Skip to main content

বাংলার বীর অগ্নিকন্যা ভবশঙ্করী

ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা লাভের পরেও ভারতের ছাত্রসমাজ আসল ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রদের পরিস্থিতি এমন যে তাদের অধিকাংশ বঙ্গপ্রদেশের ইতিহাস, পশ্চিমবঙ্গ তৈরির কারণ ইত্যাদি কোনকিছু সম্পর্কেই অবগত নয়। বাংলার গৌরবশালী ইতিহাস জানা তো দূর ইংরেজ আমলে বাংলার বুকে জন্ম নেওয়া মহাপুরুষদের সম্পর্কে সঠিকভাবে পড়ানো হয় না। আজ আমরা বাংলার এমন এক রানীর সম্পর্কে জানাবো যার পূজো বাংলার মানুষের বাড়িতে বাড়িতে হওয়া উচিত ছিল। তবে ইতিহাস ভুলে যাওয়ার কারণে সমাজ দিকভ্রষ্ট হয়েছে।


দিল্লীতে যখন আতঙ্কবাদী মুঘলদের রাজ ছিল, বাংলায় মুঘল, আফগান, পাঠনের মধ্যে লুটপাটের রেষারেশি শুরু হয়ে গেছিল। উন্মাদীদের উপদ্রবের কারণে হিন্দু সমাজে হাহাকার দেখা মিলছিল। ধর্মান্তরন ও বাংলা থেকে হিন্দুদের পলায়ন চরমে পৌঁছে ছিল। সেই চরম পাপী সময়ের মধ্যেই বাংলায় জন্ম নেন দীননাথ চৌধুরীর কন্যা, মা চন্ডীর পরম ভক্ত ভবশঙ্করী। যার যুদ্ধবিদ্যা ও দেশপ্রেমের গাঁথা পুরো ভারত জুড়ে প্রসিদ্ধ হয়েছিল। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করা, তীর ছোড়া, তরোয়াল যুদ্ধ, সমাজশাস্ত্র, রাজনীতি, দর্শন, ধর্মশাস্ত্র, কূটনীতি সবদিক থেকেই সুদক্ষ ছিলেন ভবশঙ্করী।


বিয়ের আগে উনি শর্ত ছুড়েছিলেন যে উনাকে যে অস্ত্র বিদ্যায় হারাতে পারবে তাকেই তিনি বিয়ে করবেন। বহু নামি যোদ্ধা এসে ভবশঙ্করীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। পরে এক বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে রাজা রুদ্রনারায়ণের সাথে উনার বিবাহ সম্পন্ন হয়। সেই থেকেই উনি পরিচয় পান রানী ভবশঙ্করী।


মা চন্ডীর পরম ভক্ত রানী ভবশঙ্করী হাওড়া, হুগলি তার চারপাশের এলাকা নিয়ে গড়ে উঠা ভূরিশ্রেষ্ট সাম্রাজ্যের সুরক্ষা ব্যাবস্থাকে মজবুত করতে শুরু করেন। তমলুক, আমতা, উলুবেড়িয়া ইত্যাদি নানা জায়গায় গড়ে তোলা হয় দুর্গ। তৈরি করা হয় মহিলাদের বিশাল সেনা ইউনিট।



ধীরে ধীরে কট্টরপন্থীদের জন্য অসুরবিনাশী দেবীর রূপ নিতে থাকে মহিলা সমাজ। রানী ভবশঙ্করী প্রত্যেক বাড়িতে এক একজনকে সামরিক শিক্ষা নেওয়া অনিবার্য করার নিয়ম লাগু করেন। সমাজেক ও রাজ্যকে কট্টরপন্থী উপদ্রবীদের থেকে রক্ষা করতেই নেওয়া হয় একের পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।


বাংলার ভুরিশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যের প্রশংসা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সাম্রাজ্য হাওড়া, হুগলি ছাড়িয়ে, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এর বিস্তীর্ণ এলকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাজা রুদ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। বিশ্বাসঘাতকরা বার বার সাম্রাজ্যে আক্রমন করার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়। অনেক যুদ্ধে রানী ভবশঙ্করী কট্টরপন্থী মুঘল, পাঠান, সুলতানদের সেনাকে কচুকাটা করে রাজ্য বাঁচান।রানীর বীরত্ব এতটাই খ্যাতিলাভ করে যে মুঘল লুটেরা আকবর অবধি এই সাম্রাজ্যের দিকে তাকানোর সাহস পায়নি। উল্টে আকবর রানী ভবশঙ্করীকে রায় বাঘিনী বলে আখ্যা দেন। সারা জীবন রাজ্যকে সুরক্ষা প্রদান করার পর ছেলে প্রতাপনারায়নকে দায়িত্ব প্রদান করে কাশিতে ধর্ম পালনের জন্য গমন করেন।