𝒯𝒽𝑒 𝐻𝒾𝓃𝒹𝓊𝓉𝓋𝒶

ভারত পাকিস্তান ম্যাচ আসলে অনুভূতি চেপে রাখার দিন। যে লোকটা দায়েশের সমর্থক, যে দোকানে লক্ষ্মী গণেশের ছবি দেখলে না ঢুকে এগিয়ে যায়, যে উদ্বাস্তু হিন্দু-বৌদ্ধদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে ট্রেন পোড়ায়, যে বাংলাদেশে মন্দির জ্বালানো, বাঙালী হিন্দুদের ধর্ষণ নির্যাতনের খবর শুনে আনন্দে সিটি দেয়, তালিবানরা কাবুল দখল করলে যে সেলিব্রেট করতে বাড়িতে ছেলেমেয়ের জন্য বিফ বিরিয়ানি কিনে নিয়ে যায় তাকেও এই একটা দিন নিজের অনুভূতি চেপে রাখতে হয়।

না, এদের অনুভূতি মানে ভারতের প্রতি ভালোবাসা নয়। এদের প্রেম হল নিজের দেশ, পাকিস্তান বাংলাদেশ আফগানিস্তান সৌদি কাতারের প্রতি প্রেম। রবিবার তেমনই একটা মনখারাপের দিন। কারণ সারাবছর যে হিন্দুরা মোটামুটি চোখ বুজেই থাকে এই একটা দিন তারাও একটু সচেতন হয়, প্যাটার্নগুলো একটু একটু ধরতে পারে। তাই হঠাৎ করেই চাপ বেড়ে যাবে হোস্টেলে থাকা, সকালে হিন্দু রুমমেটের থেকে চেয়ে নেওয়া চাকরির পরীক্ষার বই পড়া আর রাতে হেডফোনে জাকির নায়েকের ওয়াজ শোনা মুসলিম ছেলেটির।

ভারত পাকিস্তান ম্যাচের দিনের কিছু ঈমানী গাইডলাইন:

১. ওইদিন ম্যাচ চলাকালীন বা ভারত হারলে ওপেনলি আনন্দ করা যাবে না বা ফেসবুকে কিছু লেখা যাবে না; আফগানিস্তানে তালিবান জেতায় বা রুশদিকে ছুরি দিয়ে কোপানোয় যেমনটা করা গিয়েছিল। হেসে ফেললেও বলতে হবে, মিম দেখে হেসেছি।

২. ম্যাচ চলাকালীন এক্সাইটিং কিছু হলে চিল্লে ওঠা যাবে না। মানে কোহলি আবার শূন্য রানে আউট হল, মনে চরম আনন্দ হলেও চেপে রাখতে হবে। উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ দু-একদিন পরে দেখানোই ভালো। হয়ত চেঁচিয়ে ওঠার পর দেখা গেল ও ঘরে ভারতীয় ছেলেরা কমেন্ট্রির মধ্যে থেকেই শুনে ফেলেছে। নেহাত শুনে ফেললে বলতে হবে (সাহেবুলের বদলে নিজের নাম সাহেব বলে আলাপ জমানো) (হিন্দু) গার্লফ্রেণ্ড ডেটে যেতে রাজি হয়েছে।

৩. বাবর আজমের সেঞ্চুরি দেখে বাজি ফাটানোর অভ্যেস থাকলে ওইদিন বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। খুব ইচ্ছে হলে একবেলার জন্য আব্বার সেজবিবিয়ের ছোটভাইয়ার আঠারো নম্বর মেয়ের শ্বশুরবাড়ি রাজাবাজার বা নানার মেজবিবির খালাতো নাতির বাড়ি গার্ডেনরিচে চলে যাওয়া যেতে পারে। আপনা মহল্লা হ্যায়, বাজি কেন, গ্রেনেড ফাটালেও কেউ কিছু বলবে না।

