RSS

RSS টার্গেট নিলো একটা গ্রামে কাজ করবে। তাদের লক্ষ্য কি হবে? 

১| সেবা

২| সকলকে একজোট করা

৩| গ্রামের উন্নয়ন 

৪| মন্দির সংস্করণ

সবগুলোই?

সংঘ আজ থেকে নয়, অনেক আগের থেকেই কাজ করছে। আমার দাদুরাও RSS কে কাজ করতে দেখেছে। সেটা আমার জানা ছিলো না। পরে দাদুকে RSS এর কথা বোঝাতে গেলে জানতে পারি। 

চলুন প্রথম থেকে শুরু করা যাক। আমার এক বন্ধু একদিন হঠাৎই বললো চল এক যায়গায় মিটিং আছে। আমরা পাঁচজন মিলে পৌঁছালাম রামকৃষ্ণ আশ্রমে। যাওয়া মাত্রই আশ্রমের গুরুজি আমাদের কে প্রসাদ দিলেন, কিছুক্ষণ গল্প করলেন। তারপর যার আসার কথা ছিলো সে এলো আধঘন্টা পরে। শুরু হলো বৈঠক। সকলকে নিজের নিজের পরিচয় দিতে বলা হলো। কে কি করি, কখন করি, বিকেলে কোনো কাজ আছে কি না, দেশের জন্য কাজ করতে চাই কি না, মানুষের সেবা করতে চাই কি না -এসব জিজ্ঞেস করা হলো। কথাবার্তা বেশ ভালোই হলো। বেশ ভালো লাগল সকলেরই। শেষে বলা হলো - আগামী কাল বিকেলে আর একবার মাঠে যেতে হবে। চলে এসো। এমনিতেই তো তোমাদের বিকেলে কোনো কাজ নেই। তোমরা তো ওখানেই বসে থাকো, কালকে একটু তারাতারি চলে আসবে। তোমাদের গ্রামের সরস্বতী শিশু মন্দিরের মাষ্টার মশাই এবং তোমাদের পাশের গ্রামের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব থাকবে। বিকেল 04:00 তে চলে আসবে সবাই।

সেদিন ছিল রবিবার। Type School এর ছুটি। আরাম করে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎই ভাঙা Nokia ফোনটা বেজে উঠল। পাশের গ্রামের classmate এর ফোন। কখন আসবে রে, আমরা তো এসে বসে আছি! আয় তারাতারি! যখন মাঠে পৌঁছালাম তখন দেখি মোটামুটি 30 জন ছেলে জড়ো হয়েছে। 7 জন পাশের গ্রামের, তাদের আজ 10-15 দিন ধরে শাখা হচ্ছে। বন্ধু পরম সেই শাখার কার্যবাহক। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমাদের গ্রামের শাখার দায়িত্বে যে দাদা ছিলো (শিশুমন্দিরের শিক্ষক) সে পৌছালেন। মাঠের সকলকে ডেকে জড়ো করলেন। শুরু হলো শাখার কাজ। অনেক নতুন জিনিস শিখতে পারলাম, বুঝলাম, নতুন খেলা শিখলাম।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখি এই শাখা চলাকালীন উপস্থিত হয়েছিলেন আমাদের গ্রামের কাউন্সিলর। তিনি তার ছেলেকেও পাঠিয়েছিলেন শাখায়। শাখা শেষে আলোচনা শুরু হলো। পরিচয় পর্বের শেষে সকলের মতামত নেওয়া হলো। কে কে শাখায় আসতে পারবে, কার কার বিকেলে কাজ আছে, এইসব। সকলেই মোটামুটি বিকেল 05:30 থেকে শাখার আসতে মনস্থ হলো। 

আলোচনা পর্বটিও একটু বলে রাখা দরকার। আমাদের শাখার মাঝেই উপস্থিত হয়েছিলেন অন্য একজন, যিনি অস্ট্রেলিয়াতে Yoga শেখাতেন, তাঁকে বর্তমানে শাখার দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তিনি শারিরীক সক্ষমতার গুরুত্ব বোঝালেন। শেষে আবারো বলতে শুরু করলেন দাদা, "RSS কথাটি কে কে শুনেছো? কোথায় শুনেছো? RSS কি জানো? ....এইসব। RSS এর বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে আলোচনা হলো আলোচনা হলো বিজেপি সম্পর্কেও।

