Skip to main content

স্বাধীনতার নায়করা পর্ব ~৩

তিনি বাংলার প্রথম বোমার কারিগর, ভারতের প্রথম পতাকা এঁকেছিলেন তিনিই, কিন্তু আজ সেই মানুষটাই ইতিহাসে উপেক্ষিত। বিস্মৃতি সরিয়ে ফিরে দেখা 'অগ্নিযুগের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য' হেমচন্দ্র কানুনগো...


ত্রিবর্ন রঞ্জিত পতাকা, গেরুয়া, সাদা, সবুজ। ভারতের জাতীয় পতাকা। কিন্তু এই ত্রিবর্ণ পতাকার প্রথম রূপ দিয়েছিলেন এক বাঙালি। কে মনে রেখেছেন হেমচন্দ্র কানুনগো কে? কেউ না। কেউ জানলই না মানুষটাকে।


আসল নাম হেমচন্দ্র দাস কানুনগো। বিপ্লবী ভারতবর্ষের প্রথম জাতীয় পতাকার স্কেচ তৈরি করেন বিদেশের মাটি থেকে। সালটা ১৯০৭।জার্মানির স্টুয়ার্টগার্টে সেই পতাকা তুলে ধরেছিলেন ভিকাজী রুস্তম মাদাম কামা,একজন ভারতপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামী পার্সি মহিলা। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে বিশ্ব সোশালিস্ট কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয় তাতে মাদাম ভিকাজি কামার সাথে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। হেমচন্দ্র চিত্রশিল্পী ছিলেন বলে, কথিত আছে মাদাম কামার অনুরোধে লাল, গেরুয়া ও সবুজ রঙের তেরঙ্গা পতাকা তৈরি করেন এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ আগস্ট প্রবাসী ভারতীয়দের সম্মেলনে মাদাম কামা সেই পতাকা উত্তোলন করে সারা বিশ্বে নজর কাড়েন। পতাকার মধ্যেও ছিল বিভিন্ন বার্তা ও তথ্য। তবে বেঙ্কাইয়ার জাতীয় পতাকার রূপ দিয়ে পরিবর্তন করে মাঝে সাদা রঙে চরকার জায়গায় অশোক চক্র আঁকেন। তা গৃহীত হয় ১৯৪৭ এর ২২ জুলাই। হেমচন্দ্র থেকে যান উপেক্ষিতই।


হেমচন্দ্র মেদিনীপুর টাউন স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। সেখানে মেদিনীপুর কলেজে এফ.এ ক্লাসে পড়বার সময় অভিভাবকদের জোরাজোরিতেই ক্যাম্বেল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু শৈশব থেকেই ছবি আঁকার অভ্যাস ছিল। শেষে কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে এবং বউবাজার আর্ট গ্যালারিতে চিত্রবিদ্যা শিক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ড্রয়িং শিক্ষক এবং কলেজে রসায়নে ডেমনস্ট্রটরের চাকরি নেন। একদিকে আঁকার হাত অপরদিকে রসায়ণ, দুটিকেই তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন স্বাধীনতার বিপ্লবে।


হেমচন্দ্র ১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সংস্পর্শে আসেন এবং তার মাধ্যমেই অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ইংরেজবিদ্বেষ বশত ইংরেজ তাড়ানোর উদ্দেশ্যে অরবিন্দ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কিছু লাট- বেলাটকে হত্যার জন্য যে গুপ্তসমিতি গঠন করেছিলেন, হেমচন্দ্র তাতে যোগ দিয়েছিলেন। বারীণ ঘোষের বাংলা ও আসামে নানাস্থানে অপরিণত পরিকল্পনা প্রসূত বার্থ অভিজানের সঙ্গে যুক্ত এই নায়ক অনুধাবন করলেন যে, যথার্থ বিপ্লবের জন্য যে সংঘঠন আর হাতিয়ার দরকার তা তাঁদের নেই। এমনকি, এই অভাব বোধটুকুও নেতা উপনেতার কারোর নেই। উপযুক্ত বোমা তৈরি, বাস্তব বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হবার জন্য তিনি বিদেশযাত্রা করেছিলেন।


ইংল্যান্ডে কিছুকাল কাটিয়ে বুঝে গিয়েছিলেন যে পরিবেশ মোটেই অনুকূলে নেই। তখনকার প্রবাসী ভারতীয়রাও বিশ্বাস করতে পারতেন না যে, ইংরেজের সঙ্গে লড়াই করে দেশের স্বাধীনতা সম্ভব। অবশেষে একজন বিদেশী বিপ্লবীর পরামর্শে তিনি ফ্রান্সে যাওয়া স্থির করলেন। হেমচন্দ্র প্যারিসে নানাভাবে প্রচেষ্টার ফলে আসল বিপ্লবীদের গুপ্তসমীতির সদস্য হতে পেরেছিলেন এবং শক্তিশালী বোমা তৈরির ফর্মুলা শিখেছিলেন। যথাযোগ্য শিক্ষাগ্রহণের পর দেশে ফিরে কোমড় বেঁধে দেশের কাজে ব্রতী হন।


সেই শিক্ষা তিনি দেশের বিপ্লবীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিদেশ থেকে বোমা তৈরি শিখে এসে তিনি কলকাতা ও চন্দননগরে বোমা তৈরির শিবির করেন। আলিপুর বোমা মামলার অন্যতম রূপকার এই হেমচন্দ্র কানুনগোই। তাঁর শিষ্য ক্ষুদিরাম বসুর হাতেও বোমা তুলে দিয়েছিলেন। আলিপুর বোমা মামলায় তাঁর দ্বীপান্তর হয়। ১৯২০ সালে দীর্ঘ ১১ বছর পর আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পেয়ে রাধানগর গ্রামে নিজের তৈরি বাড়িতেই শেষ জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৫১ সালে ভারতমায়ের এই কৃতি সন্তানের মৃত্যু হয়।


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে 'অগ্নিযুগের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য ' বলে অভিহিত করেছিলেন...