৪. যেহেতু পাকিস্তান উইকেট ফেললে একটু বাড়তি উল্লাস হয় তাই এনার্জি বার্স্ট চেপে রাখে এরকম কিছু খেয়ে রাখা ভালো। দু ছিলিম গাঁজা খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।

৫. সব সময়েই বলতে হবে ক্রিকেটীয় কারণেই বাবর আজমকে সমর্থন করি, ধর্মের কারণে নয়। বেমক্কা উটকো প্রশ্ন এলে কাটিয়ে যেতে হবে। উদাহরণ: "কোনোদিন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, এ বি ডেভিলিয়ার্স, জো রুটদের সাপোর্ট করতে কেন দেখি না" জিজ্ঞেস করলে মিষ্টি হেসে বলতে হবে, "উসমান খোয়াজার ব্যাটিংও খুব ভালো লাগে। উনি তো পাকিস্তানের না। "

৬. হচ্ছে ক্রিকেট, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করলে একটু রিলিফ পাওয়া যাবে। যেমন রোহিত শর্মা কভার ড্রাইভে চার মারলে যখন বুকটা ভেঙে যায় তখন বলতে হবে, "দেশে অসহিষ্ণুতা এত বেড়ে যাচ্ছে, তাছাড়া তেলের দামটাও তো কম নয়। ক্রিকেট দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা।" তবে মেসে বামপন্থী কেউ না থাকলে এসব চেষ্টা না করাই নিরাপদ।

৭. পাকিস্তান জেতার আনন্দ চেপে রাখা সত্যি মুশকিল। তখন বুকে পাথর রেখে মুখে একটু পাকিস্তানকে গালি দিতে হবে। একে বলে আল ত্বাকিয়া। এতে দোষ নেই, কিতাবে লেখা আছে, মদিনার পেডোফাইল নিজেও এসব করতেন। পরের শুক্রবার দুপুরে পাছা তুলতে গিয়ে তওবা করে নিতে হবে, তাহলেই সব মাফ। আমাদের বাসেল এটাই করে। হিন্দুরাও তাকে খুব ভালোবাসে এই কারণে, জানেই না বাসেল আইমিমের পার্টি মেম্বার।

৮. ভারত জিতে গেলে কিছু লাইন বলে ফেলা জরুরি। "এটাই আমাদের দেশ, আমরা এই দেশকেই ভালোবাসি।" কান্নাকাটি যা হবে গোপনে, রাতে বিছানায় শুয়ে। ফোঁপানোর শব্দ যেন পাশের সিটের রুমমেট না পায়। সবথেকে ভালো বাথরুমে গিয়ে কাঁদা। মেসে বামপন্থীরা থাকলে একবার "কিন্তু তেলের দাম তো কমবে না" লাইন নিয়ে দেখা যেতে পারে।

৯. মহম্মদ শামি পাকিস্তানের উইকেট নিয়ে ফেললে যতই গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করুক "শালা গদ্দার", বলা যাবে না। চুপ করে থাকবে হবে। একটা দিনের তো ব্যাপার।

১১. নিজেদের টিমের অমুসলিম ক্রিকেটাররা ক্যাচ ফেলে দিলে "বেইমানের বাচ্চাদের টিমে নেয় কেন?" বলা যাবে না । পাকিস্তানের দানিশ কানেরিয়া ছিল, এখন আর কেউ নেই এই একটা বাঁচোয়া। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে খেলা থাকলে সতর্ক থাকতে হবে। সৌম্য সরকার লিটন দাশেরা আছে।

১১. নিজেদের মহল্লা না হলে ভুল করেও নিজের দেশের সাদা সবুজ পতাকা লাগানো যাবে না। বরং দরকারে ইন্ডিয়ার পতাকাই লাগাতে হবে। সবথেকে ভালো কোনো পতাকা না লাগানো।

১২. পাকিস্তানের বোলারদের প্রশংসা করতে গেলেও আসল কথা বলা যাবে না। তৌহিদি জোশ না বলে বলতে হবে আউটস্যুইং ।

