Skip to main content

'সনাতন' এর স্বরূপ!

'ধর্ম' শব্দটি ঐতিহাসিক বৈদিক যুগ থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে তার অর্থ এবং ধারণা বেশ কয়েক সহস্রাব্দ ধরে বিবর্তিত হয়েছে। ধর্ম বলতে এখন সে-সমস্ত আচরণকে বোঝায় সে অর্থে আগে ব্যবহার করা হত না।

'ধর্ম’ শব্দটির অর্থ হল ‘যা ধারণ করে'। অর্থাৎ, যা ধারণ করে মানুষ সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও পবিত্র জীবনযাপন করতে পারে তাকেই বলে ধর্ম। মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব। যার মনুষ্যত্ব নেই, সে পশুর সমান।

আর, সনাতন শব্দের অর্থ হল- চিরন্তন, শাশ্বত, নিত্য, চিরস্থায়ী; অপরিবর্তনীয়। আর, যে ধর্মের কখনো পরিবর্তন বা বিনাশ হয় না, যা ছিল, আছে এবং থাকবে, তাই হল সনাতন ধর্ম। যেমন চুম্বকের ধর্ম চৌম্বকত্ব, রাবারের ধর্ম স্থিতিস্থাপকতা, পশুর ধর্ম পাশবিকতা... বিষয়টা ঠিক তেমনি। যার চিরন্তন শাশ্বত নিত্য সত্তাকে পরিবর্তন করা যায় না সেটাই সনাতন ধর্ম। এটি গেল সনাতন বাহ্যিক বা বস্তুগত দিক।

সনাতনকে হল একটি সংস্কৃতিক শব্দ, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে সাংস্কৃতিক ভাবধারা, প্রকৃত জীবনযাত্রার ছক।  সনাতন ধর্ম হল একটি চিরস্থায়ী পথ। সনাতন ধর্ম হল এমন একটি পথ যার শুরু বা শেষ নেই। এটি একটি বহুকাল ব্যাপি জীবিত দর্শনশাস্ত্র। এটি হল একটি সার্বজনীন ঐতিহ্য, Lifestyle. যারা এই পথ অনুসরণ করেন তারাই সনাতনী। 

তবে সনাতন বলতে এখন অনেকে শুধুমাত্র হিন্দুধর্মের অপর নাম হিসেবেই জানেন। কিন্ত, ১৯ শতকের আগে পর্যন্ত সনাতন শব্দের ব্যবহার এত সংকীর্ণ ছিল না, সীমিত ছিল না ধর্মের মধ্যে। সনাতন শব্দের অর্থ ব্যবহার হত আরও ব্যাপক অর্থে। তারপর ১৯ শতকের শেষের দিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সময় “সনাতন” শব্দটি হিন্দুধর্মের অপর নাম হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছিল। এর কারণ ছিল "হিন্দু" নামটি বিদেশী আরবদের দেওয়া ফার্সি শব্দের নাম। তাই আরবদের দেওয়া এই ফার্সি শব্দের নাম হিন্দু যেন ব্যবহার না করা হয় সেই উদ্দেশ্যেই সনাতন নামটিকে Promote করা হয়। 

এই সনাতন নামটিকে Promote করার পিছনে হিন্দুধর্মের প্রকৃত গুণ টি লুকিয়ে রয়েছে, যা হল চিরন্তনতা। কারণ সনাতন ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হল - চিরন্তনতা, নিত্যতা, চিরস্থায়ীত্ব। এর না কোনো উৎস আছে আর না কোনো অন্ত আছে। তাই সনাতন নামটি হিন্দুদের মধ্যে প্রায় সর্বজনস্বীকৃত। 


এখন প্রশ্ন সনাতনী কারা?

সনাতন ধর্ম হ'ল জীবনের সেই মাত্রা যার কখনও পরিবর্তন হয় না, যা আমাদের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। একটি পোঁকা হোক বা পতঙ্গ, পাখি বা পশু কিংবা কোন গাছ, যাই হোক না কেন, এ সব কিছুই সনাতন ধর্মের দ্বারা চালিত। সেই মৌলিক নীতিসমূহ সমগ্র অস্তিত্বকে পরিচালনা করে। এটা হ'ল অস্তিত্বের ধর্ম।

ধর্মের অর্থ সাম্প্রদায়িক ধর্মমত নয়। এই সংস্কৃতিতে আমরা সাম্প্রদায়িক ধর্ম বলে কিছু জানি না। আমরা কেবল এটাই দেখছি যে, সবার জীবনকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবে বিকাশ ঘটানোর পদ্ধতি বা নিয়ম কি কি। আপনি যতক্ষণ না সবাই এই নীতিগুলো ঠিকমতো মেনে চলছেন, ততক্ষণ আপনার জীবন ঠিকভাবে চলবে না। এই নিয়মগুলো বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়, এগুলো অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। যদি আপনি নিয়মগুলো জানেন এবং সেগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলেন, তাহলে আপনার জীবন খুবই মসৃণ হবে। যদি না জানেন, অকারণেই আপনার দুর্ভোগ হবে। 

সনাতন ধর্ম কি হিন্দুদের? 

