Skip to main content

স্বাধীনতার নায়করা পর্ব ~ ১০

 ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০ সাল, সকাল বেলা...


• আর মাংস দেবো দীনেশ?

সেকি! এখনো তো শুরুই করিনি.. ।

তোমাকে দেব, বাদল?

* আপনি দিতে থাকুন! সময় হলে আমিই মানা করবো।

- পারবিনে বাদল, পারবিনে! তেরে ওঠেন দীনেশ, আমার সঙ্গে

টেক্কা দিয়ে কোনো লাভ নেই। হেরে ভুত হয়ে যাবি।


হাসি মুখে মাংস দিয়ে অন্তরালে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নিকুঞ্জবাবু পার্কস্ট্রিটের গোপন আস্তানায়। খাবার শেষ করে সাহেব সেজে চললেন বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত। মৃত্যু যেন এদের কাছে নিত্য খেলা। অথচ কতই বা বয়স তাদের ১৮ কি ২০...


রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সামনে সেদিন ট্যাক্সিটা থেমেছিল সোয়া বারোটায়। নেমে এসেছিলেন তিনি যুবক। সবার পোশাক টুপি, কোটি, টাই, ট্রাউজার। প্রহরীদের কারো মনে নূন্যতম সন্দেহ হয়নি। সপ্রতিভ ভঙ্গিতে আর প্রত্যয়ী পদক্ষেপে বিনয়-বাদল-দীনেশ সোজা লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সিম্পসনের সামনে। সিম্পসন শুধু মুখটা তুলতে পেরেছিল। তিন মূর্তির রিভলবারের একঝাঁক গুলি ঝাঁঝরা করে দিল লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সিম্পসনের শরীর। ইংরেজি ক্যালণ্ডারে সেদিন ছিল আজকের মত ৮ ডিসেম্বর। ইতিহাসের অমর ত্রয়ী বিনয়, বাদল, দীনেশের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের বীরগাথা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে আছে।


বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলার আই জি কারা কর্নেল নরম্যান সিম্পসনকে হত্যা করা হবে তাঁর নিজের অফিস রাইটার্স বিল্ডিংয়ে৷ অপারেশন সিম্পসন এর দিন স্থির হয়েছিল ৮ডিসেম্বর। ওদিকে ঢাকার তৎকালীন ইনস্পেকটর অফ পুলিশ মিস্টার লোম্যান কে, প্রকাশ্যে খুন করে ডাক্তারির ছাত্র বিপ্লবী বিনয় বসু ঢাকা থেকে কলকাতায় এসে আত্মগোপন করতে রসময় শূরের সঙ্গে এলেন বিপ্লবী রাজেন গুহের মেটিয়াবুরুজের পাহাড়পুর রোডে কলুটোলা পল্লীর বাড়ি। সেইসময় তাঁর স্ত্রী সরযূবালা দেবী সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে আঁতুরঘরে আছেন।


বিপ্লবী বিনয় বসু তাদের বাড়িতে আসতেই তিনি তথাকথিত সামাজিক ও সংস্কারগত বাধাকে হেলায় উড়িয়ে দিলেন, নিজের ছেড়ে আসা আঁতুরঘর নিখুঁত ভাবে ধোয়ামোছা করে,স্নান করে চলে এসেছেন নিজেদের শোবার ঘরে, বিনয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল তাঁর ছেড়ে আসা সুন্দর করে ধোয়ামোছা আঁতুরঘর।


মেটিয়াবুরুজের ওই গোপণ আস্তানায় একমাত্র যেতেন বিপ্লবী রসময় শূর। রাজেন গুহের স্ত্রী বিনয়কে দিয়েছিলেন নিরাপদ,নিশ্চিন্ত আশ্রয়।সকালে রাজেন গুহ বেরিয়ে যেতেন ওয়ার্কশপে, বৌদির সঙ্গে গল্পগুজবে কাটত বিনয়ের কলকাতায় আত্মগোপনের দিনগুলি। সিল্কের একটা লাল রঙের লুঙ্গি প্রায় তিনি পরতেন,তবে খুব রঙ উঠত লুঙ্গিটার, বিনয়ের পেটে কোমরে সেই লাল রঙ লেগে থাকত, একেবারে ঘরে বসে থাকায় মেদের আনাগোনা শরীরে। রাজেন গুহের ছেলেমেয়েরা তাঁর নাম দিয়েছিল 'লাল ভুঁড়ি কাকু'।


বিনয়ের স্বভাবে অহেতুক চঞ্চলতা ছিল না,রাতে দু'চারবার অবশ্য উঠতে হত,কারণ পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সরকার দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। সকালে ঘুম ভাঙতো একটু দেরীতে, বৌদি কাজকর্ম সেরে একটু বেলা হলেই চা তৈরি করে নিয়ে এসে বিনয়ের মশারি উঠিয়ে ডাকতেন 'ঠাকুরপো এবার ওঠ, চা খাও'।বৌদির আদর যত্নে বিনয় ছিলেন পরম নিশ্চিন্তে।


রাজেন গুহের বাড়ি থেকে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের আগের মুহূর্তে বিনয়ের মুখে মিষ্টি হাসি, বিমল জ্যোতি, আর চোখে সুদূরের স্বপ্নাপরম মমতায় বৌদি খাইয়ে দিলেন প্রিয় ঠাকুরপোকে বৌদির চোখ ঝাপসা, চেষ্টা করেও চোখের জল থামাতে পারছেন না, বিনয় প্রণাম করল বৌদিকে,ছোট ভাইপো, ভাইঝিকে জানাল নিবিড় স্নেহ, রওনা হল সন্মুখের পথে,বৌদি সরযূ দেবীর অঝোর কান্না,রাজেন গুহ বললেন 'হাসিমুখে বীরকে বিদায় দাও, তবেই তো তোমার দেশজননীর সেবা সার্থক হবে।

