Skip to main content

ইসলামে শহীদদের সম্মান

'শহীদ’ আরবি শব্দ। শহীদ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘শাহাদত’ শব্দ থেকে। ‘শাহাদত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে- সনদ, সাক্ষ্য, প্রত্যয়নপত্র, সার্টিফিকেট ইত্যাদি। 

‘শহীদ’ শব্দটির ভাবার্থ হলো- ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে জীবন কোরবানীর মাধ্যমে ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য, সনদ, সার্টিফিকেট বা প্রত্যয়ন প্রদান।’ আরবি ডিকশনারীতে ‘মু’জাম আল-অসীত’-এ ‘শহীদ’ শব্দের অর্থ দেয়া আছে: তায়ার্’রাদা আয়্যুক্তালা ফি-ছাবিলিল্লাহ্ অর্থ: ‘যিনি আল্লাহর পথে নিহত হওয়ার জন্য নিজকে পেশ করলেন।’ 

মানব জাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর ইবাদত করা, সেই ‘ইবাদত’ প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে মৃত্যুবরণ করলো, ইসলামী পরিভাষায় তাকে ‘শহীদ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
 
‘শহীদ’ সম্পর্কে শাফেয়ী মাজহাবে বলা আছে যে- ‘দুনিয়া ও অখিরাতের শহীদ হলেন: যিনি গনীমতের মাল গোপনে আত্মসাৎ অথবা মানুষের বাহ্বা কুড়ানোর উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।’
 
‘শহীদ’ সম্পর্কে হানাফী মাজহাবে বলা হয়েছে যে- ‘শহীদ ওই মুসলমান যে অত্যাচারিত বা নির্যাতিত অবস্থায় নিহত হয়েছে। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন অথবা কোনো বিদ্রোহী কিংবা কোনো শত্রু তাকে হত্যা করুক অথবা কোনো চোর বা ডাকাত তাকে নিহত করুক।’
 
‘শহীদ’ সম্পর্কে মালিকি মাজহাবে বলা হয়েছে যে - ‘শহীদ ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো কাফের যোদ্ধা হত্যা করেছে অথবা মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে লড়াইয়ে মারা গেছে।’
 
‘শহীদ’ সম্পর্কে হাম্বলী মাজহাবে বলা হয়েছে যে- ‘শহীদ সে, যে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করার সময় নিহত হয়েছেন।’

ইসলামে শহীদদের বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক নিজে পবিত্র কোরআন মাজীদে বলেছেন- ‘যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে কর না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের নিকট হতে তারা রিজিক প্রাপ্ত।’ (সূরা: আল-ইমরান, আয়াত :১৬৯) 

এছাড়াও জাবির ইবনু আতীক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনের রাস্তায় যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে এরূপ ব্যক্তি ছাড়াও আরো সাত শ্রেনীর মানুষ শহীদের মর্যাদা পাবে । তারা হলেন- 


(১) মহামারীতে মৃত ব্যক্তি, (২) পানিতে ডুবে মারা গেছে এমন ব্যক্তি, (৩) যাতুল জানব বা শ্বাসকষ্ট রোগে মারা গেছে এমন ব্যক্তি, (৪) পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৫) যে ব্যক্তি আগুনে পুড়ে মারা গেছে, (৬) কোনো কিছুতে চাপা পরে মারা যাওয়া ব্যক্তি, এবং (৭) প্রসব কষ্টে মৃত নারী।’ 


শহীদ হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো থাকা দরকার এগুলো ছাড়াও কিছু মানুষ শহীদের সমমর্যাদা পাবে। আর তারা হলেন-


(১) যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজান মাসের সবগুলো সাওম সহীহ নিয়তের সঙ্গে পালন করে ও রমজান মাসের তারাবীহ সালাত নিয়মিত আদায় করে এবং জাকাত দেয়।


(২) রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীগণ হাশরের ময়দানে নবীগণ, সিদ্দীকগন ও শহীদ্গনের সঙ্গে থাকবে।’


(৩) যে ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে শহীদের মর্যাদা পাবে।


(৪) আসমা বিনতে ইয়াযিদ ইবনে আস সাকান (রা.) নবী করিম (সা.) এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা পর্দানশীল নারীরা ঘরে বসে থাকি। পক্ষান্তরে পুরুষরা জুমার নামাজ, জানাযায় অংশগ্রহণ, জিহাদে যাওয়া, ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যখন তারা জিহাদে যায়, আমরা তাদের সম্পদ হেফাযত, সন্তানদের লালন পালন করি; তাহলে আমরা কি তাদের সওয়াবে ভাগ পাব কী?


