Skip to main content

কাশী বিশ্বনাথ

সময়টা ১৬৬৪ , দশনামী বৃদ্ধগুরু গঙ্গার ঘাটে ধ্যানমগ্ন । সূর্য্য তখন অস্তগামী, গঙ্গার জল সেই  অস্তরাগে গৈরিক ।
হঠাৎ গুরু র ধ্যানপ্রসন্ন শ্বেতশুভ্র  জটাজুটশ্মশ্রু সমন্বিত
  মুখের পেশীতে দেখা দিল কম্পন। গুরু দত্তাত্রেয় আজ স্বয়ং এসেছেন তাঁর ধ্যানে, অবগত‌ করাচ্ছেন আসন্ন বিপদ। হঠাৎ চোখ খুলে‌ গেল দশনামী গুরুর । নিজের অজ্ঞাতেই ধ্যানাসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন। অকস্মাৎ  কোলে থাকা শিবলিঙ্গ টি পড়ে গেল গঙ্গার জলে।‌ বৃদ্ধ সাধু অস্থির হয়ে‌ জলে নামলেন , খুঁজতে লাগলেন‌ শিবলিঙ্গটি , পাড়ের কাদায় হয়তো আটকে আছে। কিন্তু পেলেন না , জল থেকে হাত তুলতেই দেখলেন‌ কাদা‌ আর‌ রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে তার হাত। বৃদ্ধ শিথিল চামড়া কেটে গেছে কাদায় পড়ে থাকা ধারালো পাথরে।
দশনামী  বৃদ্ধগুরু বিপদ আভাস পেলেন। ধীরে ধীরে আখড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। মুখমন্ডল নির্বিকার তখন উপস্থিত হলেন‌ আশ্রমে।
মহানির্বাণি আখড়ায় শরীর চর্চা করে সাধু রা সবাই জড়ো হয়েছেন মহাকালের সন্ধ্যা বন্দনায়।
হঠাৎ কাশীরাজের কনিষ্ঠা পঞ্চম বর্ষীয় কন্যা মহামায়া  নগ্ন পদে উদভ্রান্তের মতো এক পত্র হাতে উপস্থিত আশ্রম প্রাঙ্গণে।‌ভয়ে ও শোক ব্যকুলতায় অভিব্যক্তি হীন। দশনামী গুরু রাজকন্যা কে দেখে আন্দাজ করে নিয়েছেন ততক্ষণ কাশী নরেন্দ্র র বিপদ ঘটে গেছে।‌ ধীর পদে হাত ধরে রাজকন্যা কে ভিতরে নিয়ে এলেন।‌সামান্য শুশ্রূষার পর‌ মহামায়া ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেলে তিনি পত্রটি পড়তে শুরু করেন রাজমাতা দুর্গা দেবী  জানিয়েছেন কাশী নরেশ‌ ও তাঁদের একমাত্র নাবালক পুত্র কে বন্দী করে নিয়ে গেছে ঔরঙ্গজেবের ‌সেনাপতি। রাজমাতা‌ তার জ্যেষ্ঠা কন্যা সহ পুর নারী দের নিয়ে অগ্নিতে আত্মাহুতি দিতে‌ প্রস্তুত।‌শুধু‌ তাদের সর্বকনিষ্ঠা আর কাশীর প্রান অভিমুক্তেশ্বর‌ ও‌ আদি বিশ্বেশ্বর কে যেন রক্ষা করেন তিনি। পত্রটি রেখে ধীরে ধীরে উঠে বাইরে‌বেড়িয়ে এলেন‌ তিনি। অদূরে  চিতা বহ্নি লেলিহান শিখা ধুম্রকুন্ডলীর সঙ্গে প্রতিস্পর্ধারত। সমস্ত সাধুদের আশ্রম প্রাঙ্গনে উপস্থিত হবার নির্দেশ ‌দিলেন।‌
যবন শাষক  কুতুব উদ্দিন থেকে আকবর পর্যন্ত সবাইকে পরাস্ত করে এসেছে এই শৈব সৈনিকরা। আবার সেই কর্তব্য আগত । তারা প্রস্তুত। হরহর মহাদেব শব্দে‌ মুখরিত হয়ে উঠল‌ কাশীর আকাশ। অদূরে শোনা গেল জ্যোতির্লিঙ্গ ও‌ স্বয়ম্ভূর  শয়নারতির ঘন্টাধ্বনি। দরজা বন্ধ হলো মন্দির প্রাঙ্গনের।