বিনয় বীরদর্পে এগিয়ে গেল, পাইপ রোড তাঁর আপাতত গন্তব্য,সঙ্গে রসময় শূর।তাঁরা পাইপ রোডে পৌঁছনোর কয়েক মিনিটের মধ্যে বাদল -দীনেশকে নিয়ে হাজির হলেন বিপ্লবী নিকুঞ্জ সেন।তিন যুবক উঠে বসলেন একটি ট্যাক্সিতে,রওনা দিল ট্যাক্সি,গন্তব্য রাইটার্স বিল্ডিং, বেলা সাড়ে বারোটা থেকে পৌনে একটা যখন ব্রিটিশদের রাইটার্স বিল্ডিং কার্যত তিন অসম সাহসী বাঙালি তরুণের নিয়ন্ত্রণে। স্তব্ধ বারান্দায় বীর ত্রয়ীর কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে 'বন্দে মাতরম'। ইংরেজদের প্রশাসনিক ভরকেন্দ্র মুখরিত হচ্ছে ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদী স্লোগানে। পুলিশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় কি করবে বুঝতে পারছে না।তারা যে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে এভাবে হামলা করতে পারে দেশের বীরশ্রেষ্ঠ বিপ্লবীরা...

জয়হিন্দ



© এক যে ছিলো নেতা


Popular posts from this blog

ছেলেরা কেন দিনদিন 'বৌদিবাজ' হয়ে উঠছে?

সমাজটা খুবই খারাপ দিকে যাচ্ছে। ছেলেরা এখন বৌদিবাজ হয়ে উঠেছে! তারা একবার করে প্রেমে ছেঁকা খাওয়ার পর আর অন্য কোনও প্রেমিকা জোটায় না, বৌদিদের সাথে গল্প করে। কারণ - ১| ধোঁকা খায় না ২| হৃদয়ে আঘাত লাগে না ৩| Break up 💔 বলে কিছু থাকে না ৪| অনেকটা Stunt বাজীর মতো, মাথায় কোনো চাপ নেয়ার দরকার পরে না  আর একটা বিষয় হলো এখন বেশিরভাগ ছেলে পড়াশোনা দিকে ব্যস্ত। তাই তাদের হাতেও বেশি সময় থাকে না। আবার বৌদিদের হাতেও বেশি সময় সীমিত। তাই একটা Understanding বজায় থাকে। আরেকটা জিনিস হল নতুন প্রেমিকারা যেরকম নানারকম চাপ দেয়। বৌদীরা অনেকটা বোঝে ব্যাপারগুলো। যেমন- ফাঁকা পকেট, কম সময়, Relation Public না করা... এসব জিনিস। সেই কারণে তারা এতটা চাপ দেয় না। অল্পবয়সী মেয়ের একটু জেদি হয়। তাই তারা অকারণেই ঝগড়া করে যা এমনিতেই চাকরি আর ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত ছেলেদের ভালো লাগে না। তাই তারা বৌদিদের দিকেই ঝোঁকে। বিয়ে তো অবশ্য ভালো কোনো মেয়ে দেখেই করবে, তার আগের সময়টা অন্য দিকে দেয় - বৌদিদের সাথে আড্ডা মারে। বৌদিদের সাথে কথা বলে আর কিছু হোক বা না হোক মানসিক শান্তি আছে। আমার বৌদিবাজ বন্ধুদের জন্য 💖

বলি প্রসঙ্গে আমার মতামত

ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এর চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better, তাহলে বলতে হয় আপনার জীবন আর মৃত্যুর sence নেই। কেন ছাগলের মৃত্যুটাই মৃত্যু? চালকুমড়ো বা আঁখের মৃত্যুটা মৃত্যু নয় কেন? আপনার যদি জীবন আর মৃত্যুর সম্বন্ধ প্রকৃত জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনটি ক্ষেত্রেই আপনি সমান দুঃখ পেতেন। কিন্ত আপনার মনে হয় ছাগল বলি দেওয়ার চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better।  আপনার এই প্রকৃতি দেখে বলতে হয়, জীবন বাঁচানো আপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং আপনি রক্তকে ভয় পান, অস্ত্র কে ভয় পান। আপনার বাস্তবিক বোধ থাকলে আপনি অস্ত্রের আঘাতে চালকুমড়ো বা আঁখের এবং ছাগ তিনটি বলির ই বিরোধীতা করতেন। কারণ তিনটির প্রকৃতিই একই রকম, এই তিনটে থেকেই অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হতে পারতো। তাই তিনটির হত্যাই একই রকম ক্ষতি করে। কিন্ত, শুধুমাত্র ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এটি মানুষের হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমরা কি সত্যিই অহিংস?  আমাদের মায়েরা প্রতিদিন জ্যান্ত মাছগুলো দুহাতে ধরে বঁটিতে ঘচাং করে একবারে জ্যান্তই কেটে ফেলেন। শহরের মাছ-মাংস বিক্রেতারাও একইভাবে কাটেন। তখন কি সেটা নৃশংসতা নয়? কেন আমরা ব

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা। 💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।  🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জ