Skip to main content

জনগণমন Vs বন্দেমাতরম

আঠারোশো সাতান্ন এর বিদ্রোহের সময় ইংরেজরা ভারতের জন্য একটি রাষ্ট্রগান (National Anthem) রচনা করে "guard save queen" (ভগবান মহারানী কে রক্ষা কোরো) যা ছিল মূলত ইংল্যান্ডের মহারানীর বন্দনা। ভারতীয়রা এই গানে ক্ষুব্ধ হয় এবং একটি নতুন নিজস্ব রাষ্ট্রগান রচনা করতে প্রেরিত হয়। তখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতমাতার উদ্দেশ্যে একটি গান রচনা করেন- বন্দেমাতরম। এটি মূলত সংস্কৃত ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে লিখিত। এই গানটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। তখনকার প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিপ্লবীদের মুখে ছিল এই গান। ভারতের যেকোনো প্রান্তে কোন সভা আয়োজন হলে এই গান গাওয়া হতো। কংগ্রেসের অধিবেশন হোক বা অন্য কোন বিপ্লবী সংগঠনের তখন কোথাও কোনো ভাবেই জনগণমান এর কোন অস্তিত্ব ছিলনা। কিন্তু পরবর্তীকালে জনগণমানো ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়। 


এখন প্রশ্ন জনগণমন ভারতের রাষ্ট্রগান বা জাতীয়স্তোত্র হল কিভাবে? এর পিছনে একটি চক্রান্ত লুকিয়ে আছে। রাস্ট্রগান হিসাবে জনগণমন কোনভাবেই রাষ্ট্রগানের দৌড়ে ছিল না, কিন্তু জাহরলাল নেহেরু বন্দেমাতরম এর মত একটি হিন্দু গানকে কখনো রাষ্ট্রগান হিসেবে দেখতে চাননি। বরং তিনি রবীন্দ্রনাথের জনগণমনকেই রাষ্ট্রগান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন এটিকে কোনভাবেই প্রস্তাবাকারে ভোটের মাধ্যমে পাস করানো সম্ভব নয়। তাই তিনি একটি চক্রান্ত করেন। সংবিধান সভার শেষ দিনের বৈঠকে অর্থাৎ, 26 এ জানুয়ারির ঠিক দু'দিন আগে 24 জানুয়ারি 1950 এ রাজেন্দ্রপ্রসাদ সম্পূর্ণ  একতরফা ভাবে কোনও ভোটাভুটি না করিয়েই ঘোষণা করেন, "জনণণমন" ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হবে। সেইসঙ্গেই এর সমান মর্যাদা দেওয়া বন্দেমাতরম কে। অর্থাৎ, দুটো গান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের একাধিক (দুটো, তিনটে) রাষ্ট্রগান আছে। এরপর পরবর্তী চক্রান্ত হলো 1971 তে, যখন National Honour Act তৈরী করা হল তখন শুধুমাত্র জনগণমন কেই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে উপস্থাপন করে তার প্রয়োগ, অপপ্রয়োগ, সময়সীমা, দাঁড়িয়ে গাওয়া, অপমান করলে শাস্তি সমস্ত কিছুই ঠিক করে দেওয়া হলো। কিন্তু বন্দেমাতরম কে প্রায় বাদ দিয়ে দেওয়া হলো।

এই বিষয়ের উপর আশ্বিনী উপাধ্যায় একটি PIL করেছেন। তিনি বন্দেমাতরম এর সমান মর্যদা চেয়ে দিল্ল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। দিল্লী হাইকোর্ট তা গ্রহণ করেছে এবং কেন্দ্র সরকারকে নোটিশ জারি করেছে দিল্লী হাইকোর্ট। উত্তর দেওয়ার জন্য 6 সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র সরকারকে। 


আসলে জনগণমন রাষ্ট্রবন্দনা নয়, ভারতমায়ের বন্দনা নয়। জনগনমন হলো #রাষ্ট্রনায়কের বর্ণণা। বরং বন্দেমাতরম ভারত মায়ের প্রকৃত বন্দনা। দুটোর পার্থক্য নিজেই বোঝার চেষ্টা করুন। 


👇👇👇
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধ গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা, যুগ যুগ ধাবিত যাত্রী।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।
দারুণ বিপ্লব-মাঝে তব শঙ্খধ্বনি বাজে
সঙ্কটদুঃখত্রাতা।
জনগণপথপরিচায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

ঘোরতিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

রাত্রি প্রভাতিল, উদিল রবিচ্ছবি পূর্ব-উদয়গিরিভালে –
গাহে বিহঙ্গম, পূণ্য সমীরণ নবজীবনরস ঢালে।
তব করুণারুণরাগে নিদ্রিত ভারত জাগে
তব চরণে নত মাথা।
জয় জয় জয় হে জয় রাজেশ্বর ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।