সেদিন রাত ছিল বড়ো অন্ধকার , দূরে অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ খাবার লোভাতুর শ্বাপদের শিৎকার  তীব্রতর হচ্ছে।
বিশ্বনাথের র পুরোহিত বিনিদ্র শয়নে। বারবার মনে হচ্ছে আরেকবার প্রভুকে  দর্শন করে আসে। কিন্তু শয়ন দেবার পর সূর্যোদয়ের আগে গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
কিন্তু অজানা ভয় তাকে নিয়ে চলল আদি বিশ্বেশ্বরের দ্বারপ্রান্তে। প্রবেশমুখে আচমকা ই এক ছায়ামূর্তি যেন সরে‌ গেল  মশালে র আলো ও হঠাৎ হাওয়ায় নিভে গেল। দূরে হায়না র হাড়হিম করা গোঙানি। নাকে এলো তীব্র আতর গন্ধ। এ গন্ধ পুরোহিতের চেনা এ যে যবন‌ গন্ধ।
পুরোহিত তৎক্ষণাত বুঝতে পারলো‌ লোলুপ বিকৃত বুদ্ধি ঔরঙ্গজেবের যবন‌সৈন্য যুদ্ধরীতি উলঙ্ঘন করে রাত্রিকালে ই হানা দিয়েছে  কাশী র অভ্যন্তরে। কম্পিত বক্ষে গুপ্ত প্রবেশদ্বারে র উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন‌ পুরোহিত। মন্দিরে প্রবেশ করে দ্বার বন্ধ করলেন পুরোহিত। ভোরের‌ আলো‌ ফুটতে আর কিছুক্ষন। আরতির প্রস্তুতি শুরু‌ করলেন ।‌ বাইরে শুরু হয়েছে আল্লাহু আকবর‌ ধ্বনি ও‌ ভেঙে ফেলা র তোপের আওয়াজ । সদরে মুহুর্মুহু করাঘাত। পুরোহিত তখন রাজরাজেশ্বরের দুগ্ধাভিষেকে রত। মন্দিরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে ধাতব আওয়াজ। হঠাৎ সশব্দে‌ নড়ে উঠল আদি বিশ্বেশ্বরের‌ সদর দ্বার। আরতি র শেষ পর্যায় চলছে। হঠাৎ আছড়ে পড়লো  শালের বৃহদাকার দরজা । জ্যোতির্লিঙ্গ বিশেশ্বর‌কে বক্ষে চেপে পুরোহিত বিস্ফারিত চোখে দেখলেন। সমগ্র লৌহ বর্মে‌ ঢাকা বিশালাকায় যবন একহাতে রক্তমাখা তলোয়ার অন্যহাতে সদ্যছিন্ন  মন্দিরের একটি গাভী মুন্ড। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মন্দির চৌকাঠ।পিছনে কয়েকটি যবন সেনা, আশে  পাশের মূর্তিগুলি নারকীয় ভাবে ভাঙছে  আর উল্লাসধ্বনি দিয়ে চলেছে। বিশালাকায় যবন সেনাপতি এগিয়ে আসছে তার দিকে। পুরোহিত একপা একপা করে পিছিয়ে যাচ্ছে আন্দাজ করছে জ্ঞানভ্যপী আর কতোটা দূরে।
  বিশ্বেশ্বর কে নিয়ে পুরোহিত জ্ঞানভ্যপী তে ঝাঁপ দিয়েছেন। আল্লাহ হু আকবর ধ্বনি দিয়ে গাভীর মস্তক টি কুয়ো য় ফেলতে উদ্যত হয়েছে সেনাপতি কিন্তু একি একটি ত্রিশুল এসে সরাসরি তার কন্ঠানালী তে বিঁধে গেল অকস্মাৎ। লুটিয়ে পড়লেন‌ গাজী। বিস্ফারিত চোখে দেখতে লাগলেন‌ স্বল্প পরিধেয় ভস্মমাখা জটাধারী সন্ন্যাসী গন হর হর মহাদেব নাদে যবন‌ সৈন্যদের ধর‌মুন্ড আলাদা করছে। পিছু হঠছে ঔরঙ্গজেবের সেনা । তুরঙ্গ খান,মির্জ্জা আলিদের মৃত্যুর‌ পর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ঔরঙ্গজেবের সেনা।✒বলরাম