পরেরদিন পাশের গ্রামের আর কেউ আসেনি। তারা নিজেদের গ্রামেই শাখা লাগিয়েছিলো। আমাদের মধ্যে পৌঁছালো মাত্র 7 জন। আর মাঠে থাকা তিনজন ছেলেকে নেওয়া হলো। মোট দশজন। শাখা-সঙ্ঘ-নীতি-আদর্শ, হিন্দু-হিন্দুত্ব-হিন্দুদের অস্তিত্ব সংকট ও তার জন্য দায়ী সমসাময়িক সমাজ রাজনীতি, বিজেপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আদর্শ এই বিষয় বোঝানোর কাজ চলতে থাকলো। আমাদের কে স্পষ্টই বলা হয়েছিলো BJP হলো RSS এর রাজনৈতিক শাখা। তাই এই BJP বিষয়টাই যেনো বারবার ঘুরে ফিরে আসতো। সাথে সাথেই আলোচনা করা হতো প্রতিদিনের খবরগুলো। 

তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনে শাখায় পৌঁছালো মাত্র 5 জন। আশেপাশের ছেলেদেরকে ডাকার সত্ত্বেও তারা এলো না। কারণ হিসাবে বললো- ঐসব ভালো লাগেনা, আমরা ফুটবল খেলবো। ঐদিন আরো একটি সমস্যা দেখা দিলো- রাস্তার পাশেই শাখা হচ্ছিল, কয়েকজন মুসলমান সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো, তাই আলোচনায় সমস্যা দেখা দিলো, ঠিকমতো আলোচনা হলো না। 

পঞ্চম এবং ষষ্ঠ দিন 6/7 নিয়েই শাখা চললো, ষষ্ঠ দিনে তিনি দায়িত্ব দিলেন আমার এক বন্ধুকে এবং বললেন, কালকে আমি থাকবো না, অন্য গ্রামে একটি নতুন শাখা আরম্ভ হবে, তাই এই কাজটা তোকেই করতে হবে, তোর ফোনে আমি কিছু ভিডিও দিয়ে দিচ্ছি দেখিস। সপ্তম দিনে শাখা লাগালো আমার বন্ধু । এই কয়েকজন নিয়েই শাখা নিয়মিত চলতে থাকলো। দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হলো আমাদেরকে-

১| কোন কোন মন্দির নোংরা হয়েছে তা পরিষ্কার করতে হবে - ২ জন

২| গ্রামে কার কি সমস্যা হচ্ছে , সেসব দেখাশোনা - ২ জন

৩| শাখা লাগানো - ২ জন

এইভাবেই শাখা চলতে থাকলো। পাশাপাশিই বেশকিছু ভালো কাজ ছিলো। যেমন- মহকুমায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন এবং সকলের অংশগ্রহণ। পার্শ্ববর্তী গ্রামে শাখা তৈরীতে সাহায্য করা। রামমন্দিরের চাঁদা তোলা, গীতা বিলি করা, মহোৎসবের কাজে চাল তোলা, ভোগ রান্নায় সাহায্য ও বিলি করা...এইসব। 

এইসবের পাশাপাশিই শুরু হলো রাজনৈতিক প্রয়োগ। বলা হলো কালকে বিকেলে একটি মিটিং হবে, RSS এর অনেক লোকজন থাকবে, সকলেই থাকবি। তার আগে দুপুরের দিকে পতাকাগুলো লাগাতে হবে। সবাই মিলে হাতে-পাতে লাগিয়ে দিবি। হ্যাঁ, ঠিক নির্দেশ মতোই কাজগুলো হয়ে গেলো। তারপর একে একে দাদার আরো দায়িত্ব বাড়লো। দাদা গোটা জেলার দায়িত্ব পেলো। আমার বন্ধু পেলো মহকুমার দায়িত্ব।

🔴এবার কিছু প্রশ্ন করি।

●১| হঠাৎই শাখার আরম্ভ করা হলো কেনো? 

