Skip to main content

আত্মার শান্তি কামনায় R.IP নয়, লিখুন "দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু"

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে কেউ পরলোক গমন করলে সবাই কমেন্ট বক্সে R.I.P. শব্দটি লেখেন। যদি মৃত ব্যক্তি সনাতন ধর্মালম্বী হন তবুও R.I.P. - এই শব্দবন্ধ লেখা হয়ে থাকে। এখন কোন সনাতনী পরলোক গমন করলে এই R. I.P. লেখা কতটা যুক্তিযুক্ত ?



R.I.P. এর পুরো অর্থ হল Rest in Peace, অর্থাৎ শান্তিতে বিশ্রাম নাও। এই কথাটি মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। মৃত্যুর পর এই শান্তিপূর্ণ বিশ্রামের ধারণা সনাতন ধর্মীয় দর্শনের অনুসারী নয় । এই ধারণাটির উৎস বাইবেল। বাইবেল হল খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ আর যেকোন খ্রিস্টান কবর

খানাতে গেলে R.I.P. লেখা অনেক gravestone (কবরের উপর প্রতিষ্ঠিত ফলক) দেখতে পাওয়া যাবে। খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর মানুষ কবরে শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমিয়ে থাকে। এই নিদ্রা চিরন্তন কিন্তু the Judgement Day (শেষ বিচারের দিন) এর দিনে এই শান্তিপূর্ণ নিদ্রার পরিসমাপ্তি ঘটবে। ঐদিন God সমস্ত মৃত আত্মার বিচার করবেন আর স্থির করবেন কোন আত্মা Heaven আর কোন আত্মা Hell তে যাবে। সেই কথা মাথায় রেখেই কোন খ্রিস্টান এর মৃত্যু হলে বা মৃত্যুর কথা শুনলে Rest in Peace সংক্ষেপে R. I. P. বলা হয়ে থাকে।

এখন দেখা যাক এক্ষেত্রে সনাতন ধর্মের দর্শন কি বলে? সনাতন ধর্ম অনুযায়ী মানুষের জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো মোক্ষলাভ। মোক্ষ চার পুরুষাকারের একটি (বাকি তিনটি ধর্ম, অর্থ, কাম)। মোক্ষ কথার অর্থ হল জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পেয়ে পরমাত্মনে বিলীন হওয়া। (প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য জন্ম-মৃত্যুর এই চক্র এবং মোক্ষলাভের ধারণা সনাতন বৌদ্ধধর্মতেও পাওয়া যায়)

এখন সনাতন ধর্মে কোন মানুষ পরলোক গমন করলে ধর্মীয় দৰ্শন অনুযায়ী তাঁর আত্মার সামনে দুটি পথ খোলা থাকে – অন্য দেহে - প্রবেশ করে পুনর্জন্ম লাভ এবং পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন অথবা মোক্ষলাভ করে পরমাত্মনে বিলীন হওয়া। ওই মৃত ব্যক্তির আত্মা কোন পথে যাবে তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির পার্থিব জীবনের কর্মের উপর। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সনাতন ধর্মে মৃত্যুর পর আত্মার শান্তিতে বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উল্টে আত্মা যদি পুনর্জন্ম বা মোক্ষলাভের পথে না গিয়ে শান্তিতে বিশ্রাম আরম্ভ করে তাহলে সেই আত্মা

প্রেতাত্মাতে পরিণত হবে এবং প্রেতাত্মা পৃথিবীতে থেকে আরো প্রেতাত্মা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে থাকবে। সনাতনীরা তাই আত্মীয় বিয়োগ হলে তেরো দিন ধরে নানা রকম আচার ও প্রার্থনা করে থাকেন যাতে, করে মৃত ব্যক্তির আত্মা পৃথিবীতে আটকে না থাকে । এর থেকে বোঝা যায় যেসব সনাতন ধর্মালম্বী মানুষ কোন সনাতনী

ভাই-বোনের মৃত্যু সংবাদ শুনে R.IP. লেখেন, তাঁরা অজ্ঞাতসারে ভয়ঙ্কর একটি ভুল করেন এবং মৃত ব্যক্তির সদগতি কামনা করেন না।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কোন সনাতনীর মৃত্যু সংবাদ শুনলে আমরা কি বলব? আমরা এখানে বলতে পারি – ‘ওম্ শান্তি' অথবা - 'আত্মার সদগতি হোক'। এছাড়াও একটি সুন্দর বৈদিক মন্ত্র আছে -

"ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা। মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্ ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃত দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু"

অনুবাদঃ-

তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধৰ্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্ৰভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

সনাতনী ভাই-বোনেদের অনুরোধ সনাতন ধর্মকে জানুন এবং সেই মত আচরন করুন, ছোটদের শেখান। সনাতন ধর্মই প্রকৃত ভারতীয় ধর্ম।

