বাংলার বারুজীবী বৃত্তান্ত

সেই কবে এক বাঙালি লেখক সরস্বতীর স্তনে হাত দেওয়ার কথা লিখেছেন তাঁর উপন্যাসে - তাঁর মুন্ডু নিতে চায় নি কেউ, বরং আমরা বাঙালিরা সেই বই কিনে পড়েই তাঁকে বিখ্যাত করেছি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। 

মনে পড়ে - সেই কবে কোনো এক কমিক সিনেমার সংলাপ~ "পাবলিকের প্যাদানির ভয়ে যে নিজের বৌরে আগুনে ঢুকতে কয়, সে আবার আদর্শ রাজা"! কেউ গলা কাটতে চায় নি, বরং হেসে গড়াগড়ি খেয়েছি। দুর্গা পুজোর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে বেজেছে - ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়!

মকবুল ফিদা হুসেন নগ্ন সরস্বতী আঁকলে সেকুলারিজমের ধ্বজাধারীরা শিল্পীর স্বাধীনতা বলে এড়িয়ে যান আর আমরাও উদারতার পথে আরেকটু এগিয়ে যাই |

"ভীত, সন্ত্রস্ত " আমির খান ভগবান শিবকে নিয়ে যাচ্ছেতাই রকমের ছ্যাবলামি করলেও আমরাই গাঁটের পয়সা খরচ করে ওই সিনেমা দেখে আমির খানের কমিক সেন্স নিয়ে আপ্লুত হই |

আর 'কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে বিলা' চালিয়ে তো কোমর দুলিয়ে নাচ আমরাই করেছি, করছি -

 না, কেউ তো গলা কাটতে আসে না। উপরোক্ত ঘটনাগুলোর কোনোটাতেই কারও প্রানসংশয় ঘটেনি | তবুও সেই কবেই, আরো অনেক আগেই কিন্তু গলা কাটাকাটি হয়েছিল। কৃষ্ণকে নিয়ে নোংরা বই লেখার পাল্টা হিসাবে নবীকে নিয়েই সম্পূর্ণ হাদীস নির্ভর বই 'রঙিলা রসুল' প্রকাশ করে 1920 সালে প্রকাশক রাজপাল জবাই হয়ে গিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। খুনি ইলমুদ্দিন হয়ে উঠেছিল ওদের জাতীয় বীর। সাম্প্রদায়িক আবেগে স্বয়ং জিন্না ওর হয়ে মামলা লড়েছিল, স্বয়ং ইকবাল কাঁধ দিয়েছিল লক্ষ লক্ষ লোকের সঙ্গে। নেটে সার্চ করে দেখুন - আজও ইলমুদ্দিন 'মর্দ এ মু$লিম' ! 1931 সালে শিশু পাঠ্যে  নবী মুহাম্মদ এর ছবি ছাপিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঠিক একই ভাবে জবাই হয়ে যান প্রকাশক ভোলানাথ সেন। মজার ব্যাপার, কোন বদ উদ্দেশ্যে নয় - আমাদের মজ্জাগত যে একতরফা সম্প্রীতি, সেটার তাড়নায়। না, ধর্ম অবমাননার শাস্তি হিসাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দু জন খুন হওয়া নিয়ে সংখ্যালঘুদের কেউ লজ্জিত হয় নি আর সংখ্যাগুরুরাও প্রতিবাদে রাস্তায় নামে নি - ঠিক এখনকার মতোই। বরং সংখ্যাগুরুদের অনেকে বলেছিল এমন করলে তো এমন হবেই! কিন্তু কৃষ্ণ নিয়ে বলাটা ???