ধরে নিলাম ধরে নিলাম কোনো কারণ ছিলো না। এবং হঠাৎ করেও শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকেই প্ল্যান ছিলো, আমরাই হয়তো হঠাৎ করে জানতে পেরেছি!

●২| কখন শুরু হলো?

শাখা আরম্ভ হয়েছিলো ২০১৭ তে।

●৩| এমন সময়কে বেছে নেওয়ার কারণ কি? 

ধরে নিলাম কোনো কারণ ছিলো না। বিনা কারনেই হিন্দুদের স্বার্থে শাখা আরম্ভ হলো।

●৪| উদ্দেশ্য কি ছিলো? 

ধরে নিলাম RSS সমস্ত হিন্দুর মানসিকতার পরিবর্তন এবং চরিত্র গঠনের জন্য শাখা শুরু করেছিলো আমাদের গ্রামে। 

●৫| তাহলে RSS এর সেই মানসিকতার পরিবর্তন এবং চরিত্র গঠনের কাজ কতটুকু সফল? 

8/4000% = 0.002% !

🔴RSS এর কার্যসূচীতে কি কি ছিলো?

বিভিন্ন চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন, বিভিন্ন সচেতনতা শিবির, খাবার-পোশাক বিতরণ, পার্শ্ববর্তী গ্রামে শাখার প্রসার, রামমন্দিরের চাঁদা তোলা, গীতা বিলি করা, মহোৎসবের কাজে চাল তোলা, ভোগ রান্নায় সাহায্য ও বিলি করা, মেলায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা , মেলায় শৃঙ্খলা রক্ষা করা।

🔴RSS কতজনকে প্রভাবিত করতে পেরেছিলো?

RSS এর প্রভাব ছিলো মাত্র 10-15 জনের মধ্যে। যারা নিয়মিত বা কখনো কখনো শাখায় পৌঁছাতো।

🔴যদি প্রভাবিত করতে পারছিলো না, তাহলে স্থান পরিবর্তন করা হলো না কেনো?

RSS এর শাখা হচ্ছিলো গ্রাম থেকে ½ কিমি দূরে একটি মাঠে। সেখানে সবাই খেলা করছিলো আর আমরা ৮ জন শাখার কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। সেটা মানসিকতার উপর কতটা প্রভাব ফেলে? না, আমার লজ্জা লাগেনি। আমরা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলাম তাই আমাদেরকে লজ্জা লাগেনি । কিন্ত যখন আমাদের কার্যকলাপ দেখে বাকি ছেলেরা হাসতো, সেটা যে মোটেই একটি শাখার পরিবেশ নয় তা বলাই বাহুল্য। রাস্তার পাশেই আমরা আলোচনা করতাম, তাই পাশ দিয়ে কোনো মুসলমান গেলে আলোচনা অবশ্যই থামাতে হতো, অথবা অন্য কোনো প্রসঙ্গ আলোচনা করতে হতো, তাই এটা যে আলোচনার পরিবেশ নয়, তাও বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।

🔴এতো সমস্যার সত্ত্বেও কেনো শাখার স্থান পরিবর্তন করা হলো না? গ্রামের ভিতরে কি জমির অভাব?

না, গ্রামে কোনো জমির অভাব নেই। আমরা প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়তাম। কখনো মুসলমান, কখনো বা অন্য রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলর মাথার গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতো। এইরকম পরিস্থিতিতেও শাখা থামেনি। যায়গা পরিবর্তনের কথা বলা হলে বলা হয় সরস্বতী শিশু মন্দিরের নতুন স্কুল বিল্ডিং তৈরী হলে এবং সমগ্র যায়গাটি ঘিরে ফেলা হলে তবেই স্থান পরিবর্তন করা হবে।

🔴কেনো প্রত্যেক পাড়াতেই শাখা খোলা হলো না?

আমাদের শাখার স্থায়ী সদস্য সংখ্যা ছিলো 6 জন। আর দু-একজন কখনো কখনো আসতো। যদি সকলকে প্রভাবিত করার ইচ্ছা থাকে তাহলে তো প্রত্যেক পাড়ায় শাখা খোলা দরকার।  

🔴কিন্ত সেটা কেনো হলো না? কি অসুবিধা? 

