The unstoppable Missionaries

আপনারা কি সত্যিই বিশ্বাস করেন, হিন্দুরা নির্বিরোধভাবে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কাশ্মীর, পাকিস্তান ছেড়ে চলে এসেছে? সত্যিই কি প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা হয়নি? আরব, ইরান, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কাবুল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এই সমস্ত যায়গা হিন্দুরা কি বিনা যুদ্ধেই মুসলমানদের হাতে তুলে দিয়েছিলো? বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে কি ভুল বলা উচিত হবে? 

না, একদমই না। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের শুরুর দিকে ডাকাত-দস্যুদেরকে গণিমতের_মাল ও হূরের লোভ দেখিয়ে ইসলামের সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্যবহার করা হয়েছিল। ধরুন, এই মরু-দস্যুর দল নিজেদের স্থান থেকে একটি দূরবর্তী 10,000 জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্যকে আক্রমণ করলো। 1500-1700 লোককে হত্যা করলো। প্রায় 1200 নারীকে ভোগ করলো এবং বেশ কিছু নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওই রাজ্যেরই একটি প্রান্তে বসতি স্থাপন করলো। এই যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে-

১| বেশ কিছু জাতিভ্রষ্ট এবং ধর্মভ্রষ্ট মানুষের স্থান হলো গ্রামের শেষ প্রান্তে , অথবা বনে

২| ধর্ষিতারা সমাজ বর্জিতা হলেন অথবা নর্তকী/ বারবণিতা/ বাইজি 

৩| ধর্ষিতাদের সন্তানেরা তাদের ধর্ম পালন করতে লাগল।

সবচেয়ে বড় বিষয় ওই রাজ্যের প্রান্তেই মুসলমান আক্রমণকারীদের বসবাস তাদেরকে আতঙ্কিত করলো। ফলে একে একে সৈন্যবাহিনীতে যোগদানের প্রবণতা বাড়ল। চুরি, ডাকাতি, নারী অপহরণ চলতে থাকলো। এইসব প্রতিরোধের জন্য রাজার নেতৃত্ব যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করাই দেশ বাঁচানোর একমাত্র উপায়। দেশ বাঁচানোর পাশাপাশিই নিজের ধর্ম, এবং পরিবারের সুরক্ষাও এর মাধ্যমেই সম্ভব। 

এরপর, রাজা রাজ্য পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হলেন। উদ্ধার হল রাজ্য। রাজ্যের স্বাধীনতা এবং পরাধীনতার ভিত্তিতেই ধর্মের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে লাগল হিন্দুরা। 

রাজ্যে শাসকের পালাবদল চলতে থাকলো, কখনও মুসলমান শাসক কখনো হিন্দু শাসক। এভাবেই চলছিল ক্রমাগত। কিন্ত যেসব মুসলমানরা রাজ্যের মধ্যে প্রবেশ করে বসবাস শুরু করলো কিংবা যারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হল তাদের কোনো ব্যাবস্থা হল না। ফলে ক্রমাগত বাড়তে থাকল মুসলমানদের সংখ্যা। এই সংখ্যাটাই সব। সংখ্যা যত বাড়তে লাগলো ততই বাড়তে থাকলো মুসলমানদের প্রভাব প্রতিপত্তি। হিন্দু রাজাদের শাসনকালে মুসলমানরা খুব অত্যাচারিত হতো কিংবা সাধারণ মুসলমানদের রাজ্য থেকে উচ্ছেদ করা হত এমনটা নয়। অন্যদিকে মুসলমান রাজাদের শাসনকালে হিন্দুদের দুরবস্থার শেষ থাকতো না। শাসকের উদ্যোগে চলতো ধর্মান্তরণ, হত্যালীলা। ফলে আবারো নব-মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো। কিন্ত সেইসব নব মুসলমানদের স্বধর্মে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ দেখা যেতো না। ফলে সংখ্যাটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতেই থাকলো।

মুসলমানদের সংখ্যা তো বৃদ্ধি পেলো কিন্ত মুসলমান রাষ্ট্রের পরিণতিতে সরাসরি শেষ পেরেকটা ঠুকতো একজন হিন্দু শাসকের যুদ্ধ পরাজয়। যখন মুসলমানের সংখ্যা 30% এর উপরে, তখন হিন্দু শাসকদের পরাজিত করার পরেই Target পূরণের লক্ষ্যে ধর্মান্তরন এবং হত্যালীলা চালানো হতো। হিন্দু রাজার পরাজয়ের সাথে সাথেই হিন্দুদেরও পতন ঘটতো। 

তখনকার দিনে হিন্দুরা যে জাগ্রত ছিলো না, এটা বলা নিতান্তই ভুল। তখন তাঁদের আত্মরক্ষার একমাত্র পথ ছিল রাজার সাথে যুদ্ধে সহায়তা করা। এতে তাদের ধার্মিক ও পারিবারিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত হতো। তাই তারা আত্মরক্ষার্থে যোদ্ধা হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতেন। তাই অতীতকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন। যদি তাদেরকে অসংগঠিত বা নির্বোধ মনে করেন তাহলে আপনিও একই দোষে দোষী। তাহলে আপনিও একই ভুল করে চলেছি। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদেরকে বাঁচানোর জন্য আমরা ভরসা রেখেছি বিজেপির উপর। আবার বিজেপি হেরে গেলে আমরা বলেছি "500 টাকার ভাতার কাছে হিন্দুত্ব আজ হেরে গেলো", অর্থাৎ, হিন্দুদের অস্তিত্ব এবং বিজেপির অস্তিত্ব দুটোই এক এবং অভিন্ন হয়ে গেছে। 