👇👇👇
বন্দে মাতরম্
সুজলাং সুফলাং
মলয়জশীতলাং
শস্যশ্যামলাং
মাতরম্৷৷
শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্
ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্
সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং মাতরম্৷৷
সপ্তকোটিকণ্ঠকলকলনিনাদকরালে,
দ্বিসপ্তকোটীভুজৈর্ধৃতখর-করবালে,
অবলা কেন মা এত বলে৷৷
বহুবলধারিণীং
নমামি তারিণীং
রিপুদলবারিণীং
মাতরম্৷৷
তুমি বিদ্যা তুমি ধর্ম্ম
তুমি হৃদি তুমি মর্ম্ম
  ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে৷৷
বাহুতে তুমি মা শক্তি
হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি
তোমারই প্রতিমা গড়ি
  মন্দিরে মন্দিরে॥
ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমল-দলবিহারিণী
  বাণী বিদ্যাদায়িনী
  নমামি ত্বাং
নমামি কমলাম্
অমলাং অতুলাম্
সুজলাং সুফলাম্
মাতরম্॥
  বন্দে মাতরম্
শ্যামলাং সরলাম্
সুস্মিতাং ভূষিতাম্
ধরণীং ভরণীম্
মাতরম্॥


এখন প্রশ্ন আপনার কাছে, আপনি রাষ্ট্রনায়কের বন্দনা করতে চান নাকি ভারতমাতার বন্দনা করতে চান???

Popular posts from this blog

হিন্দু বিরোধী, বৈষম্যমূলক OBC আইন

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসে। আর তারপরই রাজ্যের তথাকথিত পিছিয়ে পড়া (?) মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কল্পতরু হয়ে ওঠেন মমতা ব্যানার্জি। মুসলিমদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন। আর সেই সময় চুপিসারে ২০১২ সালে পাস হয়ে যায় একটি আইন- “ The West Bengal Backward Classes (Other than Scheduled Castes and Scheduled Tribes) (Reservation of Vacancies in Services and Posts) Act, 2012,”  🔴কি ছিল সেই আইনে? আইন অনুযায়ী OBC ( Other Backward Classes ) কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়; OBC-A এবং OBC-B । আর এইভাবে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ঢালাও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই সংরক্ষণ দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের কোটার ভাগ কেটে। এখানে উল্লেখযোগ্য, OBC-তে হিন্দুরা যে সংরক্ষণের সুবিধা লাভ করতেন, তা পিছিয়ে পড়ার মাপকাঠিতে। তাছাড়া, সংরক্ষণ তালিকায় তাদের জাতির সঙ্গে হিন্দু কথা লেখা থাকতো না। কিন্তু OBC-A এবং OBC-B ক্যাটাগরিতে  যাদের পিছিয়ে পড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তাদের জাতির পাশে পরিষ্কার ‛মুসলিম’ কথা...

𝒯𝒽𝑒 𝐻𝒾𝓃𝒹𝓊𝓉𝓋𝒶 𝒟𝒶𝒾𝓁𝓎

||হিন্দুত্বের সারাদিন ||   ১|  জনপ্রিয়তার নিরিখে রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে ফের শীর্ষে মোদি, বলছে মার্কিন সমীক্ষা। মর্নিং কনসাল্টের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১২ রাষ্ট্রপ্রধানকে পিছনে ফেলে জনপ্রিয়তার নিরিখে এবারও একনম্বরে নরেন্দ্র মোদি। তাঁর ঝুলিতে ৭৭ শতাংশ জনপ্রিয়তা।  আমেরিকার সংস্থা মর্নিং কনসাল্ট বিভিন্ন দেশের প্রধানদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সমীক্ষা করে। ৭ দিন অন্তর সমীক্ষা করেন তারা। এবারের সমীক্ষাতেও মোদির মুকুটে নয়া পালক জুড়েছে। এবারের তালিকায় একনম্বরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (৭৭ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওবারডার (৬৩ শতাংশ), তৃতীয় স্থানে ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। সাত নম্বরে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২| "সিনেমাটার জন্য তো সমাজ ভেঙে ২ টুকরো হয়ে যাবে!'' The Kashmir Files-নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ নানা পটেকরের (Support link- https://dainik-b.in/NGBwPX0Wvob )

Parallel Government in Hindu Rastra

অনেকেই এখনও confusion এ আছেন। ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দিই। আপনাদের কি মনে হয়? বিনা বাক্যে মুসলমানদের হাতে আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো হিন্দুরা? কি মনে হয় বিনা যুদ্ধেই বালোচিস্তান মুসলমানদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলো? কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ছাড়াই মুসলমানরা হিন্দুদের দেশগুলো দখল করেছে? কোনো প্রতিবাদ হয়নি? কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি?  পোস্ট টা লেখার আগে ভাবছিলাম লেখার আদৌ দরকার আছে কি না? জ্ঞানপাপীরা এসব সমস্ত কিছুই জানে, তবুও মানে না। আসলে অন্ধের চেয়েও অন্ধ হওয়ার ভান করে যারা তারা কিছুই দেখতে পায় না। অনেকেরই ধারণা হিন্দুরা হয়তো বিনা যুদ্ধেই মুসলমানদের হাতে আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো হিন্দুরা। বিনা যুদ্ধেই হিন্দুরা মুসলমানদের হাতে বালোচিস্তান ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো? এমন ধারণা যে সর্বৈব মিথ্যা তার প্রমান-  1. https://youtu.be/VSIyCwVQRio 2. https://youtu.be/VSIyCwVQRio 3. https://youtu.be/re8txYC56vo এখন প্রশ্ন, হিন্দুরা আফগানিস্তান, বালোচিস্তান ছেড়ে আসতে বাধ্য হলো কেন? এর উত্তর রাজশক্তির পতনের সাথে সাথেই হিন্দুদের পতন। ধরুন একজন হিন্দু রাজা কোনো মুসলমান রাজার সাথে পরাজিত হল...