সনাতন ধর্ম হল সবার। ধর্ম একটাই - যা চিরন্তন অপরিবর্তনয়। গুণসম্পন্ন। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি ভারতীয় হোন কিংবা ইউরোপীয় হোন, হিন্দু হোন কিংবা অ-হিন্দু হোন না কেন, সনাতন ধর্ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য; কারণ এটা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষের একে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া কোন ফৌজদারী আইন নয়। এটা হল অস্তিত্বের ধর্ম। জীবনের আইন।এগুলো সেই নীতি যা জীবনের মৌলিক প্রক্রিয়াটিকে (বাঁচা-মরা) নিয়ন্ত্রণ করে।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন, যদি আপনি ট্রাফিক নিয়ম বুঝতে পারেন এবং সেইমত গাড়ি চালান, আপনার কোন পুলিশ কর্মীর প্রয়োজন নেই। এই ট্রাফিক নিয়ম সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, সব ধর্মের ক্ষেত্রেই। অর্থাৎ, সে যে ধর্মেরই প্রতিনিধি হোক না কেন সবার জন্য নিয়ম একই। জীবনের নিয়ম এটাই। সেটাই হল সত্য, সেটাই হল সনাতন। 

Popular posts from this blog

Indian Population 2050

আমার কথা প্রথমে কিছুটা ভিত্তিহীন মনে হয়। কিন্ত পরে সেটাই সত্যি হয়ে যায়। কিছু তথ্য দিয়ে রাখি, ১| আগামী বছর ভারতের জনসংখ্যা চিনকে ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হবে ভারত। বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা 141 কোটি, আর চিনের জনসংখ্যা 142 কোটি। আগামী 1 বছরে চিনকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। ২| আপনি যেটা ভাবছেন সরকার কিন্ত সেটা ভাবছে না। সরকারের ভাবনা হলো, একটি বৃহৎ জনসংখ্যা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। সরকার Man কে Manpower এ রূপান্তরিত করার কথা ভাবছে। সরকার ভারতের জনসংখ্যা বাড়াতে চলেছে। 2050 এ ভারতের জনসংখ্যা বেড়ে হবে 166, আর চিনের জনসংখ্যা কমে হবে 131 কোটি। ৩| ভারতের স্বপ্ন সবচেয়ে কর্মক্ষম, সবচেয়ে তারুণ্যে ভরা দেশে পরিণত হওয়া। এই স্বীকৃতি ভারতের কাছে থাকবে না 2050 এ ভারতের মানুষের কর্মক্ষমতা এবং তারুণ্য হ্রাস পাবে। বরং পাকিস্তান, আমেরিকা এবং বাংলাদেশ এই তালিকার শীর্ষে থাকবে। ৪| জন্ম_নিয়ন্ত্রণের যে কুফল চিন ভোগ করছে ভারত তা চাই না। তাই জন্ম_নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটবে না ভারত। তাছাড়া দক্ষিণে জন্ম বৃদ্ধির হার অনেক কম। উত্তরে জন্ম_হার অনেক বেশি। ফলে একটি উত্...

संस्कृत वर्णमाला

अ आ इ  संस्कृत वर्णमाला अ अ अश्ब; आ आ आम्रः। अश्बः चतुरः ; आम्रः मधुरः। इ इ इक्षु: ; ई ई ईशाः।  रक्षतु सर्वानपि परमेशः। उ उ उदकम्, ऊ ऊ ऊर्मि । उदकम् प्रवहति, प्रभवति ऊर्मिः। ऋ ऋ ऋषिः ; ऋषिं नमामः। ऋ, ऌ इति वयं पठामः। ए ए एडः, स्थूलः पुष्ठः। ऐ ऐ इन्द्रजालिकः । ओ ओ ओतुः, 'म्याव् म्याव् ओतुः। ओ ओषधम्, मास्तु मास्तु। 

শশাঙ্ক

অপরাজিত বঙ্গাধিপতি শশাঙ্ক মহারাজ কানসোনাতে রাজধানী হতে হর্ষে দিয়েছে বাজ। মগধ, গৌড়, রাঢ় দেশ গাঁথে উড়িষ্যা ভুবনেশ্বর রাজনৈতিক সম্প্রসারে  কেঁপে ওঠে স্থানেশ্বর। একদিকে তিনি রক্ষা করেন হিন্দুত্বের ওই মতি পরমতসহিষ্ণু তবু মহাবিহারেও স্থিতি । জলকষ্টে দীঘির জল শরশঙ্ক খোঁড়েন নালন্দাতে বাড়ান হাত  ঐতিহ্যতে মোড়েন। কৃষি শিল্প জ্ঞানচর্চা বাণিজ্যে অগ্রগতি এমন রাজ্য শাসন করেন  গৌড়ের অধিপতি । বঙ্গাব্দের সূচনা খানা হয়ে যায় তাঁর হস্তে পাঁচশত তিরানব্বই সাল বিয়োগ করার ন্যস্তে । বাদ দাও যদি অঙ্কটা ওই দু'হাজার পার একুশ চৌদ্দোশ আটাশএলো এলো বাঙালির হুঁশ। ✍ কল্যাণ চক্রবর্তী 🎨 ছবি এঁকেছেন- শীর্ষ আচার্য আমার কল্পনার দৃষ্টিতে বাংলা বিহার উড়িষ্যার সম্রাট গৌরাধিপতি শশাঙ্ক এঁর নতুন আঙ্গিকে চিত্র অঙ্কন করলাম। বঙ্গাব্দের প্রবর্তক ও বাঙালির হৃদয় সম্রাট শশাঙ্কের জয়। শুভঃ বাঙালি নববর্ষ।