Popular posts from this blog

Indian Population 2050

আমার কথা প্রথমে কিছুটা ভিত্তিহীন মনে হয়। কিন্ত পরে সেটাই সত্যি হয়ে যায়। কিছু তথ্য দিয়ে রাখি, ১| আগামী বছর ভারতের জনসংখ্যা চিনকে ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হবে ভারত। বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা 141 কোটি, আর চিনের জনসংখ্যা 142 কোটি। আগামী 1 বছরে চিনকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। ২| আপনি যেটা ভাবছেন সরকার কিন্ত সেটা ভাবছে না। সরকারের ভাবনা হলো, একটি বৃহৎ জনসংখ্যা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। সরকার Man কে Manpower এ রূপান্তরিত করার কথা ভাবছে। সরকার ভারতের জনসংখ্যা বাড়াতে চলেছে। 2050 এ ভারতের জনসংখ্যা বেড়ে হবে 166, আর চিনের জনসংখ্যা কমে হবে 131 কোটি। ৩| ভারতের স্বপ্ন সবচেয়ে কর্মক্ষম, সবচেয়ে তারুণ্যে ভরা দেশে পরিণত হওয়া। এই স্বীকৃতি ভারতের কাছে থাকবে না 2050 এ ভারতের মানুষের কর্মক্ষমতা এবং তারুণ্য হ্রাস পাবে। বরং পাকিস্তান, আমেরিকা এবং বাংলাদেশ এই তালিকার শীর্ষে থাকবে। ৪| জন্ম_নিয়ন্ত্রণের যে কুফল চিন ভোগ করছে ভারত তা চাই না। তাই জন্ম_নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটবে না ভারত। তাছাড়া দক্ষিণে জন্ম বৃদ্ধির হার অনেক কম। উত্তরে জন্ম_হার অনেক বেশি। ফলে একটি উত্...

संस्कृत वर्णमाला

अ आ इ  संस्कृत वर्णमाला अ अ अश्ब; आ आ आम्रः। अश्बः चतुरः ; आम्रः मधुरः। इ इ इक्षु: ; ई ई ईशाः।  रक्षतु सर्वानपि परमेशः। उ उ उदकम्, ऊ ऊ ऊर्मि । उदकम् प्रवहति, प्रभवति ऊर्मिः। ऋ ऋ ऋषिः ; ऋषिं नमामः। ऋ, ऌ इति वयं पठामः। ए ए एडः, स्थूलः पुष्ठः। ऐ ऐ इन्द्रजालिकः । ओ ओ ओतुः, 'म्याव् म्याव् ओतुः। ओ ओषधम्, मास्तु मास्तु। 

শশাঙ্ক

অপরাজিত বঙ্গাধিপতি শশাঙ্ক মহারাজ কানসোনাতে রাজধানী হতে হর্ষে দিয়েছে বাজ। মগধ, গৌড়, রাঢ় দেশ গাঁথে উড়িষ্যা ভুবনেশ্বর রাজনৈতিক সম্প্রসারে  কেঁপে ওঠে স্থানেশ্বর। একদিকে তিনি রক্ষা করেন হিন্দুত্বের ওই মতি পরমতসহিষ্ণু তবু মহাবিহারেও স্থিতি । জলকষ্টে দীঘির জল শরশঙ্ক খোঁড়েন নালন্দাতে বাড়ান হাত  ঐতিহ্যতে মোড়েন। কৃষি শিল্প জ্ঞানচর্চা বাণিজ্যে অগ্রগতি এমন রাজ্য শাসন করেন  গৌড়ের অধিপতি । বঙ্গাব্দের সূচনা খানা হয়ে যায় তাঁর হস্তে পাঁচশত তিরানব্বই সাল বিয়োগ করার ন্যস্তে । বাদ দাও যদি অঙ্কটা ওই দু'হাজার পার একুশ চৌদ্দোশ আটাশএলো এলো বাঙালির হুঁশ। ✍ কল্যাণ চক্রবর্তী 🎨 ছবি এঁকেছেন- শীর্ষ আচার্য আমার কল্পনার দৃষ্টিতে বাংলা বিহার উড়িষ্যার সম্রাট গৌরাধিপতি শশাঙ্ক এঁর নতুন আঙ্গিকে চিত্র অঙ্কন করলাম। বঙ্গাব্দের প্রবর্তক ও বাঙালির হৃদয় সম্রাট শশাঙ্কের জয়। শুভঃ বাঙালি নববর্ষ।