সংহিতা পরাশর সংহিতা, প্রভূতি স্মৃতিশাস্ত্রে দশকর্মের বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে।

প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীদের জন্যে কিছু রীতি – নীতি , আচার – অনুষ্ঠান । প্রতিপালনের উপদেশ বা নির্দেশ দিয়ে থাকে । এ সকল অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ;

( ১ ) কোন জীবকে জয়লাভে সাহায্য করা ।
( ২ ) জীবের সাহায্যে উচ্চ প্রজ্ঞাকে আমন্ত্রণ করা যেমন , মুনি ঋষিদের সাহায্য কামনা করা ।
( ৩ ) পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা ।

এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার বস্তু , ক্রিয়াকলাপ , চালচলন ও শব্দকে এমনভাবে বিন্যাস করা হয়েছে যেন ফল লাভ সহজ ও দ্রুত হয় । সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে গর্ভ অবস্থা থেকে বিবাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দশটি সংস্কার কর্ম করার নিয়ম প্রচলিত আছে । শাস্ত্রীয় মতে একে দশবিধ সংস্কার বলা হয় । ‘জন্মনা ব্রহ্মণো জ্ঞেয়ঃ সংস্কারৈর্দ্বিজ উচ্যতে‘ (অত্রিংহিতা)। ব্রাহ্মণবংশে জন্ম হলেই ব্রাহ্মণ বলা যায় না এবং সংস্কার দ্বারা দ্বিজ পদবাচ্য হয়ে থাকে। সুতরাং সংস্কারগুলো লুপ্ত না হয়, সে জন্য সর্তক হওয়া উচিত। সংস্কার দশবিধ : ১, গর্ভাধান, ২. পুংসবন, ৩. সীমন্তোন্নয়ন, ৪. জাতকর্ম, ৫. নামকরণ, ৬. অন্নপ্রাশন, ৭. চূড়াকরণ, ৮. উপনয়ন, ৯ সমাবর্তন, ১০. বিবাহ। হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে , দেহে ব্রহ্ম প্রাপ্তির অনুকূল গুণের উন্মেষ করতে হলে দশবিধ সংস্কার বিধি অবশ্যই পালন করতে হবে । সংস্কার কার্যগুলো। সম্পাদিত হলে জনক – জননীর দোষ থাকলেও গর্ভাবস্থা থেকেই তা প্রশমিত হয়ে মানুষের দেহে ব্ৰহ্ম প্রাপ্তির অনুকূল গুণের উন্মেষ ঘটে ।

এগুলো আবার চার শ্রেণিতে বিভক্ত : ১. গর্ভ-সংস্কার, ২. শৈশব -সংস্কার, ৩. কৈশোর-সংস্কার, ৪. যৌবন-সংস্কার।

গর্ভ সংস্কার : গর্ভাধান , পুংসবন , সীমান্তোন্নয়ন । 
শৈশব সংস্কার : জাতকর্ম , নামকরণ , অন্নপ্রাশন । 
কৈশাের সংস্কার : চূড়াকরণ , উপনয়ন , সমাবর্তন । যৌবন সংস্কার : বিবাহ।

(কোনো কোনো মতে সমাবর্তন পৃথক সংস্কার নয়, এটি উপনয়নেরই অন্তর্গত। কোনো কোনো মতে নিষ্ক্রামণও পৃথক সংস্কার। কেউবা দশের চেয়ে সংস্কার মেনে শালাকর্ম, বেদারম্ভ প্রভূতিকেও আলাদা সংস্কার বলে থাকেন।)

১| গর্ভাধান: 

