দাড়িভিটের স্ফুলিঙ্গ থেকে ভাষা আন্দোলনের প্রদীপ জ্বালাতে আমরা ব্যর্থ

 বর্তমানে রাত্রীকালীন বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা :-

____________________________________

মুসলমান অত্যাচারের কারণে 'রাত্রি কালীন গোপন বিবাহ' রীতির প্রচলন। এসব সত্য জানার সত্ত্বেও এখনও এই রীতি বয়ে নিয়ে হচ্ছে। তার সম্ভাব্য কারণ কি কি হতে পারে?

১| দিনের বেলা সকলে ব্যস্ত থাকে নানা কাজে। কেও স্কুলে, কেও অফিসে কেও বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন। তাই সেই কাজের মাঝে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে হলে মানুষ দুপুরে কাজের শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় সেজেগুজে এসে বিয়ে দেখতে পারে। রাত্রে প্রায় সকলেই বাড়িতে থাকেন। তাই কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করা বিষয়টা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়।

২| এখন বিবাহ একটি পারিবারিক উৎসব নয়। বরং বিবাহ আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। রাতে জমকালো Light Show দেখানো যায়। বাজীর প্রদর্শনী করা যায়। এর সাথে আরও যত রকমভাবে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করা সম্ভব সবরকম চেষ্টাই করা হয়। কিন্ত দিনে এই সমস্ত ঘটনার Prime Focus একজনের উপর পড়া সম্ভব নয়, তাই রাত্রে।

৩| সামাজিক দৃষ্টিকোণ: বর্তমানে দিনে বিবাহ দেওয়াকে দারিদ্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। তাই অত্যন্ত দরিদ্র বাবা-মাও নূন্যতম সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখার জন্য রাত্রে সামান্য আয়োজন করেন। প্রয়োজনে ঋণ করে হলেও রাত্রেই খাওয়ার আয়োজন করা হয়।

৪| দিনের বিভিন্ন কাজ যেমন গায়ে হলুদ, নান্দীমুখ ইত্যাদির জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। মেয়েরা সাজগোজ করা, মেহেন্দি পড়া, নাচ গান ঠাট্টা মশকরা করার যথেষ্ট সময় পায়।

৫| রাতে বিয়ে হলে পরদিনে সকালে তাড়াতাড়ি বিদায় পর্ব সারা যাবে। দুপুরে যদি বিয়ে হলে বরপক্ষকেও সেদিনই খাওয়ানোর আয়োজন করতে হতে পারে। অর্থাৎ একই দিনে দুই বাড়িতেই ভোজের আয়োজন সেটা সামলানো সম্ভব হবে না।

৬| তাছাড়া দুপুরে বিয়ে মিটে গেলে বর কনের সাথে সময় না কাটিয়ে সকলেই সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে যেতে চাইবে। ফলে বর/ কনের যে ইমেজ, সেটা আর থাকবে না। 

৭| বাসর ঘরে আড্ডা : বিয়ের রাতে অনেকে বাসর ঘরে আড্ডা দেয়, গান বাজনা মশকরা করে, দিনের বেলা বিয়ে মিটলে কেউ কি ভরপেট মাল খেয়ে আআআআ করে গান গাইবে!?

৮| বিয়ের রাতে কিছু মাতব্বর সবার আড়ালে গিয়ে সোনালি পানীয়ে একটু গলা ভেজাতেই পারে। দিবালোকে তো সকলেই ভদ্রলোক, নয় কি!

এ সবই তুচ্ছ কারণ। ইচ্ছা করলে এই তুচ্ছ অজুহাতগুলোকে তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্ত আধুনিক পরিবারগুলো কি আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে? পারবে আগের মতো পারিবারিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে আত্মার সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন সমাজ গড়তে?