RSS এর কিছু প্রাথমিক শারিরীক কৌশল, কিছু খেলা থাকে, সেগুলো শেখানোর দরকার পরে। এছাড়াও দরকার পরে মানষিক প্রশিক্ষণ। একজন মাত্র 'দাদা'র পক্ষে 10 টি পাড়ায় দিনে দশবার শাখা লাগানো সম্ভব নয়। পাশাপাশিই এইরকম ব্যক্তি-স্বার্থহীন আলোচনার প্রতি মানুষ আগ্রহী নয়, তাই RSS এর প্রসার হয় না। RSS গ্রামের কোনো এক প্রান্তে সকলের উপহাসের পাত্র হয়েই পড়ে থাকে। এমন দিনও গেছে যেখানে ফাঁকা মাঠে আমার বন্ধু পরম একা একা শাখা লাগাচ্ছে ! এরকম দৃশ্য সকলকেই বিস্মিত করে।

🔴 অন্য রাজনৈতিক দল RSS কে শত্রুর চোখে দেখে কেন?

আমাদের গ্রামের কাউন্সিলর নিজে মাথার গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতেন, কিংবা তার দলের কেউ এসে আমাদের উপর নজর রাখতেন, কিন্ত আমরা তাদেরকে ডাকতে পারিনি। RSS বিজেপির শাখা নয়, বিজেপিই RSS এর শাখা। RSS অলিখিতভাবে বিজেপির হয়ে কাজ করে। মঞ্চ সাজানো থেকে শুরু করে পতাকা লাগানো, মঞ্চে ভাসন দেওয়া সব কিছুই করে থাকে RSS. কোনো কিছুই বাদ নেই। তাই RSS যে অন্য রাজনৈতিক দলের চক্ষুশূল।

🔴কেনো সার্বজনীন প্রভাব ফেলতে পারলো না RSS?

একদল ছেলে মন্দির পরিস্কার করছে, গ্রামের সকলের ভালোমন্দের খবর রাখছে, সকলের উপকার করছে। হ্যাঁ, ছেলেগুলো যে ভালো সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্ত, কি তার ideology? কি তার উদ্দেশ্য? তার বক্তব্য কি? কেউ কি জানতে পারবে? কিভাবে জানবে?

একজন স্বয়ংসেবককে তার নিজের বক্তব্য সকলের কাছে পৌঁছানোর জন্য কি platform দেওয়া হয়? 

একজন স্বয়ংসেবককে তার নিজের বক্তব্য সকলের কাছে পৌঁছে দেবে কিভাবে? বাড়ি বাড়ি গিয়ে? সেটা কতটুকু সম্ভব হবে? এভাবে কি কারো ideology সার্বজনীন করা যায়?

🔴সার্বজনীন জীবনে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য কি আদৌ ছিলো? 

না, RSS শুধু সেবা করে, সে তার নিজের Ideology জাহির করে বেড়ায় না। যদি নিজের চিন্তাভাবনা, নিজের আদর্শ কে সবার মধ্যে ছড়ানোর উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে শাখা লাগানোর দরকার কি? অন্যান্য NGO গুলোর মতোই কোথায় সেবা করা দরকার সেটা বেছে নিয়ে সেবা করলেই তো হয়, হয় না?

🔴হিন্দুদের মূল সমস্যাগুলো কি আলোচনা করা হয়েছিল?

অবশ্যই হিন্দুদের সমস্যাগুলো আলোচনা করা হয়েছিল। তবে, যতবারই হিন্দুদের সমস্যগুলো আলোচনা করা হতো, তত বারই এর জন্য দায়ী করা হতো কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলকে। হিন্দুদের নিজস্ব সমস্যা, সে সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজা এবং সমস্যা সমাধানের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরী করে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে কাজ করতে কখনোই দেখা যায়নি RSS কে।

🔴 সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ী কংগ্রেস অথবা বামপন্থা অথবা তৃণমূল । তাই তৃণমূলের উৎখাত জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। প্রত্যেককে দুটি/একটি পাড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। লিফলেট বিলি করতে বলা হয়েছিলো। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব ছিলো। যে রকম তৎপরতা তখন দেখা গেছিলো, সেই একই তৎপরতা, সেই একই রকম Roadmap যদি হিন্দুদের সমস্যা সমাধানের জন্য করা হতো, তাহলে আজ হিন্দুদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।

🔴কী কী করতে পারতো RSS?