গর্ভাধানাদি সংস্কারের উদ্দেশে সত্ত্বগুণের উৎকর্ষ সাধন। এই মহৎ উদ্দেশ্য, সাধনের অভিপ্রায়ে প্রাচীন ঋষিগণ বেদ আলোচনা দ্বারা ঠিক করেছিলেন যে অস্থি, স্নায়ু, মর্জা, ত্বক, মাংস ও রক্ত-এই ষড়বিধ কোষের সংযুক্তিতে মানবদেহ সমুৎপন্ন,তন্মধ্যে তিনটি পিতৃশরীর হইতে এবং শোষক্ত তিনটি মাতৃশরীর হইতে উৎপন্ন হয়ে থাকে, এই জন্য জনক-জননীর দেহে যে সকল কোষ থাকে তাই সন্তানে সংক্রমিত হয়। এজন্য গর্ভাধান, গর্ভগ্রণযোগ্যতা ও তদুপযুক্ত সময় নিরূপন করতঃ সন্তানোৎপত্তিকালে যাতে জনক-জননীর মত পশুভাবাপন্ন না হয়ে সত্ত্ব-ভাবাপন্ন হয় তাই গর্ভধানের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ পিতা-মাতার দেহে ও মনে যেসব দোষ- গুণ থাকে সেগুলো সন্তানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। এটা দেখে আর্য- ঋষিগণ গর্ভাধান বিধি প্রবর্তন করেছেন। শুভলগ্নে সন্তানের জন্মদানের জন্য যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান তাকে গর্ভাধান। গর্ভসঞ্চারের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানকে বলা হয় গর্ভাধান। বর্তমানে এই সংস্কারের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।

২| পুৎসবনঃ 

গর্ভধানের পর দ্বিতীয় সংস্কার পুৎসবন। পুংসবন শব্দের অর্থ পুত্র সন্তানের উৎপত্তি। পুত্র সন্তান কামনা করে যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে পুংসবন বলে। এটি গর্ভগ্রহণের তৃতীয় মাসের দশ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমতঃ যজ্ঞ করে স্বামী স্ত্রীর পেছনে দাঁড়ানোর পর তার কাঁধ স্পর্শ করে ডান হাত দ্বারা নাভিদেশ স্পর্শ করে এই মন্ত্র পাঠ করবেন, যথা-প্রজাপতিঋষিরনুষ্টুপচ্ছন্দো মিত্রবরুণ অগ্নিবায়বো দেবতাঃ পুংসবনে নিয়োগঃ। ওঁ পুংমাংসৌ মিত্রাবরূণৌ পুমাংসাবশ্বিনারুভৌ পুমানগ্নিশ্চ বায়ুশ্চ-পুমান গর্ভস্তবোদরে। অর্থাৎ- ‘সূর্য, বরূণ, অশ্বিনীকুমার যুগল, অগ্নি, বায়ু যেমন পুরুষ, তোমার গর্ভেও এইরূপ পুরুষেরই আবির্ভাব হোক॥’ স্বামীর মুখে এই মন্ত্রপাঠ শুনতে স্ত্রীর হৃদয় আনন্দে ভরে উঠবে এতে কোন সন্দেহ নাই, কারণ গর্ভিনী মাত্রেই কন্যা অপেক্ষা পুত্রের কামনাই বেশি করে থাকেন এই আনন্দাতিশয়বশতঃ গর্ভবস্থায় আলস্য, বমনাদি জনিত অবসাদ প্রভূতি বিদূরিত হওয়া এবং গর্ভপোষণের শক্তি যেন পুনরায় উদ্ভূত হওয়া অসম্ভব কিছু না। এছাড়াও পুংসবনে ফলদ্বয়যুক্ত বটগুঙ্গা, মাষকলাই যাবর সহিত গর্ভিণীর নাসিকা স্পর্শ করে শুঁকানোর পর ও নাসিকাতে তদ্রসনিক্ষেপের ব্যবস্থা করতে হয়। এ সকল দ্রব্যের যে গর্ভরক্ষা বিষয়ে বিশেষ শক্তি আছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। আয়ুর্বেদর মতে বটফুল দ্বারা যোনিদোষ বিনষ্ট হয়। গর্ভাধানের মত এই সংস্কারটিও প্রায় হারিয়েই গেছে।

৩| সীমন্তোন্নয়ন বা সাধভক্ষণঃ 

গর্ভাবস্থায় তৃতীয় সংস্কার সীমন্তোন্নয়ন বা সাধভক্ষণ। গর্ভধারনের পর ৬ বা ৮ মাসে সীমন্তোন্নয়ন করা হয়। এর মূল কাজটি সীমান্ত বা সিথি তুলে দেয়া । এ হতে গর্ভিণী প্রসবকাল পর্যন্ত আর অনুলেপনাদিতে অনুলিপ্তা, শৃঙ্গারবেশে আসক্তা বা পতিগামিনী হয় না। শেষে পতিপুত্রবতী-নারীগণ বধুকে দেবীর উপরে উত্থাপিত করে পানি পূর্ণ পুকুর এ স্নান এবং মঙ্গল কর্ম সম্পাদন করবেন এবং বধুকে বলবেন, ‘তুমি বীর প্রসবিনী, জীববৎসা ও জীবপতিকা হও।’ এবং সবশেষে গর্ভিণী সেই কেশর ভক্ষণ করবেন। এটি আমাদের সমাজে বর্তমানে সাধ-এর অনুষ্ঠান বা সাধভক্ষণ নামে পরিচিত।