সেভাবেই আজও চলছে এই দেশে, সারা বিশ্বেই ! ওরা অন্য ধর্ম সম্পর্কে, অন্য ধর্মের উপাস্য সম্পর্কে যা খুশি তা বলতে পারবে, কিন্তু ওদেরটা নিয়ে ওদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই উদ্ধৃত করে ঐতিহাসিক সত্য হলেও কিছু বলা যাবে না ! ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে জবাই থেকে শুরু করে নানা হিংস্র প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় একবারও মনে আসে না অন্যদের ধর্মানুভূতির কথা? আসে না - কারণ অন্যদেরটা তো কোন ধর্মই নয়, ঐ বিশেষ ধর্ম ছাড়া আর কোন ধর্ম মতের অস্তিত্বই তো থাকতে পারে না ! ওদেরটাই সৃষ্টিকর্তার একমাত্র মনোনীত ধর্ম। 'হি*ন্দু তালিবান' এর দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বনামে স্বপরিচয়ে স্বচেহারায় 'অসহিষ্ণু' সংখ্যাগুরুদের উপাস্য নিয়ে যা খুশি বলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সহিষ্ণু শান্তিধর্মী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা যদি ...? এরপরও এরা এদেশে 'নিপীড়িত নির্যাতিত ভীত সন্ত্রস্ত'! সংখ্যাগুরুদের পবিত্র শিব লিঙ্গকে কমোডের সঙ্গে তুলনা করেও কিছু হয় না, কিন্তু সংখ্যালঘুদের ঐতিহাসিক সত্য বললেও কল্লা যাওয়ার উপক্রম হয়। বাক স্বাধীনতার পুজারী আলোর দিশারী বামপন্থীরা এই ধর্মান্ধতার অন্ধকার নিয়ে চুপ। বরং ওদের দোসর শক্তের ভক্ত নরমের যম বা বিড়ালের মতো নরম মাটি দেখেই আঁচড় কাটা বামপন্থীরাও দুর্গাকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে নাটক করছে, সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় দিন রাত প্রতিনিয়ত শুধু হি*ন্দু ধর্ম নিয়ে নোংরামী করে চলেছে। অন্যদিকে আরো রঙিন চরিত্র থাকলেও তা নিয়ে মজা করে প্রগতিশীল সাজার সাহস নেই। বীর পুঙ্গবরা জানে সেক্ষেত্রে কল্লা থাকবে না। বড়জোর কেউ কেউ বলবে - "ওরা তো এইরকমই"! তাহলে মানসিকতা আর আচরণের এই এতো পার্থক্য এদের নজরে আসে না, প্রশ্ন জাগে না - মানসিকতার এতো পার্থক্য নিয়ে কীভাবে সম্ভব তাদের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিবা স্বপ্ন ? তাহলে দীনারের লোভে সব এক করে দিয়ে কেন বলা হবে - সব ধর্মেই...? 

এই সেদিনের জর্ডনের নাহেদ হাট্টার বা ফ্রান্সের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটির হত্যার কথা ভুলে গেলেন? পশ্চিমা উদার দেশে মুক্ত চিন্তার ক্লাস হয় - সব ধর্মেরই সমালোচনা হয়। সবাই খোলা মনেই নেয় - কিন্তু ঐ বিশেষদের বিশেষ সমস্যা, ঐ বিশেষ ধর্ম আর ধর্ম প্রবর্তক নিয়ে বললেই কল্লা শেষ। প্রকাশ্যে ঐ শিক্ষককে জবাই করলো উনারই ছাত্র, তা'ও আশ্রয় প্রাপ্ত অভিবাসী! সভ্য প্রগতিশীল সমাজে সব ধর্মেরই সমালোচনা হবে। এতে তোমার অসুবিধা হলে সে তোমার সমস্যা। তুমি এই সভ্যতার উপযুক্ত নও। তুমি থাকো তোমার মতো করে। ওদের কেউ নিন্দা জানালো না, বরং এই দেশ এই বাংলা সহ সারা পৃথিবীর সর্বত্র এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে মিছিল হল! সেই জবাইকে সমর্থন করা ধর্মগুরুর সঙ্গে ধর্মহীন মুক্তমনাদের হলো নির্বাচনী আঁতাত! সভ্যতা কি ওদের সংঘবদ্ধ গুন্ডামীর সামনে নতজানু হতে হতে এভাবেই আত্মসমর্পণ করবে? এক বিকৃত মতাদর্শের প্রভাবে যারা সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে গেছে - একই আকার আকৃতি দেখে তাদেরও সবার মতো একই রকম ভেবে সমান আচরণ করে একই ভুল করে যাবে?

অনির্বান দাশগুপ্ত (কিয়দংশ সংযোজিত ও বিয়োজিত)

অসাধারণ লেখা।

সত্যিই আমরা গলা কাটতে চাইনি। কারণ হিন্দুত্ববাদীদের কথায় হত্যার জন্য অস্ত্র তুলে নিলে তাকে সন্ত্রাসবাদী বলে। আর অস্ত্র নিয়ে নাচানাচি করাকে হিন্দুত্ব বলে। বর্তমান হিন্দুত্ব সংজ্ঞা এমনটাই। সেই কবে পরশুরাম হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে অধর্মের বিনাশ করেছিলো। তারপর থেকে আর কেও ধর্মদ্রোহীর গলা কাটার জন্য অস্ত্র তুলে নেয়নি। বরং সেই অস্ত্র তোলা কে আতঙ্কবাদ, জিহাদের সাথে তুলনা করেছে। এইরকমভাবে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া সন্ত্রাসবাদীর পরিচয়। তাই এই অস্ত্রগুলো এখন শুধুমাত্র রামনবমীর মিছিলে DJ বাজিয়ে নাচার কাজেই ব্যবহৃত হয়।

🎯লজ্জা কখন লাগে জানেন?

পাঁচ হাজার বছরের গীতা, রামায়ণ, মহাভারত জানা সনাতনীরা যখন বলে 2014 তে তারা নাকি বুঝতে পারলো ওরা নাকি হিন্দু !