Skip to main content

|| সুভাষ ঘরে ফেরে নাই ||

অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করতাম সুভাষ ফিরে আসবে। দেশ পাল্টে যাবে..সবাই শুধরে যাবে..সব ঠিক হয়ে যাবে।

হঠাৎ কোথাও কোনো দেয়ালে বড়ো বড়ো করে সে লেখাও দেখতাম - “নেতাজি ফিরে আসবে।” 

কারা লিখতো কে জানে। তবে কী যে এক স্বস্তি আসতো! ভাবতাম আড়াল থেকে তিনি সব দেখছেন। সব নজরে রাখছেন। একদিন বিচার হবে।

সালটা একাত্তর কি বাহাত্তর হবে। সারা রাজ্যে তখন ভীষণ এক রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বাবার চাকরি সূত্রে আমরা তখন দুর্গাপুর থাকি। ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি তখন। দেখেছিলাম সে অস্থিরতার ভয়ানক চেহারা। রোজই কোথাও না কোথাও রক্তপাত কি খুনের ঘটনা ঘটতো। একদিন স্কুলে ক্লাস চলছে। হঠাৎ ভীষণ শব্দে সবাই চমকে গেলাম। আমরা বন্দুকের শব্দ চিনে গেছিলাম। খুব কাছেই কোথাও গুলি চলেছে বুঝলাম। মাস্টারমশাই দৌড়ে ক্লাসের দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমরা ক্লাস ঘরের এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর দরজায় কড়া নেড়ে পিয়ন এসে ছুটির নোটিস দিয়ে গেলো।

মাস্টারমশাই বললেন, “তোমরা সবাই বাড়ি চলে যাও, কোথাও দাঁড়াবে না, কোনো দিকে তাকাবে না।” 

কিন্তু দাঁড়িয়ে যেতেই হলো। স্কুল পাঁচিলের ওপারেই সে খুন। লাস দেখে বুকটা ধক করে উঠলো। খুব চেনা মানুষ। মিছিলে বহুবার দেখেছি। ছবি আঁকতো দেয়ালে, আঁকার স্কুলও চালাতো বাড়িতে। কিছু দিন আগেই বিয়ে হয়েছে। তার বৌ সে দেহের উপর হুমড়ি খেয়ে আছে। পুলিশ তাকে সরাবার চেষ্টা করছে। অমন করুন কান্না আমি আর কখনো শুনিনি। .. জীবনের অর্থ বদলে দেয়।

তারপর যা হয়ে থাকে, দলে দলে মানুষ সমবেদনা জানাতে গেলো। ... কিন্তু সে বৌ দরজা খোলেনি কারোর ডাকেই। তারপর শুনলাম বাড়িতে তালা দিয়ে সে বৌ কোথায় চলে গেছে। বাড়ির দেয়ালে স্বামীর আঁকার সব রং দিয়ে সে এক চিঠি লিখে গেছে, তার শেষ দুটি লাইন আজও মনে আছে,

“নেতাজি দাদা তুমি কবে আসবে? ...এসে এর বিচার কোরো।”

এলাকায় বেশ আলোড়ন ফেলেছিলো এই চিঠি। দূর দূর থেকে মানুষ আসতো ও চিঠি পড়তে। চিঠির পাশে তারাও ইটের টুকরো দিয়ে লিখে যেতো, "ফিরে এসো এবার নেতাজি... ফিরে এসো বোন।”

স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সে ছবি দিয়ে খবর হয়েছিলো অনেক বার সেদিন মনে হয়েছিল এ করুন চিঠি পড়ে তিনি নিশ্চই না এসে আর পারবেন না। শুধু আমি নয়, এলাকার সকলেই তা ভাবতো।... না, তিনি আসেন নি। তবে অপেক্ষারও শেষ ছিলো না।

ক্লাসে একদিন স্বাধীনতা বিপ্লবেরই কোনো একটি অধ্যায় নিয়ে পড়া হচ্ছিলো। ঠিক মনে নেই কোন ঘটনার উপর তা ছিলো। যাইহোক পড়াতে পড়াতে স্যার হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা ধরো দেশ এখনও পরাধীন। তো, তোমরা কে কে স্বদেশী দলে নাম লেখাবে? দেশের জন্য জীবন দিতেও পিছুপা হবে না?” 

উত্তেজিত হয়ে সকলেই হাত তুললাম। স্যার, সবার দিকে তাকাতে তাকতে আমার ক্লাসমেট বিভুর দিকে লক্ষ্য যেতে বললেন, “আরে বিভু! তুইও জীবন দিবি?” বিভু খুবই ভীতু টাইপের ছিলো। ক্লাসে একবার এক ইঁদুর ওর গায়ে উঠে জামায় ঢুকে যাওয়াতে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলো। এ কথা স্কুলের সকলেই জানতো। স্যারের সাথে আমরাও খুব হাসছিলাম। বিভু মাথা নিচু করে বললো, “হ্যাঁ, আমি ভীতু। কিন্তু যদি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস এসে বলে জীবন দিতে.. আমি দিয়ে দেবো।” বিভু থর থর করে কাঁপছিলো সেদিন।

সারা ক্লাস চুপ হয়ে গেলো। স্যারও চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলেন বিভুর দিকে। সেদিন আমি বিভুর আগুন চোখ দেখেছিলাম।

নাহ!..তিনি আসেন নি। তার মতোও কেউ আর আসেনি। এলে নিশ্চয়ই অনেক বিভু ই জেগে যেতো...



অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়

Popular posts from this blog

হিন্দু বিরোধী, বৈষম্যমূলক OBC আইন

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসে। আর তারপরই রাজ্যের তথাকথিত পিছিয়ে পড়া (?) মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কল্পতরু হয়ে ওঠেন মমতা ব্যানার্জি। মুসলিমদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন। আর সেই সময় চুপিসারে ২০১২ সালে পাস হয়ে যায় একটি আইন- “ The West Bengal Backward Classes (Other than Scheduled Castes and Scheduled Tribes) (Reservation of Vacancies in Services and Posts) Act, 2012,”  🔴কি ছিল সেই আইনে? আইন অনুযায়ী OBC ( Other Backward Classes ) কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়; OBC-A এবং OBC-B । আর এইভাবে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ঢালাও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দিয়ে দেওয়া হয়। আর সেই সংরক্ষণ দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের কোটার ভাগ কেটে। এখানে উল্লেখযোগ্য, OBC-তে হিন্দুরা যে সংরক্ষণের সুবিধা লাভ করতেন, তা পিছিয়ে পড়ার মাপকাঠিতে। তাছাড়া, সংরক্ষণ তালিকায় তাদের জাতির সঙ্গে হিন্দু কথা লেখা থাকতো না। কিন্তু OBC-A এবং OBC-B ক্যাটাগরিতে  যাদের পিছিয়ে পড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তাদের জাতির পাশে পরিষ্কার ‛মুসলিম’ কথা...

𝒯𝒽𝑒 𝐻𝒾𝓃𝒹𝓊𝓉𝓋𝒶 𝒟𝒶𝒾𝓁𝓎

||হিন্দুত্বের সারাদিন ||   ১|  জনপ্রিয়তার নিরিখে রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে ফের শীর্ষে মোদি, বলছে মার্কিন সমীক্ষা। মর্নিং কনসাল্টের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১২ রাষ্ট্রপ্রধানকে পিছনে ফেলে জনপ্রিয়তার নিরিখে এবারও একনম্বরে নরেন্দ্র মোদি। তাঁর ঝুলিতে ৭৭ শতাংশ জনপ্রিয়তা।  আমেরিকার সংস্থা মর্নিং কনসাল্ট বিভিন্ন দেশের প্রধানদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সমীক্ষা করে। ৭ দিন অন্তর সমীক্ষা করেন তারা। এবারের সমীক্ষাতেও মোদির মুকুটে নয়া পালক জুড়েছে। এবারের তালিকায় একনম্বরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (৭৭ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওবারডার (৬৩ শতাংশ), তৃতীয় স্থানে ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। সাত নম্বরে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২| "সিনেমাটার জন্য তো সমাজ ভেঙে ২ টুকরো হয়ে যাবে!'' The Kashmir Files-নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ নানা পটেকরের (Support link- https://dainik-b.in/NGBwPX0Wvob )

Parallel Government in Hindu Rastra

অনেকেই এখনও confusion এ আছেন। ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দিই। আপনাদের কি মনে হয়? বিনা বাক্যে মুসলমানদের হাতে আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো হিন্দুরা? কি মনে হয় বিনা যুদ্ধেই বালোচিস্তান মুসলমানদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলো? কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ছাড়াই মুসলমানরা হিন্দুদের দেশগুলো দখল করেছে? কোনো প্রতিবাদ হয়নি? কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি?  পোস্ট টা লেখার আগে ভাবছিলাম লেখার আদৌ দরকার আছে কি না? জ্ঞানপাপীরা এসব সমস্ত কিছুই জানে, তবুও মানে না। আসলে অন্ধের চেয়েও অন্ধ হওয়ার ভান করে যারা তারা কিছুই দেখতে পায় না। অনেকেরই ধারণা হিন্দুরা হয়তো বিনা যুদ্ধেই মুসলমানদের হাতে আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো হিন্দুরা। বিনা যুদ্ধেই হিন্দুরা মুসলমানদের হাতে বালোচিস্তান ছেড়ে দিয়ে এসেছিলো? এমন ধারণা যে সর্বৈব মিথ্যা তার প্রমান-  1. https://youtu.be/VSIyCwVQRio 2. https://youtu.be/VSIyCwVQRio 3. https://youtu.be/re8txYC56vo এখন প্রশ্ন, হিন্দুরা আফগানিস্তান, বালোচিস্তান ছেড়ে আসতে বাধ্য হলো কেন? এর উত্তর রাজশক্তির পতনের সাথে সাথেই হিন্দুদের পতন। ধরুন একজন হিন্দু রাজা কোনো মুসলমান রাজার সাথে পরাজিত হল...