১| মাঠের বদলে মন্দিরে শাখা লাগানো। হিন্দু ধর্মের ভিত্তিস্হল না হলেও মন্দিরের সাথে প্রত্যেক হিন্দুর যে একটি সম্পর্ক আছে , তা বলার দরকার নেই। এবং প্রত্যেক হিন্দু যে বছরে অন্তত তিনদিন মন্দিরে যায়, সেটাও কারো অজানা নয়। 

🔴নিত্যপূজ্য মন্দির ও মাঠের শাখার মধ্যে পার্থক্য কি? মন্দিরে শাখা হলে কি এমন হতো?

* শাখা হয় দিনে একবার এক ঘন্টার জন্য। নিত্যপূজ্য মন্দির  12-24 ঘন্টাই খোলা থাকে।

* শাখা তে স্বয়ংসেবকদের কে ডেকে ডেকে 10-12 জনকে জড়ো করা যায়। কিন্ত একটি নিত্য-পূজার মন্দিরে প্রতিদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্তত 100-150 লোকের সমাগম হয়। 

* RSS মাঝে মাঝে সভা করে। সে সভা করার খরচ যথেষ্ট। RSS আর্থিকভাবে যথেষ্ট অনটনের সম্মুখীন হয়। তবুও কোনোদিন মন্দিরের সাথে সমঝোতা করে না। একটি নিত্য-পূজার মন্দির কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে সক্ষম। মন্দিরের অর্থ আর স্বয়ংসেবকের পরিশ্রম মিলিত হলে এই জনজাগরণের কাজ অনেক সহজ হয়। কিন্ত RSS মন্দিরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে নিজেকে রাজনৈতিক সমাজ সচেতক হিসেবেই ধরে রাখতে চায়, মন্দিরের ধার ঘেঁষে না!

* শুধুমাত্র ফাঁকা হিন্দুত্বের কথা বলে জনজাগরণ ঘটানো যায় না। ধর্ম ছাড়া কখনোই হিন্দুত্বের জাগরণ সম্ভব নয়। স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী এভাবেই পেরেছিলেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন কঠোর সত্য মানুষ গিলবে না, কঠোর সত্যকে ধর্মের মোড়কে পরিবেশন করতে হবে। তবেই তা সফল হবে।

* একজন স্বয়ংসেবকের কথা যত জন সাধারণ মানুষ শুনবে , একজন নিত্য-পূজার মন্দিরের পুরোহিতের কথা তার দশগুণ লোকে মানবে। একজন স্বয়ংসেবক কথা যতজন গুরুত্ব দেবে, একটি মন্দিরের পুরোহিতকে তার 5 গুণ মানুষ গুরুত্ব দেবে।

* আলোচনার জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ পাওয়া যেতো

* মন্দিরের একটি Shafety shield তৈরী হতো। তাই হিন্দুদেরকে মন্দির বা মূর্তি রক্ষা করতে হতো না বরং মন্দির নিজে হিন্দুদের রক্ষক হয়ে উঠতো। 

🔴 মন্দিরেরও তিনটি রীতির সংশোধন করা প্রয়োজন। যেগুলোর সংশোধন করতে পারতো RSS।

* সকলকে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাদান ।

* বংশ পরম্পরাহীন ব্রাহ্মণত্ব এবং অনুশীলনহীনতায় ব্রাহ্মণত্ব লোপ।

* মন্দিরের জন্য শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকে পূজারী নির্বাচন

--এই কাজগুলো RSS চেষ্টা করলে অনেক আগেই করে ফেলতে পারতো। RSS চাইলে হিন্দুদেরকে মন্দিরে সংগঠিত করতে পারতো, ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারতো। কিন্ত RSS চাই না।