৪| জাতকর্ম : 

সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবামাত্র এই সংস্কার করতে হয়। পিতা প্রথমত যব ও ব্রীহিচূর্ণি দ্বারা পরে স্বর্ণ দ্বারা ঘৃষ্টমধু এবং ঘৃত গহণ পূর্বক সদ্যেজাত সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করবেন। এতে যেসকল মন্ত্র উচ্চারিত হয়, তার প্রথম অংশে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও শেষাংশে বিপসন্তানের জন্য মেধা ও ধারণা শক্তির প্রার্থনা ছাড়া অন্যকোনকিছু মানে ধন সম্পদের প্রার্থনা করা হয় না। কেবল আয়ুর জন্য একবার মাত্র প্রার্থনা করা হয়। দ্রব্যগুণ বিচার করতে হলে দেখবেন স্বর্ণ দ্বারা আয়ুবর্ধন, প্রস্রাব পরিষ্কার ও রক্তের উর্ধ্ব গতি দোষ বিনষ্ট হয়। ঘৃতদ্বারা কোষ্ট পরিষ্কার, বল ও জীবনীশক্তির বৃদ্ধি হয়। মধু দ্বারা পিত্তকোষের ক্রিয়া বর্ধিত, মুখের লালা সঞ্চার এবং কফ নষ্ট হয়। অর্থাৎ জন্মের পর পিতা জব , যষ্টিমধু ও ঘৃত দ্বারা সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করে মন্ত্রোচ্চারণ করার মাধ্যমে জাতকর্ম সংস্কারটি পালন করা হত। এটিও আজকাল আর তেমন পালন করা হয় না।

৫| নামকরণ : 

সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার দশম,একাদশ, দ্বাদশ বা শততম দিবসে নামকরণ করতে হয়। বর্তমানে অন্নপ্রাশনের সময়ে এটি হতে দেখা যায় দেখা যায়। শৈশব সংস্কারের প্রথম সংস্কার সন্তানের নাম রাখার অনুষ্ঠানই নামকরণ সংস্কার।

৬| অন্নপ্রাশনঃ 

হিন্দুধর্মীয় সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ উৎসব। দশবিধ শুদ্ধিজনক সংস্কারের অন্যতম একটি হচ্ছে অন্নপ্রাশন। অন্নের প্রাশন বা ভোজনকে অন্নপ্রাশন বলে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সন্তান যদি বালক হয়, তবে ৬ষ্ঠ কিংবা ৮ম মাসে এবং বালিকা হলে ৫ম কিংবা ৭ম মাসে অন্নপ্রাশন করতে হয়। এটিই মূখ্যকাল। যদি কেউ এই সময়ে অপারগ হয় তাহলে অষ্টম ও দশম মাস গৌণ কালেও অন্নপ্রাশন করতে পারে। এতে সন্তানের মামার উপস্থিতি বাঞ্চনীয়। এ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করতে হয়। নিমন্ত্রিত আত্মীয়েরা আশীর্বাদ সহযোগে সাধ্যমাফিক উপহারসামগ্রী প্রদান করে।

৭| চূড়াকরণ : 

গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ উৎপন্ন হয় তা মুণ্ডনের নাম চূড়াকরণ। এরপর শিশুকে শিক্ষা এবং সংস্কারের পাত্রীভূত করা হয়। বর্তমানে চূড়াকরণের কাজটি অন্নপ্রাশনের দিন-ই করে ফেলা হয়। তাই এই অনুষ্ঠানটিও এখন আর আলাধা করে করা হয় না।

৮| উপনয়ন : 

