Skip to main content

হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হবার কারন কি “বর্নপ্রথা” নাকি অন্য কিছু?

🔰হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হবার কারন কি “বর্নপ্রথা”? না অন্য কিছু?” মানুষ নিজের পুর্ব পুরুষের আচার, বিচার, ধর্ম, সংষ্কার সব কিছু পরিবর্তন কেন করে?

🔰আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু মানুষ আছেন তারা দলে দলে মুসলিম হবার পিছনে ‘জাতি প্রথা' বা বর্ন প্রথাকে’ দায়ী করেন। 

আমি নিজে মনে করি, যারা বলেন, তাদের বেশীর ভাগ এই “বর্ন প্রথা’ কিছুই জানেন না। তবুও বলে যান। তাদের মুল বক্তব্য “বর্ন প্রথার চাপে দলে দলে নিম্ন বর্গের হিন্দুরা মুসলিম হয়ে গেলো”। একটু তলিয়ে ভাবুন। 

🔰৬৩২ সালের পর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মিশর, ইরাক এবং ইরান ৯৯% মুসলিম কেনো হলো? আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার দেশ গুলি, সেখানকার উপজাতিরা সামান্য কয়েক বছরের মধ্যেই মুসলিম হয়ে গেলো। পুর্ব ইউরোপের যে সব অঞ্চল মুসলমানদের দখলে এসেছিলো সেখানেও সেই একই কথা, “মুসলিম হও বেচে যাও”। ভিয়েতনামের চম্পা রাজ্যের হিন্দুরা (যাদের বলা হয় ‘চাম’) তারা আজো ঘর ছাড়া। মেকং নদীর মোহনায় নৌকা তে থাকে। তাদের বলা হয় “বোট পিপল”। এরা হিন্দু ছিলো। 

🔰উচ্চ বর্নের হিন্দুদের জন্য ভারতের হিন্দুরা সব দলে দলে মুসলিম হয়েছে, এই কথা যারা বলেন,  হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন, এই উপরি উক্ত দেশ গুলির কোন দেশে “বর্ন প্রথা” ছিলো❓ এরা কেনো মুসলিম হলো❓ পৃথবীর সব চেয়ে মুসলিম সংখ্যাধিক্য দেশ ‘ইন্দোনেশিয়াতে’ কোন কালে উচ্চ বর্নের হিন্দুরা নিম্ন বর্নের হিন্দুদের উপরে অত্যাচার করেছে❓ তো, এরা কেনো মুসলিম হলো??? কোনো চ্যাটার্জী, মুখার্জী, গাঙ্গুলী, ব্যানার্জী, ভট্টাচার্য এই সব দেশ গুলিতে আছে???কোথাও নেই??? তাহলে??? 

ঐতিহাসিক কে এস লাল, শ্রী বাস্তব, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, স্যার যদু নাথ সরকার এদের লেখা পড়েছেন কি? পড়লে দেখতে পেতেন, মাথায় বুদ্ধি থাকলে বুঝতে পারতেন, কতো অত্যাচার এই আরবী, তুর্কি, আফগানী, উজবেকী, ঘুরী, বুখারি এরা আমাদের দেশে করেছে। সুফি দরবেশ নিজামুদ্দিন আউলিয়া, খান জাহান আলি এবং আরো শত শত রা কি ভাবে ছল, বল, কৌশল করে আমাদের পুর্ব পুরুষদের ধর্মান্তরিত করেছে। 

🔰আপনারা যে ‘তৈমুর’ এর নামে নানা কথা টিভিতে দেখেন সেই তৈমুর আলি খান, যে তৈমুরের নাম অনুসরন করে নাম পেয়েছে, তার বানী শুনুন--- 
"জেহাদী তৈমুর বলেছিলো, আমি ভারতে গিয়েছিলাম শুধু দুটি কারনে, এক, অবিশ্বাসীদের সংগে যুদ্ধ করে তাদের খতম করা। আর দুই, ইসলামের সৈনিক রা অবিশ্বাসীদের সম্পত্তি লুট করে সম্পদ পাবে”. He said, “My main objective in coming to Hindustan has been to accomplish two things. The first was to war with the infidels, the enemies of the Mohammadan religion.---- The other was that the army of Islam might gain something by plundering the wealth and valuables of the infidels”. 