- জয়হিন্দ। বন্দেমাতরম।

তথ্যসূত্রঃ Kolkata 24x7

© এক যে ছিলো নেতা।

Popular posts from this blog

 বর্তমানে রাত্রীকালীন বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা :- ____________________________________ মুসলমান অত্যাচারের কারণে 'রাত্রি কালীন গোপন বিবাহ' রীতির প্রচলন। এসব সত্য জানার সত্ত্বেও এখনও এই রীতি বয়ে নিয়ে হচ্ছে। তার সম্ভাব্য কারণ কি কি হতে পারে? ১| দিনের বেলা সকলে ব্যস্ত থাকে নানা কাজে। কেও স্কুলে, কেও অফিসে কেও বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকেন। তাই সেই কাজের মাঝে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে হলে মানুষ দুপুরে কাজের শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় সেজেগুজে এসে বিয়ে দেখতে পারে। রাত্রে প্রায় সকলেই বাড়িতে থাকেন। তাই কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করা বিষয়টা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়। ২| এখন বিবাহ একটি পারিবারিক উৎসব নয়। বরং বিবাহ আত্ম অহংকার, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। রাতে জমকালো Light Show দেখানো যায়। বাজীর প্রদর্শনী করা যায়। এর সাথে আরও যত রকমভাবে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করা সম্ভব সবরকম চেষ্টাই করা হয়। কিন্ত দিনে এই সমস্ত ঘটনার Prime Focus একজনের উপর পড়া সম্ভব নয়, তাই রাত্রে। ৩| সামাজিক দৃষ্টিকোণ: বর্তমানে দিনে বিবাহ দেওয়াকে দারিদ্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ...

ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার তত্ত্বের Propaganda Vs Reality

ভারত বাংলাদেশ আর পাকিস্তান মিলে প্রায় 50 কোটি মুসলিম বাস করে। কিন্তু, এতো মুসলিম তো আরবেও নেই। তাহলে এতো মুসলমান এলো কোথা থেকে? অন্য ধর্মের লোক এতো দ্রুত হারে বাড়ছে না কেনো? অন্য ধর্মের 50 কোটি লোক হলোনা কেনো ? Communist আর secular দের বক্তব্য এরা হিন্দুই ছিল, কিন্তু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে আর মুসলিমদের ধর্মের উদারতার কারণে জাত-পাতহীনতার কারণে এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এরা মুসলিমদের দান-ধ্যানের নীতি, সুফি_সন্তদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত হয়ে "ইসলাম" ধর্ম গ্রহণ করেছে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তত্ত্ব  Communist রা হিন্দু সমাজকে দুইভাগে ভাগ করেন-- 1. উচ্চ বর্ণ  2. নিম্ন বর্ণ সমাজের সবচেয়ে ভক্তিবান মানুষ হলো তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষরা। তাদের কাছে ধর্মই সব। তাঁরা সব করতে পারেন কিন্তু ঠাকুর কে অবহেলা করেন না। তাঁরা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের জন্যেই ধর্মান্তরিত হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন কিভাবে❓ এটা তো গেলো পুরোনো যুগের কথা.... এবার এখনকার কথা বলি.... আচ্ছা বলুন তো, আমরা আমাদের পারিবারিক সূত্রে বা বন্ধুদের সূত্রে প্রায় প্রতিদিন নানান রকম খবর শুনি। যেমন- কারোর বিয়ে হয়েছে, কার...

বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথালয় এর সংযুক্তিকরণ

আমি কিছু ছোট ছোট old age home এবং orphan home এ গেছি এবং সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে বৃদ্ধ মানুষগুলো তাঁদের পরিবারের ছোটো-ছোটো নাতি-নাতনীদের মিস করেন। আবার অনাথালয়ের orphan দের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে তারা যদি দাদু ঠাকুমাদের মত কাওকে পেত, যারা তাদের একটু গল্প বলবে, মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আদর করবে তাহলে তারাও হয়ত অনেকটা ভালো থাকত। তাই আমার মনে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম ও orphan home যদি একই ছাদের নীচে করা সম্ভব হয় তাহলে ওইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার যে কষ্ট, সেটা সামান্য হলেও লাঘব হবে। এবার আমি এটা নিয়ে কতটা ঠিক ভেবেছি বা এটা ইমপ্লিমেন্ট করা কতটা সম্ভব বা তার প্রতিবন্ধকতার জায়গা গুলো আমি সম্পুর্ন ওয়াকিবহল নই। সম্পূর্ণ একটা ইমোশনাল ভাবনা থেকে এটা আমি ম্যাডামকে জানিয়েছি। ম্যাডাম বা ডিপার্টমেন্ট এ যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তাঁদের সবার পর্বত সমান অভিজ্ঞতা। যদি তাঁরা এই ভাবনার মধ্যে কোনো পজিটিভ দিক আছে বলে মনে করেন এবং প্রাকটিক্যাল গ্রাউন্ডে এটা ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব মনে করেন এবং এক ছাদের তলায় old age home এবং orphan home তৈরী করা...