*মন্দির ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা:  হিন্দু ধর্মের সমস্ত শক্তির উৎস মন্দির। মন্দির কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্ত RSS কখনোই মন্দিরকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি বরং মন্দির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরোধিতা করেছে।

* ভিক্ষুকদেরকে দিয়ে RSS এর agenda গুলো প্রচার করাতে পারতো RSS. এগুলোই ভিক্ষুকদের প্রকৃত কাজ। আগে তাদের কাজ ছিলো ধর্মের প্রচার করা। ফলে- যে ভিক্ষুকরা এখন ঠিক মতো হতে কৃষ্ণ বলে না, তারা হিন্দুদের দুর্বলতা না হয়ে হিন্দুত্বের শক্তি হিসাবেই দেখা দিতো।

* Hindu Ecosystem তৈরি করার জন্য planning করতে পারতো, হিন্দুদেরকে একজোট করতে পারতো, এ চেষ্টা কখনোই তাদের মধ্যে দেখা যায়নি।

*মুসলমানরা একের পর এক ব্যবসা কব্জা করে চলেছে, সে বিষয়ে plan বানাতে বলেছিলাম। বললো ওভাবে হবে না। এসব বিষয়ে আলোচনা নাকি অকারণ সময় নষ্ট। 

* বললাম চলুন হিন্দু দিল্লী, হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিতে ধর্ণা দেবো।বললো হবে না, ওসব করার দরকার নেই, সময় এলে আপনা থেকেই হবে , এখনো সময় হয়নি।

সঙ্ঘতন্ত্রের প্রভাব :-

তুমি কখনোই RSS, বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না। বললেই বলা হবে, "তুমি RSS কে কতক্ষণ সময় দিয়েছে?" তুমি RSS কে চেনো না। RSS করোনি। তোমার লাভ হয়নি। কিংবা অন্য দল থেকে টাকা নিয়েছো।

কোনো হিন্দু সংগঠন বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ণা প্রদর্শন করতে পারবে না। করলেই বলা হবে তুমি হিন্দুত্বকে দুর্বল করছো। হিন্দুদের জন্য যত গুরুত্বপূর্ণ দাবিই হোক না কেনো কেউ মোদীকে আক্রমণ করতে পারবে না, কেউ বিজেপিকে আক্রমণ করতে পারবে না। তুমি মুসলমান- তুমি মোদী বিরোধীতা করতেই পারো। তুমি সেকুলার বামপন্থী- তুমি মোদী বিরোধীতা করতেই পারো। কিন্ত হিন্দু হয়ে যদি তুমি মোদী বিরোধীতা করেছো তাহলে তোমার মুন্ডুপাত করার দায়িত্ব RSS এর তন্ত্রের। তোমার হিন্দুদের স্বার্থ যত বড়োই হোক না কেনো তুমি কখনোই কোনোমতেই বিজেপির বিরুদ্ধে বা RSS এর বিরুদ্ধে আন্দোলন আন্দোলন করতে পারবে না।

RSS- ভন্ডামি, ছলনা আর নপুংসতার আর এক নাম

_______________________________________________

একটা Safety Vulbe এর কাজ কি জানেন?

Pressure Coocker যে কাজটা করছে, সেই কাজটা ঠিক মতো হতে দেওয়া। Pressure Coocker এ যদি ক্রমাগত বাষ্প তৈরী হয় তাহলে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হতে পারে, ফলে Pressure Coocker টি বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাতে এই দুর্ঘটনা না হয়েই Pressure Coocker টি তার কাজ সম্পন্ন করতে পারে সেইজন্যই একটি ছোট্ট ছিদ্র রাখা হয় , এই ছোট্ট ছিদ্রটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে সুস্থভাবে সম্পন্ন করে।

ঠিক একই রকম একটি প্রসার কুকার আর Safety Vulbe এর উদাহরণ দেওয়া হল। এখানে

প্রেসার কুকার- বিজেপি

লক্ষ্য- হিন্দু ভোট ব্যাংক কে একত্রিত করা

Safety Vulbe- RSS 

কর্মপদ্ধতি-

RSS ও BJP যৌথভাবে হিন্দুত্ব ও হিন্দুরাষ্ট্রের প্রচার করে। তাদের বক্তব্য হল- বিজেপি একমাত্র হিন্দুবাদী দল যা ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করবে। এভাবেই হিন্দুত্ব এবং হিন্দু ভোটব্যাংক কে একত্রিত করার কাজ চালায়। 