🔰এই তৈমুর উজবেকিস্তানের সমস্ত হিন্দুদের মেরে তাদের মাথার খুলি একটি মিনার বানিয়ে সেই মিনারের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। বিবি খানুম নামে সমরখন্দে এক মসজিদ আছে। সেটা বহু প্রাচীন এক শিব মন্দিরের রুপান্তর ঘটিয়ে বানিয়েছিলো এই তৈমুর। নাম ‘বিবি খানুম মসজিদ’। (নিজের স্ত্রীর নাম অনুসারে)। সেই বিবি খানুম মসজিদের পাশেই সেই মিনার আছে। আপনাদের প্রিয় বাবুর একটি নয় দুটি ওই রকম মিনার বানিয়েছিলো যা আজো আছে। 

🔰পৃথিবীতে যতো ধর্ম আছে, তার মধ্যে একমাত্র ‘জেহাদী ধর্মে’ বলা আছে কাফের দের মারলে “গাজী” উপাধি পাওয়া যায়। “ হজ করলে হাজি কাফের মারলে গাজী”। আন্দামানে ‘উইম্বার্লিগঞ্জ’ নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে ‘মোপলা’ বিদ্রোহীদের নিয়ে রাখা হয়েছিলো। সেখানে আজো শুনতে পাবেন “ আমার বাবা ---গুলো হিন্দুকে কচুকাটা করেছিলো’।  শুনেছেন কোনোদিন?? আমি অনেক দিন অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছি, শুনেছি। এই মারের হাত থেকে বাচার জন্য, হিন্দু হয়ে বেচে থাকার জন্য, জিজিয়া করের হাত থেকে বাচার জন্যই এতো নিম্ন বর্গের হিন্দু ভারত বর্ষে মুসলিম হয়েছে। 

🔰যে মনু সংহিতার দোহাই দিয়ে, অনেকে উচ্চ বর্নের হিন্দুদের গাল পাড়ে যেই মনু সমহিতা তৈরী হয়েছিলো প্রায় ৮০০০ বছর আগে। সাতজন মনুর শেষ মনু হচ্ছেন বিবস্বান মনু। তার আদেশে ভৃগুমুনি এই “ মানূষের জীবনের সংবিধান” রচনা করেন এবং দশজন মুনি সেই সংবিধান সারা জম্বুদ্বীপে প্রচার করেন। তার মধ্যে এই উচু নিচু কিছুই ছিলো না।

🔰মুসলমানী অত্যাচারে যখন ব্রাহ্মনদের সব পাঠশালা, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলো, ধংস হয়ে গেলো, তখন পেটের দ্বায়ে এই কর্মহীন ব্রহ্মনরা সেই মনুস্মৃতিতে অনেক নিয়ম কানুন যোগ করেছে। সেই দ্বায় তাদের ঘাড়ে না চাপিয়ে যাদের অত্যাচারে সেই সব করতে তারা বাধ্য হয়েছে দোষারোপ করুন।

Popular posts from this blog

আগে এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন?

রামকৃষ্ণ মিশনের একজন মহারাজকে কিছু দিন আগে প্রশ্ন করা হয়, "মহারাজ, এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন? আর বর্তমানে কেন আর সেই মহাপুরুষরা জন্মায় না?" অসাধারণ উত্তরে মহারাজ একটি বাণী উদ্ধৃতির মাধ্যমে বলেছিলেন, "আকাশে প্লেন ওড়ে, সে তো আর যেখানে সেখানে ইচ্ছামত নামতে পারে না! তার নামার জন্য উপযুক্ত এয়ারপোর্ট প্রয়োজন হয়। ঠিক সেই রকম এক সময় ছিল যখন এই ভারতবর্ষে উপযুক্ত ' মা ' ছিল। এখন সেই এয়ারপোর্ট নেই, তাই বড় বড় প্লেন আর নামতে চাইলেও পারছে না"। আধুনিক মনঃ বিজ্ঞানের মতে, সন্তান কেমন মানুষ হবে সেটা ৮৫% নির্ভর করে মা-এর উপর। আর তা নির্ধারণ হয়ে যায় মায়ের গর্ভে সন্তান আসা এবং জন্মের ৫ বছরের মধ্যে। মায়ের চিন্তা, কথা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, রুচি, আদর্শ, সন্তানের উপর দারুনভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই। মায়ের কষ্ট, তার কষ্ট। মায়ের আনন্দ, তার আনন্দ। মায়ের খাবার, তার খাবার। তাহলে মায়ের ইচ্ছা, তার ইচ্ছা হবে না কেন! মায়ের আদর্শ তার আদর্শ, মায়ের জীবনবোধ, সন্তানের জীবন বোধ হবে। সেখান থেকেই তার শিক্ষা শুরু 3 Idiots এর All is Well এর মত...

