Skip to main content

দিদি কি বইটা মুখস্ত করে ফেলেছেন!? 🤔

কৌটিলাকে বলা হয় "ভারতের মেকিয়াভেলি'। কেন? তার কারণ 1905 সালে রুদ্রপত্ন শ্যামশাস্ত্রীর অর্থশাস্ত্র খুঁজে পাবার আগে কৌটিল্যর নামক কেও একজন অর্থশাস্ত্র লিখেছেন সে বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না।


গোটা বিশ্ব জানত মেকিয়াভেলির কথা। মনে করা হত ষোড়শ শতকে লেখা মেকিয়াভেলির লেখা বই The Prince ই Star Craft নিয়ে লেখা বিশ্বের প্রাচীনতম বই। কিন্তু 1905 সালে অর্থশাস্ত্রকে খুঁজে পাওয়ার পর আমরা জানলাম, না তার অনেক অনেক বছর আগেই, এমনকী যীশুখ্রীষ্টের জন্মের আগেই, এই ভারতবর্ষেই State craft এর উপর বই লিখে গেছেন কৌটিল্য তথা চাণক্য (যদিও অর্থশাস্ত্রে নিজেকে তিনি বিষ্ণুগুপ্ত বলেছেন)। এবার কৌটিল্য মেকিয়াভেলির এত আগে যখন লিখেছেন, তখন মেকিয়াভেলিকে 'প্রাশ্চাত্যের কৌটিল্য" বল! না! কৌটিল্যকেই বলা হল "ভারতের মেকিয়াভেলী " ! হতে পারে কয়েক শতাব্দী ধরে বিশ্ব মেকিয়াভেলির The Prince এর কথাই শুধু জানত। এবার হয়ত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র আবিষ্কার হবার পর আরে "এটা তো পুরো মেকিয়াভেলির মত লেখা!" এরকম মনে হবার কারনেই বিষয়টা ঘটেছে। তবে আসল কারণটা সাহেবদের ইগো ছাড়া কিছু মনে হয় না।


অর্থশাস্ত্র বা The Prince এ মূল বিষয় হল রাজা বা শাসক কীভাবে নিজের ক্ষমতা নিজের হাতে রেখে শাসন করবে সেই বিষয়টা।


The Prince বইতে কীভাবে নিজের ভাইদের মেরে বা আত্মীয়দের হত্যা করে কেও শাসক হতে পারবে থেকে শুরু করে কীভাবে প্রতিবাদী প্রজাকে জব্দ রাখা যায়, কীভাবে মুখ বন্ধ রাখা যায়, কীভাবে শত্রু দমন করা যায় সব আলোচনা রয়েছে। এবং এই পদ্ধতিগুলো এতটাই নির্দয় ও নিষ্ঠুর যে আমার আপনার মত সাধারণ মানুষ সেগুলো হজম করতে পারব না। একনায়কতন্ত্র চালানোর জন্য যতটা নীচে নামা যায় ততটা নীচে নামার নির্দেশ শাসককে দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে। শোনা যায় অ্যাডলফ হিটলার এই বই তার বালিশের নীচে রেখে শুতেন পৃথিবীর যে সমস্ত শাসক একনায়কতন্ত্র চালিয়ে গেছেন তাদের প্রায় সবার পছন্দের বই ছিল The Prince... কারণ এই বই পড়লে ক্ষমতায় চূড়ায় টিকে থাকার জন্য যাবতীয় কুবুদ্ধি, যাবতীয় চালাকি শিখতে পারে শাসক। কীভাবে জনগণকে বোকা বানিয়ে কাঠের পুতুল বানিয়ে রাখতে হয়, কীভাবে জনগণকে ধাপ্পা দিয়ে বছরের পর বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা যায় সেইসব ই হল The Prince এর মেন থিম। The Prince অনুযায়ী নির্বিবাদে ক্ষমতা ভোগ করতে গেলে রাজাকে নিষ্ঠুর হতে হবে। Power না জানে ভালোবাসা, না জানে মায়া, না জানে মমতা


মমতা বলতে মনে পড়ে গেল আমাদের দিদি কি The Prince বইটা মুখস্ত করে ফেলেছেন? নাহলে ক্ষমতা ধরে রাখতে তার মাথায় নানান ধরনের কুবুদ্ধিগুলো আসছে কোথা থেকে ?


🖊 শুভজিৎ দে (Former TIFR Scholar)

Popular posts from this blog

আগে এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন?