কিন্ত এখন সমস্যা হলো, বিভিন্ন সময় হিন্দু যুবকদের তরফ থেকে Uniform Civil Code, NRC, হিন্দুরাষ্ট্রের দাবি তোলা হয়। তখনই এটা RSS ও বিজেপির কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই চাপ সামাল দেয় সঙ্ঘতন্ত্র। সরকারের উপর আসা হিন্দুত্বের চাপকে By Pass করাই RSS এর কাজ। 

যদি এই দাবি কোনো বিজেপি শাসিত রাজ্যে তোলা হয় তখন বিজেপি মুখপাত্রের মুখ বন্ধ হয়ে যায়, টুইটারে #tag top trend হোক বা কানের গোড়ায় ঢাক-ঢোল বাজানো হোক, কিছুতেই তা বিজেপি নেতাদের কানে ঢোকে না। আর RSS এর বক্তব্য হলো- "ধৈর্য্য ধরো। সব হবে।" 

দাবি আরো জোরালো হলে, "কাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছো? এই সরকার না করলে, ____ এর মতো হিন্দু-বিরোধী সরকার এসে এইসব কাজ করবে?কখনোই করবে না।" এর পরেও যদি আপনি মানতে নারাজ হন, যদি আরো জেদ করে বিজেপির বিরুদ্ধ কথা বলেন, তাহলে আপনার কপালে জুটবে দেশদ্রোহীর তকমা। বিজেপি বিরোধী মানেই দেশদ্রোহী। তাই চুপচাপ বিজেপিকে জেতাতে থাকুন, একদিন হিন্দুরাষ্ট্র পেয়ে যাবেন।

আর যদি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই দাবি তোলা হয় তাহলে বলা হবে বিজেপি সরকার আসলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যতদিন এই হিন্দু বিরোধী সরকার আছে ততদিন হিন্দুবাদী কার্যকলাপ চালানো সম্ভব নয়। তাই সরকার বদলের জন্য চেষ্টা করুন। 

RSS বলতে কি বোঝেন? এক হিন্দুবাদী সংগঠন যা গোটা দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাইতো? মোটেও না হিন্দুত্বের সাথে RSS এর সম্পর্ক শুধুমাত্র ছলনার। দেশে হিন্দুত্বের উগ্র হাওয়ার যেন বাড়বাড়ন্ত না হয় সেই জন্যই RSS। 

RSS এর হাতে সবসময় লাঠি তো দেখেছেন, কিন্ত সেই লাঠি কখনো চলতে দেখেছেন কি? 

অবশ্যই না। RSS কখনোই লাঠি চালানোর অনুমতি দেয় না। এটা শুধুমাত্র দেখানোর।  এটিও হিন্দুদের সাথে একটি ছলনা ছাড়া কিছুই নয়। 

মন্দির কে বাদ দিয়ে নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে RSS যে হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা আকাশ-কুসুম কল্পনা। মন্দির আর Temple Administration কে বাদ দিয়ে কখনোই হিন্দুরাষ্ট্র সম্ভব নয়। যত বড়োই সংগঠন হোক, তয প্রভাবশালীই হোক না কেনো মন্দির আর Temple Administration কে বাদ দিয়ে কখনোই হিন্দুদের একত্রিত করতে পারবে না। বরং তারা যদি মন্দিরতন্ত্রের সংস্কার এবং মন্দিরতন্ত্র কে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতো তাহলে তারা এতোদিনে সফল হয়ে যেতো । কিন্ত ,  RSS এর প্রধান লক্ষ্য ধর্ম নয় সমসাময়িক রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। হিন্দুত্বের নাম করে যে সংগঠন শুরু হয়, তার পরিণতি বিজেপির নির্বিরোধ দল-দাসে পরিণত হওয়া।