উপনয়ন একটি হিন্দু শাস্ত্রানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হিন্দু বালকেরা ব্রাহ্মণ্য সংস্কারে দীক্ষিত হয়। হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে, উপনয়ন হিন্দু বালকদের শিক্ষারম্ভকালীন একটি অনুষ্ঠান। হিন্দুধর্মে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের জন্য উপনয়নের ন্যূনতম বয়স যথাক্রমে আট থেকে ষোল, এগারো হতে বাইশ ও দ্বাদশ হতে চব্বিশ বছর। উপনয়নকালে বালকদের ব্রহ্মোপদেশ শিক্ষা দেওয়া হয়।মনুস্মৃতি অনুযায়ী, এরপর তারা ব্রহ্মচারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে অবশ্য কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেই উপনয়ন সংস্কার প্রচলিত। ব্রাহ্মণের ষোড়াশ বর্ষের পর সাবিত্রী পতিত হয়, সুতরাং উপনয়ন হয় না। তবে ব্রাত্যতাদোষের প্রায়শ্চিত্ত করে উপনয়ন দেওয়া যায়। অর্থাৎ উপনয়ণ সংস্কারে বিদ্যা শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রথম গুরুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ‘উপনয়ন’ শব্দটির মানেই নিকটে নিয়ে যাওয়া। উপনয়ন অনুষ্ঠানে শরীরে যজ্ঞোপবীত বা উপবীত (চলিত বাংলায় পৈতে) ধারণ করা হয়। উপবীত প্রকৃতপক্ষে তিনটি পবিত্র সূতো যা দেবী সরস্বতী, গায়ত্রী ও সাবিত্রীর প্রতীক। উপবীত ধারণের সময় উপবীতধারী গায়ত্রী মন্ত্র শিক্ষা করে। উপনয়নের পর ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের দ্বিজ বলা হয়। দ্বিজ শব্দের অর্থ দুইবার জাত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রথমবার ব্যক্তির জন্ম হয় মাতৃগর্ভ থেকে; এবং দ্বিতীয়বার জন্ম হয় উপবীত ধারণ করে।

৯| সমাবর্তন : 

উপনয়ন শেষে গুরুগৃহে বাস করার রীতি আগে ছিল, পাঠশেষে গুরুর আদেশে গৃহে ফিরে আসত, তখন গার্হস্থ্য ধর্মরক্ষণোপযোগিতার জন্য এই সংস্কার নির্বাহ হইত। এখন সে প্রথা না থাকায়, উপনয়নের দিনেই এটি হয়ে থাকে। অধ্যায়ন শেষে গুরু কর্তৃক শিষ্যকে গৃহে ফেরার অনুমতি প্রদান উৎসবকে সমাবর্তন বলে।উপনয়ন শেষে গুরুগৃহে বাস করাই ছিল রীতি।সেখানে পড়াশুনা শেষ করে গুরুর অনুমতি নিয়ে গৃহে প্রত্যাগমন করতে হত।বর্তমান কালে সাধারণত গুরুগৃহে থেকে বিদ্যা বিদ্যাশিক্ষার প্রচলন নেই। সে কারণে এ সংস্কারটি এখন পালিত হয় না। তবে বর্তমানে ‘সমাবর্তন’ নামটি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র বিতরণ উৎসব এখন সমাবর্তন উৎসব নামে উদযাপিত হয়। যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের উপাধি পত্র প্রদান উৎসবই পূর্বকালের গুরুগৃহ ত্যাগের উৎসব বলে মনে করা যেতে পারে।

১০| বিবাহ : 

যৌবনাবস্থায় একমাত্র সংস্কারই বিবাহ। বিবাহের দ্বারা পুরুষ সন্তানের পিতা হন। নারী হন মাতা । বিবাহের মাধ্যমে পিতা, মাতা, পুত্র কন্যা প্রভূতি নিয়ে গড়ে ওঠে একটি পরিবার। পরিবারে সকলে মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগ ও ভোগ করে জীবন-যাপন করে। বিবাহে যেমন কতকগুলো শাস্ত্রীয়বিধি বিধান পালিত হয়, তেমনি পালিত হয় কতগুলো লৌকিক ও স্থানীয় স্ত্রী- আচার।
বিবাহ উচ্চারণ করা হয় :-

যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।। 

অর্থাৎ যদেতৎ=যেখানে, হৃদয়ং=হৃদয়, তব=তোমার, তদস্তু=সেখানে, হৃদয়ং=হৃদয়, মম=আমার, যদিদং=যেখানে, হৃদয়ং=হৃদয়, মম=আমার, তদস্তু=সেখানে, হৃদয়ং=হৃদয়, তব=তোমার ।
অর্থাৎ তোমার হৃদয় আমার হোক আমার হৃদয় তোমার হোক। এ মন্ত্রের মধ্য দিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে গভীর ঐক্য গড়ে ওঠে। মনুসিংহতায় সেকালের অবস্থা অনুসারে ৮ রকমের বিবাহ- পদ্ধতির বর্ণনা আছে। যথা- ব্রাহ্ম, দৈব্য, আর্ষ, প্রজাপাত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ। কন্যাকে বিশেষ বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদন করে স্বর্ণ অলংকার ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত করে বিদ্বান ও সদাচর সম্পন্ন বরকে স্বয়ং আমন্ত্রন করে যে কন্যা দান করা হয় তাকে ব্রাহ্মবিবাহ বলে। “তোমরা উভয়ে সুখে গার্হস্থ্য ধর্মের আচরণ কর”- এই আর্শীবাদ করে যথাবিধি অলংকার ইত্যাদি দ্বারা অর্চনাপূর্বক বরকে যে কন্যা দান করা হয় তাকে প্রজাপত্য বিবাহ বলে।বিবাহের নানা প্রকার পদ্ধতি সেকালের সামাজিক প্রথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। বিবাহ-পদ্ধতি সমূহের মধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহ পদ্ধতিটিই শ্রেষ্ঠ।

সব জাতিরই এতে অধিকার আছে। পতি ও পত্নী উভয় মিলিত হয়ে যে ধর্মানুষ্ঠান করতে হয়, তা আমাদের শাস্ত্রে ভূয়োভূয়ঃ আদিষ্ঠ হয়েছে। বিবাহেই স্ত্রী পুরুষ এক হয়। শ্রুতি বলেছেন, ‘অস্থিভিরস্থীনি মাংসৈর্মাংসানি ত্বচা ত্বচং’। বিবাহের মন্ত্রেও ‘যদিদং‌ হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব’ ইত্যাদি লিখিত আছে পরন্ত ‘স্ত্রীকো ধর্মমাচরেৎ’ ইত্যাদি স্মৃতিশাস্ত্র দ্বারা বিবাহিতা স্ত্রীকেই সহধর্মিণী বলা হয়েছে । অতএব এই বিবাহ যথাশাস্ত্র হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্রাহ্মণ ২৪, ক্ষত্রিয় ২৮, বৈশ্য ৩২ এবং শূদ্র ১৬ বছরের পর ৪৮ বছরের মধ্যে এই সংস্কারের অধিকারী। মতান্ত রে ব্রাহ্মণ সমাবর্তনের পরেই অধিকারী। কন্যার পক্ষে ৬ বছর ৩ মাসের পর ৭ বছর ৩ মাস এবং ৮ বছর ৩ মাসের পর ৯ বছর ৩ মাস পর্যন্ত প্রশস্তকাল।

বিশেষ জ্ঞাতব্য: দশবিধ সংস্কারের প্রত্যেকটাতেই নান্দীমুখ শ্রদ্ধ করতে হয়। এক দিনে সংস্কার্য (যাহার সংস্কার করা হবে) একের চেয়ে বেশি হলে সংস্কারক। পিতাকে একবার মাত্র নান্দীমুখ শ্রাদ্ধ করতে হবে। পিতার অভাবে যাদের সংস্কার তার প্রত্যেকেই পৃথকভাবে করবেন। নান্দীমুখ বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধের নিয়মাদি সকল সংস্কারেই একই রকম। বিবাহে পিতা সংস্কারক না হলেও প্রথম বিবাহে পিতাই বৃদ্ধিশ্রাদ্ধেই অধিকারী, দ্বিতীয়ত বিবাহে পিতা জীবিত থাকলেও যাঁর বিবাহ তিনিই বৃদ্ধিশ্রাদ্ধের অধিকারী। সংস্কার্যের (যাঁহার সংস্কার হবে তাঁর) অথবা সংস্কারের (যিনি সংস্কারকর্তা তাঁর) পিতামাতার মৃত্যুও পর সংবৎসের মধ্যে কোনো সংস্কারই অনুষ্ঠিত হয় না, যদি সংস্কারের মুখ্যকাল অতীত হবার সম্ভাবনা ঘটে তা হলে সংস্কারের পূর্বদিন অপকর্ষপিন্ডন করে সংস্কার করতে পারবেন। মুখ্যকালাতীত হলেও উপনয়নে ব্রাত্যসম্ভাবনায় ও বিবাহে কন্যার পৌঢ়াবস্থায় এবং অনাশ্রমী সম্ভাবনা হেতু অপকর্ষ করতে পরবেন।