১৩. ভারত ম্যাচ হেরে গেলে সেলিব্রেট করতে রাতে সুইগির খাবার আনিয়ে খাওয়া যাবে না। বরং বাইরে বেরিয়ে টুক করে বিফ পরোটা সাঁটিয়ে আসা ভালো হবে, জাতভাইদের সাথে একসাথে আনন্দ করে ডিনারের মজাই আলাদা। খাবার পরে একটু হাঁটলে খাবার হজমও ভাল হবে।

১৪. মাদ্রাছা বা বালামিন থেকে দেওয়া সবুজ জামা থাকলেও মেসে থাকলে ম্যাচের দিন না পরাই ভালো। আব্বার সেজবিবিয়ের ছোটভাইয়ার আঠারো নম্বর মেয়ের শ্বশুরবাড়ি রাজাবাজার বা নানার মেজবিবির খালাতো নাতির বাড়ি গার্ডেনরিচে খেলা দেখতে বসলে অবশ্য লুঙ্গি আর আলখাল্লার উপর সুইসাইড ভেস্টও পরা যেতে পারে, কোনো সমস্যা নেই।

১৫. পাকিস্তান জেতার আনন্দে সাথে সাথে নফল নামাজে বসে যাওয়া রিস্কি। নেহাত বসতে হলে মেসের ঘরের দরজা বন্ধ করে বসাই ভালো। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে হবে জাঙিয়া পরে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছিলাম।

A মুসলিম ছেলেপুলেরা - 'আর কত সইতে হবে রে মাওলা! ইণ্ডিয়া কবে দারুল ইসলাম হবে?'

কনটেন্ট কৃতজ্ঞতা: Sayak Sinha

(ছবি সংগৃহীত ও কারুকার্যকৃত)

চিন্তাধারার পার্থক্য

আমার নবীর সম্মানে হাত তুললে ওই হাত কেমন করে ভেঙে দিতে হয় সেটাও আমাদের জানা আছে। বিশ্ব নবীর সম্মান is an unparalleled issue। এই ইস্যুতে হেফাজত নাই, এই ইস্যুতে জামাত নাই, এই ইস্যুতে তবলিগ নাই, আওয়ামীলীগ নাই, ১৭ কোটি মানুষ এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে যায়। হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রাথমিক চিন্তাধারার পার্থক্য আছে। একই পরিস্থিতি এবং একই ধরনের মানুষের ভিত্তিতে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় তবে পার্থক্য টি আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। ঘটনা ১ :- কোনো জনবহুল স্থানে একজন মুসলমান হিন্দুদের দেবতার বদনাম করলে হিন্দু যুবকটির দুটি সম্ভাবনা থাকে- প্রথমত, প্রতিবাদ করা দ্বিতীয়ত, চুপচাপ শুনে চলে আসা ধরুন যুবকটি প্রতিবাদ করে বললো, এইসব আলবাল বললে কানের নীচে দেবো। এরপর কথা কাটাকাটি শুরু হবে। তারপর লোক জড়ো হবে। কয়েকজন মুসলমান অবশ্যই ছুটে আসবে। এরপর হালকা ধস্তাধস্তি হয়ে ব্যাপার টা মিটমাট হয়ে যাবে তখনকার মতো। ওই মুসলমান ছেলেটি যখন বাড়ি ফিরবে তখন সে পরিবার, প্রতিবেশি, এবং মসজিদের তরফ থেকে সাবাসি পাবে। সবাই তার কাজকে সমর্থন করে আবারো একই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। অন্যদিকে, ওই হিন্দু ছেলেটি য...

𝒯𝒽𝑒 𝐻𝒾𝓃𝒹𝓊𝓉𝓋𝒶

Search This Blog

Popular posts from this blog

Indian Population 2050

চিন্তাধারার পার্থক্য

संस्कृत वर्णमाला