জয় শ্রীকৃষ্ণ🙏🏻

Popular posts from this blog

বলি প্রসঙ্গে আমার মতামত

ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এর চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better, তাহলে বলতে হয় আপনার জীবন আর মৃত্যুর sence নেই। কেন ছাগলের মৃত্যুটাই মৃত্যু? চালকুমড়ো বা আঁখের মৃত্যুটা মৃত্যু নয় কেন? আপনার যদি জীবন আর মৃত্যুর সম্বন্ধ প্রকৃত জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনটি ক্ষেত্রেই আপনি সমান দুঃখ পেতেন। কিন্ত আপনার মনে হয় ছাগল বলি দেওয়ার চেয়ে চালকুমড়ো বা আখ বলি দেওয়া better।  আপনার এই প্রকৃতি দেখে বলতে হয়, জীবন বাঁচানো আপনার উদ্দেশ্য নয়, বরং আপনি রক্তকে ভয় পান, অস্ত্র কে ভয় পান। আপনার বাস্তবিক বোধ থাকলে আপনি অস্ত্রের আঘাতে চালকুমড়ো বা আঁখের এবং ছাগ তিনটি বলির ই বিরোধীতা করতেন। কারণ তিনটির প্রকৃতিই একই রকম, এই তিনটে থেকেই অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হতে পারতো। তাই তিনটির হত্যাই একই রকম ক্ষতি করে। কিন্ত, শুধুমাত্র ছাগ বলি দেখলে যদি আপনার মনে হয় এটি মানুষের হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমরা কি সত্যিই অহিংস?  আমাদের মায়েরা প্রতিদিন জ্যান্ত মাছগুলো দুহাতে ধরে বঁটিতে ঘচাং করে একবারে জ্যান্তই কেটে ফেলেন। শহরের মাছ-মাংস বিক্রেতারাও একইভাবে কাটেন। তখন কি সেটা নৃশংসতা নয়? কেন আমরা ব

ছেলেরা কেন দিনদিন 'বৌদিবাজ' হয়ে উঠছে?

সমাজটা খুবই খারাপ দিকে যাচ্ছে। ছেলেরা এখন বৌদিবাজ হয়ে উঠেছে! তারা একবার করে প্রেমে ছেঁকা খাওয়ার পর আর অন্য কোনও প্রেমিকা জোটায় না, বৌদিদের সাথে গল্প করে। কারণ - ১| ধোঁকা খায় না ২| হৃদয়ে আঘাত লাগে না ৩| Break up 💔 বলে কিছু থাকে না ৪| অনেকটা Stunt বাজীর মতো, মাথায় কোনো চাপ নেয়ার দরকার পরে না  আর একটা বিষয় হলো এখন বেশিরভাগ ছেলে পড়াশোনা দিকে ব্যস্ত। তাই তাদের হাতেও বেশি সময় থাকে না। আবার বৌদিদের হাতেও বেশি সময় সীমিত। তাই একটা Understanding বজায় থাকে। আরেকটা জিনিস হল নতুন প্রেমিকারা যেরকম নানারকম চাপ দেয়। বৌদীরা অনেকটা বোঝে ব্যাপারগুলো। যেমন- ফাঁকা পকেট, কম সময়, Relation Public না করা... এসব জিনিস। সেই কারণে তারা এতটা চাপ দেয় না। অল্পবয়সী মেয়ের একটু জেদি হয়। তাই তারা অকারণেই ঝগড়া করে যা এমনিতেই চাকরি আর ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত ছেলেদের ভালো লাগে না। তাই তারা বৌদিদের দিকেই ঝোঁকে। বিয়ে তো অবশ্য ভালো কোনো মেয়ে দেখেই করবে, তার আগের সময়টা অন্য দিকে দেয় - বৌদিদের সাথে আড্ডা মারে। বৌদিদের সাথে কথা বলে আর কিছু হোক বা না হোক মানসিক শান্তি আছে। আমার বৌদিবাজ বন্ধুদের জন্য 💖

রাষ্ট্রভক্ত বীরাঙ্গনা হীরা দে

 🌹💥🕉️ দুর্নীতিবাজদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত তার উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এই শাস্তিও কোন রাজা বা সরকার দিয়েছিল না দিয়ে ছিল শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা। 💢 1311 খ্রিস্টাব্দে, আলাউদ্দিন খিলজিকে জলোর দুর্গের গোপন কথা বলার জন্য পুরস্কার হিসাবে পাওয়া অর্থ নিয়ে ভিকা দাহিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন।এত টাকা এই প্রথম দেখল। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল যুদ্ধ শেষ হলে এই টাকা দিয়ে একটা বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে আরামে বসবাস করবে।প্রাসাদের সামনে ঘোড়া বাঁধা থাকবে, চাকর থাকবে।  তার স্ত্রী হীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য গয়না দ্বারা সারা শরীর ঢাকা থাকবে। আলাউদ্দিন কর্তৃক জালোর কেল্লায় নিযুক্ত সুবেদারের দরবারে তিনি বড় মর্যাদার বিবেচিত হবেন।বাড়িতে পৌঁছে বিড়বিড় করে হেসে টাকার বান্ডিলটা বাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী হীরা দে'র হাতে।  🌹স্বামীর হাতে এত টাকা এবং স্বামীর মুখ ও অভিব্যক্তি দেখে হীরাদে আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে জালোরের যুদ্ধে হতাশ হয়ে হঠাৎ জালোরের দিকে ফিরে যায়। হীরা দে বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী ভিকা দাহিয়া তার জন্মভূমি জ