Skip to main content

পরস মামব্রে : নেটের পিছনের হিরো

 শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নেওয়ার পরে মহম্মদ শামির বল নিয়ে মাথায় হাত ঘোরানোর দৃশ্যটা মনে আছে?! 

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফানি হিসেবে ঘুরছিল ছবিটা, কিন্তু আদতে মহম্মদ শামি কাকে কী বার্তা পাঠাচ্ছিলেন?

শামি একজনকে একই সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন আবার একটু ইয়ার্কিও করছিলেন। কাকে?

ভারতের বোলিং কোচ পরস মামব্রেকে।


কে এই পরস মামব্রে? ফেসবুকে পোস্ট করেই যারা কোহলি শামিকে কোচিং করার ক্ষমতা রাখেন, তাদের সবার চোখ ট্যারা হয়ে যাবে, মামব্রের সিভি দেখলে।

একটু পিছিয়ে যাই চলুন। 


২০১৬-২০১৭ রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ চলছে। দিল্লির সামনে বিদর্ভ। 

দিল্লির টিমে কে নেই? শিখর ধাওয়ান, গৌতম গম্ভীর , নীতিশ রানা , ঋষভ পনথ। সবাই ভেবেছিল দুর্বল বিদর্ভকে উড়িয়ে দেবে দিল্লি।


একজন অন্য রকম ভেবেছিলেন। বিদর্ভ কোচ পরস মামব্রে।

সহকারী কোচ অনিরুদ্ধ পরে স্মৃতিচারণ করেছিলেন, মামব্রে স্যার আলাদা কিছু করেন না। উনি প্রথমে ডেটা সংগ্রহ করেন, ভিডিও এনালিস্ট এর সঙ্গে বসে তন্ন তন্ন করে একজন প্লেয়ারের খুঁটিনাটি নিজের মগজে ঢুকিয়ে নেন। তারপরে নিশ্চিত করেন নেটে যেন সেই মত প্র্যাকটিস হয়।

সেই ম্যাচে দিল্লি ১০৬/৬ হয়ে গিয়েছিল বিদর্ভ এর সামনে। মনন শর্মা ৮ নম্বরে নেমে দিল্লির সম্মান বাঁচান।


যে ঐতিহাসিক ইংল্যান্ড সফরে দ্রাবিড় আর সৌরভ গাঙ্গুলির অভিষেক, সেই সফরেই মামব্রেরও অভিষেক। কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি। মাত্র ৩০ বছর বয়সে অবসর নিয়ে নেন, তারপরে কোচিংয়ে ডিপ্লোমা


এই মামব্রের সঙ্গে বাংলার কানেকশন কী?

২০০৪-২০০৫ রঞ্জি মরশুম। বাংলা প্রায় অবনমনের যায় যায় এমন অবস্থা।  শেষ ম্যাচে মুখোমুখি অমর খুরেশিয়ার মধ্যপ্রদেশ। ৩ পয়েন্ট না পেলে অবনমন নিশ্চিত।


তখন বাংলার কোচ যারা ছিলেন, লম্বা লম্বা ভাষণ দিয়ে হেডলাইন বানাতে ভালোবাসতেন, কিন্তু কাজে আসতেন না।

বাংলার অবনমন বাঁচালেন অবসর ভেঙে ফিরে আসা ডেভিডদা (উৎপল চ্যাটার্জি) আর সৌরভ গাঙ্গুলি।

তার পরের মরশুমে মাত্র ৩৩ বছরে সবচেয়ে কম বয়সী কোচ হিসেবে বাংলার দায়িত্ব নিলেন পরস মামব্রে। 


ফলাফল?

আগের মরশুমে অবনমনের দোরগোড়ায় থাকা বাংলা পরপর দুই বার রঞ্জি ফাইনাল খেললো, তার আগে ১৬ বছর বাংলা ফাইনালে ওঠেনি । প্রথমবার ফাইনালে মহম্মদ কাইফের উত্তরপ্রদেশ ১৪ রানে ফার্স্ট ইনিংস লিড নেওয়ার সুবাদে জিতে গেল, পরের বার শচীন টেন্ডুলকার সমন্বিত মুম্বাই অল্পের জন্য বাংলাকে হারিয়ে জিতলো।


এরপরে পরস বরোদাকে ফাইনালে তুলেছেন। এছাড়াও কোচিং করেছেন মুম্বাই, বিদর্ভ - সব জায়গাতেই সোনা ফলিয়েছেন। 

তারপরে দায়িত্ব এলো অনুর্দ্ধ ১৯ ভারতীয় দল, ইন্ডিয়া এ টিম।


বিসিসিআই স্বীকৃতি দিতে পিছপা হয়নি। আমাদের দেশে সাদা চামড়া নিয়ে হ্যাংলামি এখনো আছে। কিন্তু বিদেশি কোচ ছেড়ে ২০২১ e পরস মামব্রেকে দায়িত্ব দেওয়া বিসিসিআই এর দুধর্ষ মুভগুলোর মধ্যে একটা ছিল। বিসিসিআই এর সিলেকশন প্যানেল বুঝেছিল,  আন্ডার ১৯ টিমের অনেকেই কয়েক বছরের মধ্যে প্রধান টিমে আসবেন , তাদের মানসিকতা বোঝার মত লোক মামব্রে ছাড়া আর নেই।


যারা অন্য স্পোর্টস নেমে যাচ্ছে সেই রাগে ক্রিকেটকে গালাগালি করেন নিয়ত, তারা নিজেদের খেলার বোর্ডকে বলবেন এইরকম ট্যাকটিক্যাল মুভ নিতে। ক্রিকেটকে গালাগালি না করেও , কুল না সেজেও অন্য খেলার উন্নতি করা যায়।