হিন্দুদের সমর্থন, হিন্দুদের সাহায্য ও সহযোগিতা সত্ত্বেও বিজেপি জিততে পারলো না, হিন্দুদের পরাজয় হল অবশ্যই। এই পরাজয়ের কারণ অবশ্যই মুসলমানদের সংখ্যা এবং সংগঠন। 5 বছর অন্তর ভোট তবুও আমরা সেদিকেই তাকিয়ে আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি, কোনো সমান্তরাল সংগঠন আমাদের নেই। আমাদের একমাত্র ভরসা রাজনেতা, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল।

অন্যদিকে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী 10 বছরের মধ্যেই মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। তখন যদি মুখ্যমন্ত্রীর পদে কোনো মুসলমান বসে, তবে সেইদিন পরাজয় শুধুমাত্র বিজেপির হবে না, হবে সমগ্র হিন্দু জাতির। কারণ হিন্দুরা তাদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরক্ষার পথ হিসেবে বিজেপিকেই বেছে নিয়েছিলো। কোনো সমান্তরাল সংগঠনের কথা ভাবেনি। তাই আপাতঃ দৃষ্টিতে বিজেপির পরাজয় পরোক্ষে হিন্দুদেরই পরাজয়। একইরকমভাবে ইতিহাসে হিন্দু রাজাদের পরাজয়ের সাথে সাথে হিন্দুদেরও পরাজয় হয়েছে। সূর্যাস্ত হয়েছে অখণ্ড হিন্দুরাষ্ট্রের। 

আরও একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। যেমন- কাশ্মীর 

পঞ্চম শতাব্দীর পূর্ববর্তী সময়ে কাশ্মীর প্রথমে  হিন্দুধর্ম  এবং পরে বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরবর্তীতে নবম শতাব্দীতে কাশ্মীরে শৈব মতবাদের উত্থান ঘটে। ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে কাশ্মীরে ইসলাম ধর্মের বিস্তার ঘটে এবং শৈব মতবাদের প্রভাব হ্রাস পায়। 

১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হন এবং শাহ মীর রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তী পাঁচ শতাব্দীব্যাপী কাশ্মীরে মুসলিম শাসন বজায় ছিল। এর মধ্যে মুঘল সম্রাটরা ১৫৮৬ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত এবং আফগান দুররানী সম্রাটরা ১৭৪৭ সাল থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করেন। ১৮১৯ সালে রঞ্জিত সিংহের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে। ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ—শিখ যুদ্ধে ইংরেজদের নিকট শিখরা পরাজিত হয়। এরপর অমৃতসর চুক্তি  অনুসারে  জম্মুর  রাজা গুলাব সিংহ অঞ্চলটি ব্রিটিশদের কাছে থেকে ক্রয় করেন এবং কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। 

রাজা রাজায় যুদ্ধ হয়েছে। রাজা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্ত মুসলমানের সংখ্যা বাড়তেই থেকেছে। 1400 খ্রিস্টাব্দে যেখানে মুসলমান ছিল না, 1947 এ সেখানে 77% মুসলমান হয়ে গেছে। এটাই আসল সমস্যা। এটাকে আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক সমস্যা বলে মনে হলেও এটি আসলে একটি সামাজিক সমস্যা। তাই এটাকে সমাধান করতে হবে সামাজিক উপায়ে। আমরা যতবার রাজা, রাজ্য আর রাজনীতির ওপর ভরসা করেছি ততবারই আমাদের পরাজয় হয়েছে। ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সরাসরি রাজনৈতিক বেইমানি জড়িয়ে আছে। মুসলমানরা সামাজিকভাবে একজোট হয়ে রাজনীতিকে হাতিয়ার করে পাকিস্তান পেয়ে গেলো, আর হিন্দুরা রাজনীতিকে হাতিয়ার করে ফাঁকা হাতেই ঘরে ফিরলো। এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতবর্ষে।

আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকায় তাহলে কখনোই কোনো হিন্দু রাজার মুসলমান প্রজাদের উপর অত্যাচার বা রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, কিংবা ধর্মান্তরনের কথার উল্লেখ পায় না। বামপন্থী, JNU অধ্যাপকরা এত সহজেই হিন্দুদেরকে কলঙ্কিত করার এই সুযোগটা এত সহজেই ছেড়ে দিলো!? আসলে রাজাদের বা রাজনীতির কিছু দুর্বলতা বরাবরই লক্ষ্য করা যায়-

১| একজন রাজা বা রাজনেতা কখনোই মুসলমান প্রজাদের উপর ধর্মের কারণে অত্যাচার করতে পারে না।

২| প্রজাদের উপর অত্যাচার করে করলে সেই অঞ্চলে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়। বিদ্রোহ দেখা যায়। রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য গঠন করতে চাই তারা।

এইসব দুর্বলতার কারনে রাজা বা রাজনেতারা কিছুই করতে পারে না। তবুও আমাদের ভরসা সেই রাজনেতা বা রাজনীতির উপরেই। 

এবার আপনি আরব, ইরান, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কাবুল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এইসব রাজ্যগুলির মুসলমান রাষ্ট্র হয়ে ওঠার জন্য তাদের অসচেতনতা কে দায়ী করবেন, নাকি ভুল নীতির জন্য রাজনৈতিক নির্ভরতাকে দায়ী করবেন সেটা আপনার ইচ্ছা।

Links- 

1. Religious growth in Afghanistan 

https://youtu.be/SrvILXEnNbo

2. How Afghanistan became a Muslim country-

https://youtu.be/hkqNPlSB7Nk

3. How Indonesia converted to a Muslim country-

https://youtu.be/YkoV4fXKris