হিন্দু ধর্মে হলুদ বা হরিদ্রা :-

হিন্দুদের জীবনে এমনকি ধর্ম মোতাবেক বিবাহ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। মানুষকে পাপমুক্ত করে বিশুদ্ধ করবার জন্য হিন্দুদের যে দশবিধ সংস্কার আছে তার মধ্যে বিবাহ হচ্ছে শেষ বা চরম সংস্কার। বিবাহের মাধ্যমে যেহেতু একজন নারী পিতার বংশ ছেড়ে স্বামীর বংশে চলে আসে, সেজন্য হিন্দুনারীর পক্ষে বিবাহ-জীবন চরম একটা সন্ধিক্ষণ। এরূপ সন্ধিক্ষণে যাতে কোন বাধা-বিপত্তি না ঘটে তার উদ্দেশ্যেই হরিদ্রাগণপতির পূজা করে থাকে। হরিদ্রাগণপতি মানে হলুদ গণেশ, হিন্দু দেবতা গণেশের (গণপতি) একটি রূপ যার গায়ের রং হলুদ। গণেশের এই রূপটি তার ৩২টি সর্বাধিক জনপ্রিয় রূপের অন্যতম। তিনি আবার হলুদ রঙের কাপড় পরিধান করেন। পার্থিব চাহিদা পূর্ণ করার জন্য (বিশেষত যৌনজীবন-সংক্রান্ত বরলাভের জন্য) তার পূজা করা হয়। তাই হিন্দু সমাজ কল্যাণের আশায় বিয়ের সময় হলুদ কাপড় পরিধান করে এবং গায়ে হলুদ মাখে। যা হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি হিসাবে পালন করে থাকে।




Popular posts from this blog

Dashavatar : 10 Avatars of Bhagwan Vishnu!

1. Matsya Avatar 2. Kurma Avatar 3. Varaha Avatar 4. Narasimha Avatar 5. Vamana Avatar 6. Parashurama Avatar 7. Shree Ram Avatar 8. Shri Krishna Avatar 9. Balarama Avatar 10. Kalki Avatar

Interesting Facts about Bhagwan Shri Ram

Bhagwan Shri Ram is the Seventh Avatar among the Dasavatara of Shri Hari Vishnu Bhagwan Shri Ram is Considered as the oldest Devta Worshipped in Human Form as he was born in Treta Yuga Bhagwan Shri Ram is descendant of Surya Devta as he was born in the Ikshvaku dynasty who was founded by Raja Ikshvaku, Son of Surya Devta. This is why Shri Ram is also called Suryavanshi After defeating the Ravana, As Per Religious Beliefs Shri Ram ruled his kingdom Ayodhya for 11,000 years of complete peace and prosperity As per Epic Mahabharat that once Bhagwan Shiva said that reciting the name of Ram thrice gives the grace equal to pronouncing the names of thousand deities Vishnu Sahasranama lists a thousand names of Bhagwan Vishnu. According to this list, "Rama" is the 394th name of Bhagwan Vishnu Hanuman once fought with Shri Ram to protect Kashi King Yayati, To help the Yayati in the battle, Hanumanji started reciting...

English Poetry, Hindu Culture

The sage is in meditating. He wants well for everyone India is the country of the sage.  Gives value to everyone. A Baul is watching here Flood in the Ajay river His one-string in one hand It's the source of his all shiver. Look at that, look at that,  picture of Bharatmata.  Golden sun will rise again in India.   Explain why excuses lead to eating vegetables. If you want to keep the weight right, eat milk and fruits. Mother, I bow to thee Mother, I bow to thee  . May thee, Bharatmata win The Zhou tree is shaking its head in the storm. The Shrimp loft broken into the ground in the storm. Our India is full of riches with wealth and culture. Bharatmata with her Dhwaj is very beautiful. India is my birthplace, India is my mother.  I will give my life in the service of my mother. Absolute peace in mother's lap,  happiness in mother's lap.  I will not do such a thing  so that my mother will get sad. By hundreds of lotuses Decorated lake. The ...