সেই মামব্রের হাতে ভারতীয় বোলিং আজ সোনা ফলাচ্ছে। চোট  সরিয়ে এসে বুমরাহ আগের চেয়েও ভয়ানক, ধারাবাহিকতার অন্য নাম শামি।

ফাইনালে হেরে গেলেও এইরকম প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া, পিষে দেওয়া বোলিং এর কখনো ভারতীয় দল করেছে? না

অর্জুনকে তৈরি করতে দ্রোণাচার্যকেই লাগে। ভারতীয় দলের দ্রোণাচার্য পরস মামব্রেকে আপামর ক্রিকেট প্রেমিকদের তরফ থেকে একটা ধন্যবাদ।

থ্যাংক ইউ স্যার। আরো দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করে যান।


✍️ Chayan Mukherjee

Popular posts from this blog

 বর্তমানে রাত্রীকালীন বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা :- ____________________________________ মুসলমান অত্যাচারের কারণে 'রাত্রি কালীন গোপন বিবাহ' রীতির প্রচলন। এসব সত্য জানার সত্ত্বেও এখনও এই রীতি বয়ে নিয়ে হচ্ছে। তার সম্ভাব্য কারণ কি কি হতে পারে? ১| দিনের বেলা সকলে ব্যস্ত থাকে নানা কাজে। কেও স্কুলে, কেও অফিসে কেও বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন। তাই সেই কাজের মাঝে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে হলে মানুষ দুপুরে কাজের শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় সেজেগুজে এসে বিয়ে দেখতে পারে। রাত্রে প্রায় সকলেই বাড়িতে থাকেন। তাই কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করা বিষয়টা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়। ২| এখন বিবাহ একটি পারিবারিক উৎসব নয়। বরং বিবাহ আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। রাতে জমকালো Light Show দেখানো যায়। বাজীর প্রদর্শনী করা যায়। এর সাথে আরও যত রকমভাবে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করা সম্ভব সবরকম চেষ্টাই করা হয়। কিন্ত দিনে এই সমস্ত ঘটনার Prime Focus একজনের উপর পড়া সম্ভব নয়, তাই রাত্রে। ৩| সামাজিক দৃষ্টিকোণ: বর্তমানে দিনে বিবাহ দেওয়াকে দারিদ্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ...

ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার তত্ত্বের Propaganda Vs Reality

ভারত বাংলাদেশ আর পাকিস্তান মিলে প্রায় 50 কোটি মুসলিম বাস করে। কিন্তু, এতো মুসলিম তো আরবেও নেই। তাহলে এতো মুসলমান এলো কোথা থেকে? অন্য ধর্মের লোক এতো দ্রুত হারে বাড়ছে না কেনো? অন্য ধর্মের 50 কোটি লোক হলোনা কেনো ? Communist আর secular দের বক্তব্য এরা হিন্দুই ছিল, কিন্তু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে আর মুসলিমদের ধর্মের উদারতার কারণে জাত-পাতহীনতার কারণে এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এরা মুসলিমদের দান-ধ্যানের নীতি, সুফি_সন্তদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত হয়ে "ইসলাম" ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তত্ত্ব  Communist রা হিন্দু সমাজকে দুইভাগে ভাগ করেন-- 1. উচ্চ বর্ণ  2. নিম্ন বর্ণ সমাজের সবচেয়ে ভক্তিবান মানুষ হলো তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষরা। তাদের কাছে ধর্মই সব। তাঁরা সব করতে পারেন কিন্তু ঠাকুর কে অবহেলা করেন না। তাঁরা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের জন্যেই ধর্মান্তরিত হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন কিভাবে❓ এটা তো গেলো পুরোনো যুগের কথা.... এবার এখনকার কথা বলি.... আচ্ছা বলুন তো, আমরা আমাদের পারিবারিক সূত্রে বা বন্ধুদের সূত্রে প্রায় প্রতিদিন নানান রকম খবর শুনি। যেমন- কারোর বিয়ে হয়েছে, কার...

বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথালয় এর সংযুক্তিকরণ

আমি কিছু ছোট ছোট old age home এবং orphan home এ গেছি এবং সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে বৃদ্ধ মানুষগুলো তাঁদের পরিবারের ছোটো-ছোটো নাতি-নাতনীদের মিস করেন। আবার অনাথালয়ের orphan দের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে তারা যদি দাদু ঠাকুমাদের মত কাওকে পেত, যারা তাদের একটু গল্প বলবে, মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আদর করবে তাহলে তারাও হয়ত অনেকটা ভালো থাকত। তাই আমার মনে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম ও orphan home যদি একই ছাদের নীচে করা সম্ভব হয় তাহলে ওইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার যে কষ্ট, সেটা সামান্য হলেও লাঘব হবে। এবার আমি এটা নিয়ে কতটা ঠিক ভেবেছি বা এটা ইমপ্লিমেন্ট করা কতটা সম্ভব বা তার প্রতিবন্ধকতার জায়গা গুলো আমি সম্পুর্ন ওয়াকিবহল নই। সম্পূর্ণ একটা ইমোশনাল ভাবনা থেকে এটা আমি ম্যাডামকে জানিয়েছি। ম্যাডাম বা ডিপার্টমেন্ট এ যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তাঁদের সবার পর্বত সমান অভিজ্ঞতা। যদি তাঁরা এই ভাবনার মধ্যে কোনো পজিটিভ দিক আছে বলে মনে করেন এবং প্রাকটিক্যাল গ্রাউন্ডে এটা ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব মনে করেন এবং এক ছাদের তলায় old age home এবং orphan home তৈরী করা...