ইতিহাসের পাতা থেকে - কামিনী রায়

"কেন একজন নারীকে ঘরে বন্দী করে সমাজে তার ন্যায্য স্থান থেকে বঞ্চিত করা হবে?" গর্জে উঠেছিলেন কামিনী রায়। কে ছিলেন এই প্রতিবাদী নারী? আজ বলবো তাঁরই কাহিনী। কামিনী রায় ছিলেন একজন কবি এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা যিনি অনার্স ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হয়েছেন, যিনি তার সমগ্র জীবন নারী শিক্ষা ও অধিকারের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং যিনি তার কর্মের মাধ্যমে ভারতীয় ইতিহাসে একটি আলাদা ছাপ রেখে গেছেন। 1864 সালের 12 অক্টোবর বর্তমান বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন কামিনী। অল্প বয়স থেকেই কামিনী সমাজে নিজের জায়গার জন্য লড়াই শুরু করেন। তিনি গণিতে পারদর্শী ছিলেন, কিন্তু কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি তিনি তীব্র অনুরাগ অনুভব করেছিলেন। 1880 সালে, তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন, যেখানে তিনি তার সমসাময়িক, আর এক ভারতীয় নারীবাদী অবলা বোসের সাথে নারীবাদী লেখার অন্বেষণ শুরু করেন। 1886 সালে, 22 বছর বয়সে, তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা হয়েছিলেন যিনি অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন, সংস্কৃতে বিএ সহ স্নাতক হন। তিনি একই বছর একজন শিক্ষক হিসাবে কলেজে যোগদান করেন। কামিনী তার প্রথম কবিতার বই, 'আলো ও ...

দাবাড়ু প্রজ্ঞা!

১০ আগস্ট, ২০০৫'র কথা। তামিলনাড়ু স্টেট কর্পোরেশন ব্যাংকের চাকরিজীবী রমেশ বাবু এবং তাঁর স্ত্রী নাগালাক্সমী'র ঘরে দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম হলো একটি ছেলের। ভারতের ঐ জায়গাটায় সাধারণত সন্তানদের নামের সাথে বাবার নাম যুক্ত করার রীতি আছে, এবং সে রীতি অনুযায়ী আগত সন্তানের নাম রাখা হলো প্রজ্ঞানন্দ, বাবার নাম যুক্ত করার পর ছেলেটার পুরো নাম দাঁড়ালো: রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। আর তাঁর বড় বোন: রমেশবাবু বৈশালী। প্রায় কাছাকাছি বয়সের প্রজ্ঞা আর বৈশালী'র বড় হয়ে ওঠার গল্প প্রায় একই, এবং তাদের মধ্যে একটা বিশেষ মিল আছে- দুজনই দাবাড়ু। দাবাড়ু প্রজ্ঞা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসে মাত্র দশ বছর দশ মাস এবং উনিশ দিন বয়সে- ২০১৬ সালের ২৯-এ মে'র ঘটনা। কেআইআইটি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন টুর্নামেন্টের নবম রাউন্ডে আল মুথাইয়া'র সাথে খেলা গেমটা জেতার মাধ্যমে প্রজ্ঞা তাঁর আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাবটি নিশ্চিত করেন। শুধু খেতাব পেয়েই শেষ না- প্রজ্ঞানন্দ হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী আন্তর্জাতিক মাস্টার! তাঁর ঠিক দুই বছর পর, ২০১৮ সালের ২৩-শে জুন প্রজ্ঞা ইতালিতে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্ট খেলার ম...