রাসূল (সা) তার সাহাবাদের বললেন, ‘যাও হে আসমা, তুমি তোমার পিছনে রেখে আসা মহিলাদের বলে দাও, স্বামীর জন্য উত্তম স্ত্রী হওয়া, তার সন্তুষ্টি খুজে নেয়া, তার সম্মতি অনুসরণ করা, যেগুলো উল্লেখ করেছ তার সমান।’ (মুসলিম)


(৫) যে ব্যক্তি তার ধনমালের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। আবার যে ব্যক্তি নিজের জীবনের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। যে ব্যক্তি দ্বীনের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে ও নিজের স্ত্রী-সন্তানদের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে সেও শহীদ।


--- লেখা: বাংলাদেশ ডেইলি থেকে নেওয়া

Popular posts from this blog

 বর্তমানে রাত্রীকালীন বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা :- ____________________________________ মুসলমান অত্যাচারের কারণে 'রাত্রি কালীন গোপন বিবাহ' রীতির প্রচলন। এসব সত্য জানার সত্ত্বেও এখনও এই রীতি বয়ে নিয়ে হচ্ছে। তার সম্ভাব্য কারণ কি কি হতে পারে? ১| দিনের বেলা সকলে ব্যস্ত থাকে নানা কাজে। কেও স্কুলে, কেও অফিসে কেও বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন। তাই সেই কাজের মাঝে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে হলে মানুষ দুপুরে কাজের শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় সেজেগুজে এসে বিয়ে দেখতে পারে। রাত্রে প্রায় সকলেই বাড়িতে থাকেন। তাই কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করা বিষয়টা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়। ২| এখন বিবাহ একটি পারিবারিক উৎসব নয়। বরং বিবাহ আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। রাতে জমকালো Light Show দেখানো যায়। বাজীর প্রদর্শনী করা যায়। এর সাথে আরও যত রকমভাবে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করা সম্ভব সবরকম চেষ্টাই করা হয়। কিন্ত দিনে এই সমস্ত ঘটনার Prime Focus একজনের উপর পড়া সম্ভব নয়, তাই রাত্রে। ৩| সামাজিক দৃষ্টিকোণ: বর্তমানে দিনে বিবাহ দেওয়াকে দারিদ্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ...

ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার তত্ত্বের Propaganda Vs Reality

ভারত বাংলাদেশ আর পাকিস্তান মিলে প্রায় 50 কোটি মুসলিম বাস করে। কিন্তু, এতো মুসলিম তো আরবেও নেই। তাহলে এতো মুসলমান এলো কোথা থেকে? অন্য ধর্মের লোক এতো দ্রুত হারে বাড়ছে না কেনো? অন্য ধর্মের 50 কোটি লোক হলোনা কেনো ? Communist আর secular দের বক্তব্য এরা হিন্দুই ছিল, কিন্তু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে আর মুসলিমদের ধর্মের উদারতার কারণে জাত-পাতহীনতার কারণে এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এরা মুসলিমদের দান-ধ্যানের নীতি, সুফি_সন্তদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত হয়ে "ইসলাম" ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তত্ত্ব  Communist রা হিন্দু সমাজকে দুইভাগে ভাগ করেন-- 1. উচ্চ বর্ণ  2. নিম্ন বর্ণ সমাজের সবচেয়ে ভক্তিবান মানুষ হলো তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষরা। তাদের কাছে ধর্মই সব। তাঁরা সব করতে পারেন কিন্তু ঠাকুর কে অবহেলা করেন না। তাঁরা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের জন্যেই ধর্মান্তরিত হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন কিভাবে❓ এটা তো গেলো পুরোনো যুগের কথা.... এবার এখনকার কথা বলি.... আচ্ছা বলুন তো, আমরা আমাদের পারিবারিক সূত্রে বা বন্ধুদের সূত্রে প্রায় প্রতিদিন নানান রকম খবর শুনি। যেমন- কারোর বিয়ে হয়েছে, কার...

বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথালয় এর সংযুক্তিকরণ

আমি কিছু ছোট ছোট old age home এবং orphan home এ গেছি এবং সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে বৃদ্ধ মানুষগুলো তাঁদের পরিবারের ছোটো-ছোটো নাতি-নাতনীদের মিস করেন। আবার অনাথালয়ের orphan দের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে তারা যদি দাদু ঠাকুমাদের মত কাওকে পেত, যারা তাদের একটু গল্প বলবে, মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আদর করবে তাহলে তারাও হয়ত অনেকটা ভালো থাকত। তাই আমার মনে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম ও orphan home যদি একই ছাদের নীচে করা সম্ভব হয় তাহলে ওইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার যে কষ্ট, সেটা সামান্য হলেও লাঘব হবে। এবার আমি এটা নিয়ে কতটা ঠিক ভেবেছি বা এটা ইমপ্লিমেন্ট করা কতটা সম্ভব বা তার প্রতিবন্ধকতার জায়গা গুলো আমি সম্পুর্ন ওয়াকিবহল নই। সম্পূর্ণ একটা ইমোশনাল ভাবনা থেকে এটা আমি ম্যাডামকে জানিয়েছি। ম্যাডাম বা ডিপার্টমেন্ট এ যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তাঁদের সবার পর্বত সমান অভিজ্ঞতা। যদি তাঁরা এই ভাবনার মধ্যে কোনো পজিটিভ দিক আছে বলে মনে করেন এবং প্রাকটিক্যাল গ্রাউন্ডে এটা ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব মনে করেন এবং এক ছাদের তলায় old age home এবং orphan home তৈরী করা...