রামকৃষ্ণ মিশনের একজন মহারাজকে কিছু দিন আগে প্রশ্ন করা হয়, "মহারাজ, এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন? আর বর্তমানে কেন আর সেই মহাপুরুষরা জন্মায় না?" অসাধারণ উত্তরে মহারাজ একটি বাণী উদ্ধৃতির মাধ্যমে বলেছিলেন, "আকাশে প্লেন ওড়ে, সে তো আর যেখানে সেখানে ইচ্ছামত নামতে পারে না! তার নামার জন্য উপযুক্ত এয়ারপোর্ট প্রয়োজন হয়। ঠিক সেই রকম এক সময় ছিল যখন এই ভারতবর্ষে উপযুক্ত ' মা ' ছিল। এখন সেই এয়ারপোর্ট নেই, তাই বড় বড় প্লেন আর নামতে চাইলেও পারছে না"। আধুনিক মনঃ বিজ্ঞানের মতে, সন্তান কেমন মানুষ হবে সেটা ৮৫% নির্ভর করে মা-এর উপর। আর তা নির্ধারণ হয়ে যায় মায়ের গর্ভে সন্তান আসা এবং জন্মের ৫ বছরের মধ্যে। মায়ের চিন্তা, কথা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, রুচি, আদর্শ, সন্তানের উপর দারুনভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই। মায়ের কষ্ট, তার কষ্ট। মায়ের আনন্দ, তার আনন্দ। মায়ের খাবার, তার খাবার। তাহলে মায়ের ইচ্ছা, তার ইচ্ছা হবে না কেন! মায়ের আদর্শ তার আদর্শ, মায়ের জীবনবোধ, সন্তানের জীবন বোধ হবে। সেখান থেকেই তার শিক্ষা শুরু 3 Idiots এর All is Well এর মত...

ইতিহাসের পাতা থেকে - কামিনী রায়

"কেন একজন নারীকে ঘরে বন্দী করে সমাজে তার ন্যায্য স্থান থেকে বঞ্চিত করা হবে?" গর্জে উঠেছিলেন কামিনী রায়। কে ছিলেন এই প্রতিবাদী নারী? আজ বলবো তাঁরই কাহিনী। কামিনী রায় ছিলেন একজন কবি এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা যিনি অনার্স ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হয়েছেন, যিনি তার সমগ্র জীবন নারী শিক্ষা ও অধিকারের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং যিনি তার কর্মের মাধ্যমে ভারতীয় ইতিহাসে একটি আলাদা ছাপ রেখে গেছেন। 1864 সালের 12 অক্টোবর বর্তমান বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন কামিনী। অল্প বয়স থেকেই কামিনী সমাজে নিজের জায়গার জন্য লড়াই শুরু করেন। তিনি গণিতে পারদর্শী ছিলেন, কিন্তু কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি তিনি তীব্র অনুরাগ অনুভব করেছিলেন। 1880 সালে, তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন, যেখানে তিনি তার সমসাময়িক, আর এক ভারতীয় নারীবাদী অবলা বোসের সাথে নারীবাদী লেখার অন্বেষণ শুরু করেন। 1886 সালে, 22 বছর বয়সে, তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা হয়েছিলেন যিনি অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন, সংস্কৃতে বিএ সহ স্নাতক হন। তিনি একই বছর একজন শিক্ষক হিসাবে কলেজে যোগদান করেন। কামিনী তার প্রথম কবিতার বই, 'আলো ও ...

দাবাড়ু প্রজ্ঞা!

১০ আগস্ট, ২০০৫'র কথা। তামিলনাড়ু স্টেট কর্পোরেশন ব্যাংকের চাকরিজীবী রমেশ বাবু এবং তাঁর স্ত্রী নাগালাক্সমী'র ঘরে দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম হলো একটি ছেলের। ভারতের ঐ জায়গাটায় সাধারণত সন্তানদের নামের সাথে বাবার নাম যুক্ত করার রীতি আছে, এবং সে রীতি অনুযায়ী আগত সন্তানের নাম রাখা হলো প্রজ্ঞানন্দ, বাবার নাম যুক্ত করার পর ছেলেটার পুরো নাম দাঁড়ালো: রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। আর তাঁর বড় বোন: রমেশবাবু বৈশালী। প্রায় কাছাকাছি বয়সের প্রজ্ঞা আর বৈশালী'র বড় হয়ে ওঠার গল্প প্রায় একই, এবং তাদের মধ্যে একটা বিশেষ মিল আছে- দুজনই দাবাড়ু। দাবাড়ু প্রজ্ঞা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসে মাত্র দশ বছর দশ মাস এবং উনিশ দিন বয়সে- ২০১৬ সালের ২৯-এ মে'র ঘটনা। কেআইআইটি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন টুর্নামেন্টের নবম রাউন্ডে আল মুথাইয়া'র সাথে খেলা গেমটা জেতার মাধ্যমে প্রজ্ঞা তাঁর আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাবটি নিশ্চিত করেন। শুধু খেতাব পেয়েই শেষ না- প্রজ্ঞানন্দ হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী আন্তর্জাতিক মাস্টার! তাঁর ঠিক দুই বছর পর, ২০১৮ সালের ২৩-শে জুন প্রজ্ঞা ইতালিতে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্ট খেলার ম...