বছর খানেক আগে Travel XP HD Channel -এ ইন্দোনেশিয়া নিয়ে চমৎকার ডকুমেন্টরি দেখাচ্ছিল। দেখাচ্ছিল Tengger দের উৎসব ' Yadnya Kasada -----আষাড়ের পবিত্র অগ্নি নিয়ে। আবার সেটা মনে পড়ে গেল।
দেখতে দেখতে সেদিন মনে পড়ে গিয়েছিল এই Tengger দের নিয়ে পড়া একটি চমৎকার প্রবন্ধের কথা। সেখানে এদের বলা হয়েছে হিন্দু-নিহিলিস্ট। নিহিলিজম (Nihilism) শব্দটার ঠিক বাংলা প্রতিশব্দ নেই। Dictionary বলছে 'Rejection of all religious and moral principles, often in the belief that life is meaningless -- তীব্র আস্তিকতার সঙ্গে জীবনের অসাড়ত্বের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
হিন্দুত্বের কারনে Tengger দের নামের সাথে ভারতীয় শব্দটি জুড়ে দিলেও এদের যোগ আদতে লাটিন আমেরিকার সঙ্গে। মাজাপাহিত ঝড়ে হিন্দুধর্মের সঙ্গে এদের সংযোগ অতি সংকীর্ণ পরিসরে নিজেদের মধ্যেই যেহেতু এদের বাস তাই পরবর্তীকালে আগত দার্শনিকতার দিক থেকে অনেক কম কম্পাঙ্কের ইসলাম এদের ছুঁতেই পারেনি। নিজস্ব ভূমিখন্ডে নিজস্ব বিশ্বাসের বলয়ে আদিগন্ত ছাইমাটি ও আষাড়ের পবিত্র অগ্নি নিয়ে এরা নিজেদের মধ্যে বেঁচে রয়েছে যার শুরু চোল রাজবংশের সুমাত্রা দখলের মধ্যে দিয়ে।
সদানন্দ ধুমের My Friend the fanatic পড়তে পড়তে জানতে পারি যে সুযাত্রা বা সুলাওয়েশির ইসলামিক ভুলগুলোয় ছেলেরা কেউ গোপনে হাইবেঞ্চের কোনায় নিষিদ্ধ কিছু আঁকে না, ক্লাসরুমের কোনায় যোগচিহ্ন দিয়ে কেউ একান্ত বালিকার নাম লিখে রাখে না বরং মলিন কাগজে নামাজ পড়ার শিষ্ট পদ্ধতি পয়েন্ট বাই-পয়েন্ট
লিখে ব্ল্যাকবোর্ডের ওপর টাঙিয়ে রাখে স্বাভাবিকভাবেই ভয়ে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। আবার ঐ একই বইতে যখন পড়ি কোন এক Radical Islamist তাঁর দুই কন্যার নাম রেখেছেন দ্রৌপদী ও পাঞ্চালি, তখন সেই কবেকার হিন্দু মাজাপাহিত দর্শনের ওপর শ্রদ্ধা হয়, ভালোবাসা জাগে । VS Naipal তাঁর Among the Believers বইতে লিখছেন, " Islam doesn't import faith it imports a long defunct Arab Civilization " তাঁকেই যখন জাকার্তার এক পুতুলনাচের আসরে রামায়নের টানে আটকে যেতে দেখি তখন এক অনাবিল আনন্দ হয় ৷
ঊষর মরুতে একা দাঁড়িয়ে, কিংবা ছাই উড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে অথবা ক্রেটারের আলসেতে ব্যালেন্স রাখতে রাখতে প্রতি মুহূর্তে টের পাওয়া যায় এর মাহাত্ম্য। ফুল নৈবেদ্য -ছাগল-মুরগি হাতে প্ৰনম্য অগ্নির কাছে উঠে এসেছেন যারা কিংবা যারা নিখাদ ভ্রমনার্থী তাঁদের হাতে প্রসাদ হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্মোকড চিকেন কিংবা মাছ - ঠোঁটে সিগারেট হাতে নিয়েই মন্ত্র পড়ছেন পুরোহিত।
ঈশ্বরকে এই যে প্রাত্যহিকতার মধ্যে নামিয়ে আনা, এই যে তাঁর যাবতীয় সাত্ত্বিকতার বর্ম ছিঁড়ে ফেলা মৃত মুরগির পালক ছাঁড়ানোর মত -- একেই তো নিহালিজন বলে। যাঁরা দিগন্তের কাছে ঘোড়া দাপায় আর সারারাত শোনে আগ্নেয়গিরির গভীরের গর্জন, জ্বলন্ত লাভার স্রোতে ভেসে থাকা বেঁচে থাকা যাদের আশৈশব ধর্মাচরন, গত ৯০০ বছর ধরে তারাই অনুপ্রাণিত হয় সনাতন ধর্মের দ্বারা। Tengger দের Nihilism আসলে ছাই মুঠোয় ধরা বোকা দৈত্য --- ঘাস খুঁজে এনে কি উপায়ে ভূমি ঢেকে দিতে হয় তা সে কখনও জানতে চায় না ।